সকালে বিসিবিতে এসেছিলেন ডিসিপ্লিনারি কমিটির ডাকে। সেখানে বোর্ডের ডিসিপ্লিনারি কমিটির মুখোমুখি হবার আগে খানিক দুশ্চিন্তা ছিল। এমনও রটে গিয়েছিল, শারজায় ‘টি টেন’ টুর্নামেন্ট খেলা নাও হতে পারে। বিপিএল চলাকালীন শেরে বাংলার উইকেট নিয়ে সমালোচনা করে হয়ত সাময়িক নিষেধাজ্ঞার মুখেও পড়তে পারেন জাতীয় দলের ওপেনার তামিম ইকবাল।
তবে সে সব কিছুই হয়নি। আপাতত কোন নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায় পড়েননি তামিম। এক ঘণ্টার একটু বেশি সময় বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটির সাথে কথা বলে হাসি মুখেই বেরিয়ে যান মিরপুর বিসিবি অফিস থেকে।
বিসিবি ছাড়ার আগে তার শরীরি অভিব্যক্তি আর কথা-বার্তায় মনে হয়েছে মনের ভিতরে যে খানিক দুশ্চিন্তা বাসা বেঁধেছিল, তা দুর হয়ে গেছে। তাই তো উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে বলে যান, ‘সবাই জানেন যে, উইকেট এবং আউটফিল্ড নিয়ে একটা কমেন্টের ব্যাপারে আমাকে ডাকা হয়েছিল। উনারা (বিসিবি ডিসিপ্লিনারি কমিটি) উনাদের কনসার্ন আমাকে জানিয়েছেন। আমিও স্বীকার করেছি যে, হয়তো আরেকটু ভালো কোন শব্দ ব্যবহার করতে পারতাম। হয়তো খুব ভালোভাবে কথাটা বলতে পারিনি। উনাদেরকে এটাই বলেছি। আর উনারাও ব্যাপারটাকে বেশ ভালোভাবেই নিয়েছেন। আমি বাংলাদেশের হয়ে খেলি। বিসিবি আমার অভিভাবকের মতো। এই মাঠ, উইকেট বা আউটফিল্ড সবই আমাদের নিজেদের সম্পদ। তাই আমার মনে হয় যে আমি অন্য কোন শব্দ ব্যবহার করতে পারতাম। ভবিষ্যতে আমি এটা নিয়ে সতর্ক থাকবো।’
এটুকু বলার পাশাপাশি তামিম আরও কিছু কথা বলেন। জানিয়ে যান, ‘আমি আজ (বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার ফ্লাইটে দুবাই যাচ্ছি। আমার এনওসি নিয়ে তারা (ডিসিপ্লিনারি কমিটির লোকজন) কোন কথা বলেননি। আমাকে টুর্নামেন্টের জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন। ২৭ তারিখ থেকে সম্ভবত জাতীয় দলের অনুশীলন শুরু হচ্ছে। ইনশাল্লাহ সেদিন থেকে আমি অনুশীলনে যোগ দিতে পারবো।’
এতেই পরিষ্কার হয়েছে আপাততঃ কোন শাস্তির খাঁড়ায় ঝুলতে হচ্ছে না তামিমকে। এদিকে আজ সন্ধ্যা ছয়টার ফ্লাইটে দেশের এক নম্বর ওপেনার আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। ঘণ্টা চারেকের মধ্যে তিনি পৌছেও যাবেন। ওই আসরে পাক টন্স দলের হয়ে খেলবেন তামিম।
তামিম খুশি মনে চলে গেছেন টি-টেন খেলতে। এও জানিয়ে গেছেন, টি-টেন টুর্নামেন্ট খেলে ২৭ ডিসেম্বর থেকে জাতীয় দলের যে ক্যাম্প শুরু হবে, তাতে অংশ নেবেন।
তবে কি বিসিবি ডিসিপ্লিনারি কমিটি তামিম ইকবালের কথা বার্তা, তার আচরণ ও ব্যাখ্যায় পুরোপুরি সন্তুষ্ট? তার কোন শাস্তিই হবে না? ডিসিপ্লিনারি কমিটির চোখে কি তাহলে তামিম নির্দোষ?
ওপরের অংশ পড়ে এমন মনে হতেই পারে; কিন্তু ব্যাপারটা আসলে তা নয়। ভিতরের খবর ভিন্ন। ভিতরের খবর হলো, তামিমকে শাস্তির মুখে পড়তেই হবে। অর্থ দÐের পাশাপাশি তার ওপর ম্যাচ সাসপেন্সনের খাঁড়াও নেমে আসতে পারে।
তামিম যদিও স্বীকার করেছেন, তিনি কথাটা আরও অন্যভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। তাতে পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয় ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন কমিটি। বিসিবির তিন শীর্ষ কর্মকর্তা মাহবুব আনাম, জালাল ইউনুস আর শেখ সোহেলের গড়া ওই কমিটি তামিমের সাথে কথা বলে বিসিবি সভাপতির কাছে একটা সুপারিশ পেশ করবেন।
সে সুপারিশেই নাকি অর্থ দÐের পাশাপাশি ম্যাচ সাসপেন্সনের কথাও উল্লেখ থাকবে। এক অতি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ‘তামিমের দু’ধরনের শাস্তির সম্ভাবনা খুব বেশি। প্রথমতঃ তার অর্থ দÐ হতে পারে। পাশাপাশি তাকে আগামী বছর বিপিএলের অন্তত দুই ম্যাচ সাসপেন্ড করা হতে পারে। সে সংখ্যা বেড়ে তিনে দাঁড়ালেও অবাক হবার কিছু থাকবে না।’
এ বিষয়ে বোর্ড পরিচালক ও ডিসিপ্লিনারি কমিটির দুই অন্যতশ শীর্ষ সদস্য মাহবুব আনাম ও জালাল ইউনুস আনুষ্ঠানিকভাবে কোনরকম মন্তব্য করতে রাজি হননি। দু’জনই জানান, ‘বিষয়টি একটু স্পর্শকাতর। এটা নিয়ে কোন আনুষ্ঠানিক মন্তব্য না করাই ভাল। ডিসিপ্লিনারি কমিটি তামিমের সাথে কথা বলেছে। তার ব্যাখ্যা শুনেছে। এখন সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’
মাহবুব আনাম সরাসরি কোন মন্তব্য করতে না চাইলেও আকার-ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, ‘বিপিএল চলাকালীন হোম অব ক্রিকেটের পিচ-আউটফিল্ডের সমালোচনা করে তামিম যে মন্তব্য করেছেন, তা বোর্ডের সঙ্গে তার চুক্তির বরখেলাপের আওতায় পড়ে।’
তার মানে তামিমের মন্তব্যটা শৃঙ্খলা ভঙ্গের সামিল। এসব ক্ষেত্রে বোর্ডের নীতিমালা আছে। সেটারও স্তর আছে। সর্বনি¤œ অপরাধে শুধুই সতর্ক করে দেয়া হয়। তারচেয়ে বড় হলে অর্থদÐ। আর বেশি তথা শৃঙ্খলা ভঙ্গের মত ঘটনা ঘটলে ম্যাচ সাসপেন্ড করার নিয়মও আছে। এটুকু বলে থামেন মাহবুব আনাম।
তার কথায় একটা বড় ধরনের ইঙ্গিত আছে। অবস্থাদৃষ্টে পরিষ্কার মনে হচ্ছে আগামী বছর বিপিএলে প্রথম দুই তিন ম্যাচ সাসপেন্ড করা হতে পারে তামিম ইকবালকে।