আগামিকাল ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)

:
: ৫ years ago

আগামিকাল রোববার ১২ রবিউল আউয়াল, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)। মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এই দিনে আরবের মরু প্রান্তরের ছো্ট্ট এক ঘরে মা আমিনার কোল আলোকিত করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আবার এই একই দিনে তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। তার জন্ম ও ওফাত দিবস ১২ রবিউল আউয়াল মুসলমানদের কাছে পবিত্র একটি দিন। মুসলমানরা দিনটিকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী বা সীরাতুন্নবী (সা.) হিসেবে পালন করেন। বছর ঘুরে আবার এলো সেই পবিত্র দিন। সারা দুনিয়ার মুসলমানরা দিনটি পালনে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

সারা আরব জাহান যখন পৌত্তলিকতার অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল, তখন মহান আল্লাহ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে বিশ্বজগতের রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন। তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেন। এরপর বিশ্ববাসীকে মুক্তি ও শান্তির পথে আহবান জানান। সব ধরনের কুসংস্কার, গোঁড়ামি, অন্যায়, অবিচার ও দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে মানব জাতির চিরমুক্তির বার্তা বহন করে এনেছিলেন বিশ্ব নবী। এরপর মহানবী (সা.) দীর্ঘ ২৩ বছর এ বার্তা প্রচার করে ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন।

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে যথাযথ মর্যাদায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হযরত মুহাম্মদ (সা.)। তিনি সমগ্র সৃষ্টির জন্যই আল্লাহর রহমত। এ বিশ্বে তাঁর মত অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব, অনুপম চরিত্র, মধুর স্বভাবের মানুষ আর কেউই আসেননি। প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়েই তাঁর জন্য সঞ্চিত রয়েছে গভীর ভক্তি ও ভালোবাসা। আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় নবী ও রাসূল (সা.)-এর নামের সঙ্গে যে সুবাস মেখে দিয়েছেন তা কাল-কালান্তরের সীমা পেরিয়ে আজো অফুরান ঘ্রাণ ছড়িয়ে চলেছে মানুষের হৃদয়ে।

বিশ্বে এ পর্যন্ত যে সব মহান ব্যক্তি এসেছেন, অমুসলিম গবেষক-পন্ডিতগণও শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)কে তাদের সারিতে স্থাপন করেছেন। এ প্রসঙ্গে ‘দি হান্ড্রেডস’ গ্রন্থটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। তাতে পৃথিবীর যুগনায়ক, অবিস্মরণীয় প্রতিভাবানদের সঙ্গে তাঁকে স্থান দেয়া হয়েছে। কোনো সন্দেহ নেই যাঁদের কথা বলা হয়েছে তাঁরা সবাই মানবকুলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বা বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মনীষী ও জ্ঞানী। কিন্তু এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, রাসূল (সা.) তাঁদের যে কারো চেয়ে অনেক বেশি উজ্জ্বল ও উচ্চ মর্যাদার অধিকারী। ব্যক্তিত্ব, সহিষ্ণুতা, ধৈর্য, মানবতা, দয়া, উদারতা, বিচক্ষণতা, সৌজন্য, মহত্ত্ব প্রভৃতি মানবিক যত গুণ আছে তার প্রতিটির সর্বোচ্চ, সৌন্দর্যময়, অনুপম প্রকাশ তাঁর মধ্যে পরিলক্ষিত হয় যাঁর সঙ্গে কারোরই আসলে তুলনা হয় না। ফরাসি লেখক আলফন্স দ্য লামার্টিন বলেছেন, “দার্শনিক, বক্তা, ধর্মপ্রচারক, যোদ্ধা, আইন রচয়িতা, ভাবের বিজয়কর্তা, ধর্মমতের ও প্রতিমাবিহীন কর্মপদ্ধতির সংস্থাপক, কুড়িটি পার্থিব রাজ্যের ও একটি ধর্মরাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা সেই মুহাম্মদ (সা.) কে মানুষের মহত্ত্বের যতগুলো মাপকাঠি আছে তা দিয়ে মাপলে কোন লোক তাঁর চেয়ে মহত্তর হতে পারে?

তার জীবনে তিনি কোনো মিথ্যা কথা বলেননি, অন্যের ক্ষতি বা অসুবিধা করারা জন্য কোনো কৌশল বা চাতুর্যের আশ্রয় নেননি। তিনি সেই অতুলনীয় মানুষ যার বিরুদ্ধে কখনো কোনো মানুষ দুর্ব্যবহার, ওয়াদা খেলাফ, মিথ্যাচার, অহমিকা, স্বার্থপরতা, হিংসা-বিদ্বেষের কোনো অভিযোগ উত্থাপন করেনি। তিনি জীবনভর অন্যের উপকার, মঙ্গল, কল্যাণই করেছেন। সকল ভাবে মানুষকে সাহায্য করেছেন, কোনোভাবেই কারো মনস্তাপের কারণ হননি। মানব ইতিহাসে এত সব গুণের সু-সমন্বয়পূর্ণ পূর্ণাঙ্গ মানুষ কার্যত একজনই। তিনি হজরত মুহাম্মদ (সা.)।

মানুষ চিত্তের অস্থিরতায়, মানসিক যন্ত্রণায় দিশাহারা হয়ে যখন আশ্রয় সন্ধান করে বা সান্ত্বনা চায় তখন এমন কাউকে খোঁজে যার কাছে, যার কথায়, যার ব্যবহারে শান্তি পাওয়া যায়।