ওই সময় তিনি ফরিদপুর ডায়াবেটিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জেসি সাহার কাছে যান। কাদের মোল্যাকে অপারেশনের পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পাশাপাশি অপারেশনের জন্য রক্ত জোগাড় করতে বলা হয়। কাদের মোল্যার রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ। অনেকের দারস্থ হয়েও রক্ত জোগাড় করতে পারেননি তিনি।
ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে তিনি ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে যান। সেখানে গিয়ে এসআই আনোয়ার হোসাইনের সঙ্গে দেখা হয় তার। এ সময় তাদের কথা হয়। পরে কাদের মোল্যাকে রক্ত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এসআই। তাৎক্ষণিকভাবে এসআই আনোয়ার পুলিশ লাইন্সে কর্মরত সহকর্মীদের সঙ্গে রক্ত দেয়ার ব্যাপারে কথা বলেন এবং রক্তদাতাও পেয়ে যান।
এর দুদিন পরই ডায়াবেটিক হাসপাতালে কাদের মোল্যার অপারেশনের দিন নির্ধারণ করা হয়। কাদের মোল্যা অপারেশন শুরুর আগে এসআই আনোয়ার হোসাইনকে ফোন দেন। ফোন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আসেন এসআই আনোয়ার ও তার রক্তদাতা সহকর্মী। অপারেশন ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। তবে কাদের মোল্যার অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন হয়নি।
এসআই আনোয়ার হোসাইনকে ধন্যবাদ জানাতে কাদের মোল্যা সুস্থ হয়ে বুধবার (০৬ নভেম্বর) ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে ছেলেকে নিয়ে হাজির হন। সঙ্গে নিয়ে আসেন নিজের বাগানের পেঁপে, গাভির দুধ ও দেশীয় মোরগ। বিষয়টি দেখে অবাক হন পুলিশ সদস্যরা।
কাদের মোল্যা বলেন, আমার অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন ছিল। আমার রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ। কোনোভাবেই রক্ত জোগাড় করতে পারছিলাম না। এসআই আনোয়ার আমার জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছিলেন। যদিও পরে অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন হয়নি।
তিনি বলেন, পুলিশ শুধু আইনি সমস্যারই সমাধান দেয় না বরং চাইলে সবকিছুরই সমাধান দিতে পারে। আমার রক্ত লাগেনি। কিন্তু এসআই আমার জন্য রক্তের জোগাড় করে দিয়েছেন। তিনি হাসপাতালে ছুটে গেছেন। সবাই যখন আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তখন এসআই আনোয়ার আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই আমার বাড়িতে লাগানো গাছের পেঁপে, গাভির দুধ ও মোরগ নিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে যাই। মূলত ধন্যবাদ জানাতে গেছি। চিরদিন মনে থাকবে তার কথা।
এসআই আনোয়ার হোসাইন বলেন, মাস দেড়েক আগে দুপুর বেলা অফিসে ঢুকে দেখি আমার সামনের চেয়ারে বসে আছেন কাদের মোল্যা। আমি সালাম দিয়ে তার পরিচয় জানতে চাই। তখন তিনি করুণভাবে বলেন আমার অপারেশন করা লাগবে। তার জন্য প্রয়োজন বি নেগেটিভ রক্ত। অনেকের কাছে গেছি কিন্তু রক্ত পাইনি। রক্ত জোগাড় করতে না পারায় অপারেশন করতে রাজি হচ্ছেন না চিকিৎসক।
তিনি বলেন, আমার কাছে কিভাবে আসলেন জানতে চাইলে তিনি বললেন কেউ একজন আমাকে পুলিশ লাইন্সে আসার কথা বলেছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন এখানে রক্তের ব্যবস্থা হবে। কি আর করা তার বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাতে অফিসের কলিগকে বলে রক্তের ব্যবস্থা করলাম। তখন তাকে বললাম আপনি চলে যান কবে রক্ত লাগবে শুধু জনাবেন। কথা মতো তার দুদিন পর মোবাইলে জানালেন অপারেশনের তারিখ। আমি আমার কলিগসহ উপস্থিত হলাম হাসপাতালে। তবে তার শরীরে রক্ত দেয়া লাগেনি।
আনোয়ার হোসাইন বলেন, রক্ত লাগেনি তবুও কৃতজ্ঞতা জানাতে হাজির তিনি। কিছুটা অবাক হলাম। তার নিয়ে আসা ভালোবাসার পেঁপে, দুধ, মোরগ ফিরিয়ে দিলে কষ্ট পাবেন ভেবে সাদরে গ্রহণ করলাম। দোয়া করি আল্লাহ তাকে সুস্থতা দান করুন।
ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলীমুজ্জামান বলেন, পুলিশ শুধু আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থেই কাজ করে না, পুলিশ মানবিক কাজেও অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যার দৃষ্টান্ত এসআই আনোয়ার হোসাইন। ফরিদপুর পুলিশ লাইন্সে ব্লাড ব্যাংক রয়েছে। শুধু পুলিশের জন্য নয়, সাধারণ মানুষও সেখান থেকে রক্ত নিতে পারে। পুলিশের বিভিন্ন কার্যক্রমে সহযোগিতার আহ্বান জানাই আমি।