মেহেদী হাসানঃ রবিনসন ক্রুসো নামটির সাথে অামরা সবাই’ই কমবেশী পরিচিত। একটি উপন্যাসের মাধ্যে একজন সমুদ্রপ্রেমী নাবিকের রোমাঞ্চকর অ্যাডভেঞ্চার এর কাহিনীতে পাঠকদের বিমোহিত করা লেখক হলেন ড্যানিয়েল ডিফো।
আজ থেকে প্রায় ৩৫৮ বছর অাগে জন্ম নেয়া কিংবদন্তি এই মানুষটি শুধু লেখার জাদুতেই পারদর্শী ছিলেন না। ড্যানিয়েল ডিফো ছিলেন একাধারে ইংরেজি উপন্যাসিক, লেখক এবং সাংবাদিক। তিনি কসাই জেমস ফোয়ের ঘরে অানুমানিক ১৬৬০ সালে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। তবে তার জন্ম সম্পর্কে সঠিকভাবে কোন তথ্য জানা যায় না।
জন্মসুত্রে তার নাম ছিলো ড্যানিয়েল ফো তবে ড্যানিয়েল পরে তার নামকে আরো জাঁকজমকপূর্ণ করতে পরিবর্তন করে ড্যানিয়েল ডিফো রাখেন। দারিদ্রতার মধ্যে বড় হয়ে ওঠা ডিফো শিক্ষাজীবনে শিক্ষক চার্লস মর্টন পরিচালিত নিউিংটন গ্রীনে একটি একাডেমী থেকে স্নাতক ডিগ্রি বেশ অর্জন করেন। পরবর্তীতে কর্মজীবনে ডিফো একজন বণিক হয়ে ওঠেন,এবং১৬৮৩ সালে, ডিফো ব্যবসাতে মনোনিবেশ করেন,এবং বিভিন্ন দেশে খু্বই কম ঋণের পন্য পণ্য মদ এবং উল বিক্রি করেন।
১৬৯২ সালে ডিফো ব্যবসাতে লোকসান গুনে দেউলিয়া হয়ে যান এবং তার পরে প্রায় এক দশক ধরে তার ঋণ পরিশোধ করেন এবং ১৭০৩ সালের মধ্যে তিনি ব্যবসায়িক শিল্পকে সম্পূর্ণভাবে ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
ডিফো রাজনীতিতে বেশ আগ্রহী ছিলেন, ডিফো ১৬৮৩ সালে তিনি রাজনীতি বিষয়ক তাঁর প্রথম সাহিত্যিক খন্ড পুস্তিকা প্রকাশ করেন।
তিনি রাজনৈতিক লেখনী লিখতে থাকেন পাশাপাশি ১৭০০ দশকের শুরুর দিকে তিনি একজন সাংবাদিক হিসেবে অাত্নপ্রকাশ করেন।
এই সময়কালে ডিফো’র অনেক কাজ তৃতীয় কিং উইলিয়াম বা উইলিয়াম হেনরি অফ অরেঞ্জের সমর্থন লাভ করেছিল, তাঁর বেশিরভাগ জনপ্রিয় রচনাই হল প্রকৃত ইংরেজদের জন্য,যা মূলত ইংল্যান্ডে জাতিগত হামলা ও কুসংস্কার এর উপর অালোকপাত করে।
১৭১৩ সালে ডিফো এর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাঁর লেখার জন্য বার বার তাঁকে কারাগারে পাঠায়। ১৭১৯ সালে ৫৯ বছর বয়সে ডিফো, রবিনসন ক্রুসো নামের সর্বকালের সর্বাধিক পঠিত এবং প্রভাবশালী উপন্যাসগুলির একটি রচনা করে সাহিত্য জগতের নতুন এক ধারায় প্রবেশ করেন।
রবিনসন ক্রুসো মূলত কয়েকটি রোমাঞ্চপূর্ণ গল্পের উপর ভিত্তি করে রচিত একটি উপন্যাস যা তিনি বছরের পর বছর ধরে রচনা করেছিলেন। বেশ কয়েকটি উপন্যাস অবলম্বন করে তিনি লিখেন মোল মোল ফ্লান্ডের্স,কর্ণেল জ্যাক,ক্যাপ্টেন সিঙ্গলসন,জার্নাল অফ দ্যা প্লেগ ইয়ার এবং তার সর্বশেষ প্রধান উপন্যাস রোক্সানা (১৭২৪)। ১৭২৭ সালের মাঝামাঝি, ডিফো সম্পাদকীয়তে ফিরে আসেন, এবং ইংল্যান্ডে নৈতিকতা, রাজনীতি এবং সামাজিক ক্রম বিভাজকের মতো বিষয়গুলির উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেন। তার পরের রচনাগুলি হল এভরিবডিস বিজনেস ইজ নো-বডিস বিজনেস (১৭২৫),তথ্যভিত্তিক প্রবন্ধ “কনজুয়াল লেউডনেস: অথবা ম্যাট্রিমনিয়াল হুর্ডাম” (১৭২৭); এবং “কনজুয়াল লেউডনেস” প্রবন্ধের একটি ফলোআপ লেখনী “এ ট্রিটেস কনসারনিং দ্যা ইউজ অ্যান্ড অ্যাবিউজ অফ দা ম্যারেজ বেড” নামে একটি নিবন্ধ। ডিফো ১৭৩১ সালের ২৪ এপ্রিল মৃত্যুবরন করেন। ড্যানিয়েল ডিফো’র ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়- মূলত তথ্যসুত্রের অভাবের কারণে-ডিফোকে একজন উদার সাংবাদিক ও লেখক হিসেবে মনে করা হয়।
তার শত শত রচয়িত সাহিত্য, রাজনৈতিক লেখনী,সাংবাদিকতার লেখনী ও কল্পরচনা বহুল প্রসংসিত হয়েছে। তার লেখনী এখনো রোমাঞ্চ জাগায় পাঠকদের মনে।
-মেহেদী হাসান
তথ্যসুত্র:
১.https://www.biography.com/people/daniel-defoe-9269678
২.https://www.britannica.com/biography/Daniel-Defoe