সাঘাটা উপজেলার শিমুল তাইড় গ্রামের দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোফাজ্জল হোসেন। প্রতিদিন সকালে বোনারপাড়া থেকে সান্তাহারগামী লোকাল ট্রেনে ভিক্ষা করে যা আয় করেন তা দিয়েই চলে সংসার। কখনও কখনও সময় মতো স্টেশনে গিয়ে ট্রেন না পাওয়ায় অনাহারে থাকতে হয়। সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড পাওয়ায় সেই কষ্ট অনেকটা লাঘব হয়েছে তার। নির্দিষ্ট সময়ে চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল পাওয়ায় এখন সংসাবে শান্তি এসেছে।
গাইবান্ধায় লকডাউন চলায় নেই ভিক্ষা করার সুযোগ। তবুও মনে অনেক আনন্দ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোফাজ্জল হোসেনের। কারণ কয়েকদিন আগেই খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ৩০ কেজি চাল পেয়েছেন। যা দিয়ে মাসখানেক চলবে তার।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার পক্ষ থেকে সাঘাটা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিরুল আলাম স্বপন তার হাতে ত্রাণ সামগ্রী (১০ কেজি চাল , দুই কেজি ডাল, এক কেজি লবণ ) তুলে দেন। কিন্তু তিনি ত্রাণ সামগ্রী গ্রহণ করেননি।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মোফাজ্জল হোসেনে বলেন, সরকার আমাকে ১০ টাকা কেজি মূল্যের ৩০ কেজি চাল দিয়েছে। তা দিয়ে আমার মাসখানেক চলবে। আমি চাই করোনাভাইরাসের কারণে আমার চেয়ে যে বেশি অসহায় সেই এই ত্রাণ গ্রহণ করুক।
তার এই মানবিকতার পরিচয়ে হতবাক ত্রাণ বিতরণকারী টিম। একই কাজ করেছেন সাঘাটা উপজেলার দলদলিয়া গ্রামের এক পা হারানো প্রতিবন্ধী সিরাজ উদ্দিন (৬০)। তিনিও ত্রাণ গ্রহণ করেননি।
প্রতিবন্ধী সিরাজ উদ্দিন বলেন, কয়েকদিন আগে আমি প্রতিবন্ধী ভাতা তুলেছি। ওই টাকায় আমার বেশ কিছু দিন সংসার চলবে। তাই করোনাভাইরাসের কারণে আমার চেয়েও যারা বেশি অসহায়, ঘরে খাবার নেই, তাদের হাতেই ত্রাণ দেয়া দরকার ।
সাঘাটা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাছিরুল আলম স্বপন বলেন, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে এবং বিভিন্ন সময়ের দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে হোচট খেয়েছি। অনেকেই একাধিকবার ত্রাণ পাওয়ার পরও ত্রাণের জন্য এসেছেন। অনেক মধ্যবিত্ত যারা চাইলে এক বছর বসে থেকে সংসার চালাতে পারবে তারাও ত্রাণের অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু এই দুই প্রতিবন্ধী চাইলে ত্রাণ গ্রহণ করে প্রয়োজন মতো খেতে পারতো। কিন্তু তারা মানবিকতার সর্বোচ্চ পরিচয় দিয়েছেন। এ থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।
এমন ঘটনা শোনার পর কবি ও সাংবাদিক প্রতীক ওমর বলেন, আমাদের এই প্রতিবন্ধীদের থেকে শিক্ষা নেয়া উচিত। লোভের ফাঁদে পা দিয়ে আমরা চাল, ডাল, তেল চুরি করতে কখনও ভাবি না যে এটা গরিবদের হক। আসুন সবাই মিলে এই কনোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে নিজেরা সচেতন হই আর খেটে খাওয়া মানুষদের পাশে দাঁড়াই, নিঃস্বার্থে কাজ করি। তাহলে দেশের এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা সাঘাটা-ফুলছড়ি উপজেলায় যেন কেউ অনাহারে না থাকে সে জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সরকারি সহযোগিতা ছাড়াও আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে হটলাইন নম্বরের মাধ্যেম খাবার সামগ্রী বিতরণের ব্যবস্থা অব্যহত আছে ।