অস্ত্রের বাজারে রাশিয়ার ঝনঝনানি

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

অস্ত্রের বাজারে ধীরে ধীরে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করছে রাশিয়া। অস্ত্র বিক্রির দিক থেকে ২০১৭ সালে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দেশটি। বরাবরের মতো প্রথম অবস্থানে যুক্তরাষ্ট্র। আর রাশিয়ার পরপরই যুক্তরাজ্যের অবস্থান। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) নতুন এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৭ সালে সারা বিশ্বে যে পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি হয়েছে, এর প্রায় ১০ শতাংশ করেছে রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। অস্ত্র বিক্রির শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান ১০টি। দেশটি ৩ হাজার ৭৭০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে রাশিয়ার অস্ত্র বিক্রি ২ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। তবে অস্ত্র বিক্রির একক বাজার এখনো যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণেই আছে। মোট অস্ত্র বিক্রির ৫৭ শতাংশ করেছে মার্কিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। ৯ শতাংশ অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাজ্য। তবে এই প্রতিবেদনে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো তথ্য নেই।

এসআইপিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক সিমন উইজেমেন এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২০১১ সাল থেকে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্ত্র বিক্রি বাড়ছে। এর মাধ্যমে স্পষ্ট, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী আধুনিকায়নে যথেষ্ট তৎপর। রাশিয়ার বাজারে নিজেদের অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোনো প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয় না; বরং প্রতিষ্ঠানগুলো রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে পূর্ণ সহায়তা পেয়ে থাকে। কারণ, পুতিন তাঁর দেশের সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছেন। সামরিক শক্তি প্রদর্শনে পুতিন বরাবরই আগ্রহী।

এই প্রতিবেদনে আরেকটি বিষয় ওঠে এসেছে। সেটি হলো অস্ত্র বিক্রির বাজারে তুরস্কের উত্থান। ২০১৭ সালে তুরস্কের প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে। এ বিষয়ে এসআইপিআরআইয়ের জ্যেষ্ঠ গবেষক পিটার উইজেমেন বলেন, তুরস্কের অস্ত্র বিক্রির উত্থান ইঙ্গিত দেয় দেশটির সামরিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার। তুরস্কের অস্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সামরিক বাহিনীর অস্ত্রের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি বাইরেও রপ্তানি করছে। এর মাধ্যমে তারা অস্ত্র আমদানির বিষয়ে বাইরের দেশগুলোর প্রতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে ফেলছে।

অস্ত্র বিক্রেতা শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান ৪২টি। আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে তাদের অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ২ শতাংশ বেড়ে ২২ হাজার ৬৬০ কোটি ডলার হয়েছে। এ বিষয়ে এক সংবাদ বিবৃতিতে এসআইপিআরআইয়ের অস্ত্র স্থানান্তর ও সামরিক ব্যয় কর্মসূচির পরিচালক অদে ফ্লিওরেন্ত বলেন, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অস্ত্রের যে চাহিদা, তার মাধ্যমে সরাসরি লাভবান হয় মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। নিজেদের দেশে অস্ত্রের জোগান দেওয়ার পাশাপাশি বাইরের বিশ্বেও কর্তৃত্ব বজায় রেখেছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অস্ত্র উৎপাদনকে কর্মসংস্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে দেখেন। শুধু এই দিক বিবেচনায় নিয়ে তুরস্কের কনস্যুলেটের ভেতর সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের জড়িত থাকার নানা তথ্য পাওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি। কারণ, সৌদি যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়ে বিপুল অঙ্কের অস্ত্র ক্রয়ের চুক্তি করেন। খাসোগি হত্যার ঘটনায় যুবরাজের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিলে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ হয়ে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিবেচনায় তিনি সব দেখেও না দেখার ভান করছেন। শুরু থেকেই ট্রাম্প বলে আসছেন, তিনি কর্মসংস্থানের ওপর হাত দিতে চান না। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিজের দল ও বিরোধী দলের রাজনীতিকেরা। তবে ট্রাম্প তাঁর অবস্থানে অনড়। অস্ত্রের বাজারে হাত দিয়ে তিনি পক্ষান্তরে ভোটারদের ক্ষুব্ধ করার ঝুঁকি নিতে চান না।

হোয়াইট হাউসে এই মুহূর্তে প্রতিরক্ষা বাজেট নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রতিরক্ষা ব্যয় কমানোর পক্ষে। প্রতিরক্ষা বিভাগের ৭ হাজার ১৬০ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা বাজেটকে তিনি ‘বাড়াবাড়ি’ বলে মন্তব্য করলেও পরে প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের চাপাচাপিতে ৭ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের বাজেট অনুমোদন করেন। হোয়াইট হাউসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।