পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২২তম বছর পূর্তি হচ্ছে আগামীকাল সোমবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদকালে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকার এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) মধ্যে এই চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটে।
চুক্তিতে সরকারের পক্ষে সই করেন সে সময়ের জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ এবং জনসংহতি সমিতির পক্ষে সই করেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লার্মা ওরফে সন্তু লার্মা।
দিবসটি উপলক্ষে প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং এর নেতৃত্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সকাল ৮টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে বিশেষ বাণী দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে পার্বত্য জেলাসমূহের সম্ভাবনার সদ্ব্যবহার এবং মাতৃভূমির উন্নয়নে এক সঙ্গে কাজ করতে দলমত নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, আমি মনে করি এই চুক্তি পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। শান্তি চুক্তির দুই দশকে পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণের জন্য পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করেন এবং সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
বাণীতে তিনি পাবর্ত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পাবর্ত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং জনসংহতি সমিতির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরের উল্লেখ করে বলেন, এটি দীর্ঘদিনের সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি বলেন, শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে পাবর্ত্য চট্রগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয় এবং পাবর্ত্য চট্রগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ গঠিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুরূপ এক বাণীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করেন। দিবসটি উপলক্ষে তিনি পাবর্ত্য চট্টগ্রাম জেলা ও সারাদেশের জনগণকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই ঐতিহাসিক এই পাবর্ত্য শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা খুবই বিরল। এই চুক্তি পাবর্ত্য অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসান ঘটিয়েছে। সেখানে শান্তি ও উন্নয়নের ধারা প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি বলেন, ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির প্রতি একটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫’পরবর্তী সরকারগুলো সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার পরিবর্তে তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় বাঙালি ও পাহাড়ি জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করেছিল। তিনি বলেন, হত্যা নির্যাতন ও অবিচার, ভূমি ও সম্পদ গ্রাস এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপব্যবহার এ অঞ্চলের পরিস্থিতির অস্থিতিশীল করে তুলেছিল।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার এই ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির বিরোধিতা করে এবং পাবর্ত্য অঞ্চলে পুনরায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। কিন্তু তাদের সে অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পাবর্ত্য অঞ্চলসহ সারা দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, তার সরকার এ অঞ্চলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো এবং মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকল সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভূমি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধও নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে এ অঞ্চলটি এখন আর পিছিয়ে নেই।
এ উপলক্ষে বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয়ের সামনে আলোচনা সভা এবং দোয়া মোনাজাতের আয়োজন করা হয়েছে বলে আওয়ামীলীগের একটি সূত্রে জানিয়েছে।