দুই জন সহকারী উপ-পরিদর্শকসহ তিন পুলিশ ছেলে এবং এক শিক্ষিকার অসুস্থ বৃদ্ধ মা মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতাল এবং সমাজ সেবা অধিদপ্তর। বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শেখ টিপু সুলতানের নির্দেশে গতকাল সোমবার থেকে বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার যাবতীয় দায়ভার নেয় সরকারি দুই কর্তৃপক্ষ।
ওইদিন বিকেলে তাকে তার বাবুগঞ্জের খুপড়ি ঘর থেকে উদ্ধার করে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তি করান এমপি টিপু সুলতান।
আজ মঙ্গলবারও শের-ই বাংলা হাসপাতালের চতুর্থ তলার অর্থপেডিক্স বিভাগের ১৩ নম্বর শয্যায় চিকিৎসাধীন কংকালসার বৃদ্ধা মায়ের খোঁজ-খবন নেন ওয়ার্কার্স পার্টির এমপি টিপু সুলতান। এসময় তিনি তার সু-চিকিৎসাসহ যাবতীয় বিষয় দেখভাল করার প্রতিশ্রুতি দেন।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম সিরাজুল ইসলাম জানান, আশি বছর ঊর্ধ্ব মনোয়ারা বেগম বয়স জনিত নানা রোগে আক্রান্ত। অনাহারের কারণে তিনি চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগছেন। তার একটি পা ভাঙ্গা। এমপি সাহেবের নির্দেশে তার খাওয়া, চিকিৎসা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ওষুধসহ যাবতীয় বিষয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দেখভাল করছে। স্থানীয় এমপি টিপু সুলতানও তার জন্য বিভিন্ন উপকরণ কিনে দিয়েছেন। সমাজ সেবা অধিদপ্তরও তার সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।
ফেসবুকে ছবিসহ একটি পোস্ট দেখে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে ঢাকায় অবস্থানরত এক যুবলীগ নেত্রীর অনুরোধে স্থানীয় এমপি টিপু সুলতান অসহায় বৃদ্ধার মনোয়ারা বেগমের খোঁজ খবর নেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়ে ওই বৃদ্ধা মায়ের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হন। পরে তিনি সরেজমিন বাবুগঞ্জ স্টিল ব্রিজের পশ্চিম পাশে একটি খুপড়ি ঘরে অনাহারে-বিনাচিকিৎসায় দিনাতিপাত করা হতভাগী মনোয়ারা বেগমের দেখতে যান। সোমবার এমপি তার নিজ দায়িত্বে নিজে উপস্থিত থেকে বৃদ্ধা মনোয়ারাকে তার বাড়ি থেকে শের-ই বাংলা মেডিকেলে ভর্তির ব্যবস্থা করেন।
বাবুগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিক জহিরুল অরুন জানান, মনোয়ারা বেগম বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের মৃত আইয়ুব আলী সরদারের স্ত্রী। ২০১৪ সালের পহেলা অক্টোবর আইয়ুব আলী মারা যায়। তার ৬ সন্তানের মধ্যে এএসআই ফারুক হোসেন, এএসআই নেছার উদ্দিন, পুলিশ কনস্টেবল জসিম উদ্দিন, একমাত্র মেয়ে মরিয়ম সুলতানা একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। অন্য ২ সন্তানের মধ্যে শাহাবউদ্দিন ব্যবসা এবং ছোট ছেলে গিয়াস উদ্দিন নিজের মোটরসাইকেল ভাড়ায় চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানরা তেমন খোঁজ খবর না নেয়ায় তিনি ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন। শিক্ষিকা মেয়ে মরিয়মও তার সাধ্যমতো মাকে সাহায্য করে।
বাবার কাছ থেকে ৩ পুলিশ ছেলে বাড়ির সকল জমি লিখিয়ে নেয়ায় স্বামীর মৃত্যুর পর মনোয়ারা তার ছোট ছেলেকে নিয়ে বাবুগঞ্জ স্টিল ব্রিজ এলাকায় নিজেদের এক টুকরো জমিতে খুপড়ি ঘরে বসবাস করছিলেন। সেখানে ছোট ছেলের আয়ে এবং নিজের ভিক্ষাবৃত্তিতে আয় হওয়া অর্থ দিয়েই তাদের কোনমতে চলছিল। ৪-৫ মাস আগে পড়ে গিয়ে কোমড়ে ব্যাথা পান বৃদ্ধা মা মনোয়ারা। কিন্তু বৃদ্ধা মা মনোয়ারার নানা রোগের চিকিৎসা করানোর সামর্থ ছিল না ছোট ছেলে গিয়াসের। এ কারণে অনেকটা বিনা চিকিৎসায় খুপড়ি ঘরে কাটছিল তার মানবেতর জীবন।
এ খবর স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন মহলের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে স্থানীয় এমপি তার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন। আজ দুপুরে শের-ই বাংলা মেডিকেলে গিয়ে অসুস্থ মায়ের চিকিৎসায় নগদ ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেন জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা মো. আজাদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
এমপি টিপু সুলান জানান, তিনি প্রথমে বৃদ্ধা মায়ের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। একই সাথে তিনি ৩ পুলিশ সদস্য ছেলে যারা মায়ের খোঁজ খবর নেয় না, বা যারা জমি-সম্পদ থেকে তার মাকে বঞ্চিত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান এমপি টিপু।
এদিকে বৃদ্ধা মনোয়ারার বড় ছেলে এএসআই ফারুক জানান, তার ছোট ভাই গিয়াস পরিবারের সব সম্পদ একা আত্মসাৎ করার জন্য তার মাকে নিয়ে আলাদা থাকছে। তিনি সহ তার অন্যান্য ভাইয়েরা তার মাকে নিতে চাইলেও ছোট ভাই বাধ সাধছে। ভিক্ষা করা তার মায়ের অভ্যাস বলে কটাক্ষ করেন তিনি।
অসহায় মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে পু্লিশ সুপার তার এই অবহেলারর দরুন স্বাবলম্বী সন্তানদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করার প্রতিশ্রুতি দেন। সাথে ছিলেন অতিরিক্ত পু্লিশ সুপার ডিএসবি মোল্লা আজাদ হোসেন