যশোরের চৌগাছায় অসুস্থ অবস্থায় গোয়াল ঘরে ফেলে রাখা এক মাকে (৬৫) উদ্ধার করে ছেলের বাড়িতে তুলে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলার পাশাপোল ইউনিয়নের বুড়িন্দিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের গোয়াল ঘর থেকে ওই বৃদ্ধাকে উদ্ধার করা হয়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন ইউএনও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অসুস্থ ওই মা গোয়াল ঘরের ময়লার মধ্যে মেঝেতে একটি কাঁথার ওপর শুয়ে কাতরাচ্ছেন। গোয়াল ঘরে তীব্র গরমের মধ্যেও নেই কোনো বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা। অথচ পাশেই পাকা একটি রান্নাঘরে বৈদ্যুতিক পাখার নিচে বসে বৃদ্ধার পুত্রবধূ রান্না করছেন। তার পাশেই চার রুমের আলিশান একটি বাড়ি। যার প্রতিটি রুমের মেঝে, এমনকি ছাদে ওঠার সিঁড়ি পর্যন্ত টাইলস করা। কক্ষগুলো টিভি, ফ্রিজসহ আসবাবপত্র দিয়ে পরিপাটি করে সাজানো।
ইউএনও বৃদ্ধার পুত্রবধূর কাছে জানতে চান, তাকে কেন ময়লার মধ্যে গোয়াল ঘরে রাখা হয়েছে। উত্তরে প্রথমে পুত্রবধূ বলেন, ‘উনি কাপড়-চোপড়ে মূত্রত্যাগ করেন বলে লোকজন বলেছে গোয়াল ঘরে রাখতে।’ আবার বলেন, ‘বৃদ্ধা নিজেই এখানে থাকতে চেয়েছেন।’
এক পর্যায়ে গ্রামের নারী-পুরুষরা ঘটনাস্থলে আসেন। তারা বলেন, বৃদ্ধার ঝগড়াটে পুত্রবধূর ভয়ে তারা কোনো প্রতিবাদ করতে পারেননি। তারা জানান, তিনদিন আগে মেয়ের জামাই বৃদ্ধাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যাওয়ার পর থেকেই তাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন তারা।
বৃদ্ধা ইউএনওকে জানান, প্রায় তিন-চার বছর ধরে তিনি তার চার মেয়ের বাড়িতে থাকেন। কিছুদিন আগে বরিশালে ছোট মেয়ের বাড়িতে ছিলেন। সেখান থেকে কয়েকদিন আগে আসেন চৌগাছার স্বরুপদাহ ইউনিয়নের তিলকপুর গ্রামে আরেক মেয়ের বাড়িতে। সেখানে তিনি পড়ে গিয়ে মারাত্মক আহত হন। জামাই খুব দরিদ্র হওয়ায় তাকে চিকিৎসা করাতে পারেননি। সেখান থেকে মেয়ের জামাই তিনদিন আগে তাকে ছেলের বাড়িতে রেখে যান। সেদিন থেকেই ছেলে ও তার পুত্রবধূ বৃদ্ধাকে গোয়াল ঘরে ফেলে রেখেছেন। সেখানে যন্ত্রণায় তিনি ছটফট করছেন। তার দুচোখ জ্বলে যাচ্ছে। রাতে বা দিনে কোনো সময় তাকে একটি ফ্যানও দেওয়া হয়নি।
পরে ইউএনও ইরুফা সুলতানা স্থানীয় কয়েকজন নারীকে সঙ্গে নিয়ে ওই বৃদ্ধাকে ছেলের বাড়িতে তুলে দেন। এসময় ছেলে ঘটনাস্থলে না থাকায় পুত্রবধূর কাছ থেকে মুচলেকা নেওয়া হয়। বৃদ্ধা আমৃত্যু ছেলের বাড়িতে থাকবেন। কাপড়-চোপড় নষ্ট করলে ছেলে ও পুত্রবধূ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দেবেন এবং বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাবেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। একমাত্র ছেলে। তিনিও নিজের মাকে গোয়াল ঘরে গরুর মল-মূত্রের মধ্যে ফেলে রেখেছেন। ওই মাকে ছেলের ঘরে তুলে দেওয়া হয়েছে এবং চিকিৎসক দেখানোর জন্য বলা হয়েছে। এর অন্যথা করার অভিযোগ পাওয়া গেলে ওই ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’