বয়স লুকিয়ে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) থেকে পাস করে চাকরি নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া দেশে চলমান। কিন্তু এ ‘অবৈধ’ সুযোগ বন্ধে সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তিই হতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) উল্লেখিত জন্মতারিখ লিপিবদ্ধ করে। এতে বয়স জালিয়াতির মতো ঘটনার অবসান হতে যাচ্ছে।
ইসি সূত্র জানায়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়স লুকিয়ে ভর্তি হয়ে পাস করা ডিগ্রির সনদ দিয়ে অনেকেই এনআইডির বয়স পরিবর্তন করার আবেদন করছেন। তদন্ত করতে গিয়ে প্রকৃত বয়সের সঙ্গে সনদের বয়সের মিল না পাওয়ার ঘটনা মিলছে অহরহ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ ঘটনায় দুই ধরনের সমস্যায় পড়ছে ইসি। প্রথমত, সনদ দিয়ে বয়স এনআইডির বয়স সংশোধনের আইনি বাধ্যবাধকতা। দ্বিতীয়ত, আইন মেনে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হওয়া।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এনআইডি ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউকে ভর্তি না করার জন্য সুপারিশ করেছে নির্বাচন কমিশন।
ইসির এনআইডি অনুবিভাগের কর্মকর্তারা জানান, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগ্রহ করা সনদ দিয়ে বয়স সংশোধনের আবেদন অনেক। কিন্তু তদন্ত করতে গিয়ে ‘বয়স লুকানো’র বেশ কিছু চিত্র মিলেছে।
‘অনেকেই আছেন যারা চাকরি করছেন দীর্ঘদিন ধরে। কিন্তু চাকরির শেষ সময়ে এসে বয়স বাড়ানোর আবেদন করেছেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দেখিয়ে। তদন্ত করে দেখা গেছে সংশ্লিষ্টদের অনেকের বয়স মায়ের বয়সের কাছাকাছি। কারও বয়স ছোট ভাই বোনদের চেয়েও কম।’
তারা জানান, অনেকের আবেদন তদন্ত করতে গিয়ে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চাকরির বয়স অনেক দিন আগে শেষ। কিন্তু উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে নতুন করে এসএসসি সমমান ডিগ্রি অর্জন করে আবেদন করেছেন। তাই তাদের এনআইডির বয়স সংশোধনের প্রয়োজন হয়।
অনেকের আবেদন তদন্ত করে দেখা গেছে, বয়স লুকিয়ে চাকরি নিয়ে বর্তমানে অবসরে আছেন এক আবেদনকারী। কিন্তু এনআইডির জন্মতারিখ ঠিক নেই বলে পেনশন পাচ্ছেন না। এখন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ এনে জন্ম তারিখ সংশোধনের আবেদন করেছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনের বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণে ইসি সচিবকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, সোমবার (০২ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রো-ভিসি, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও রেজিস্ট্রারের সঙ্গে বৈঠক করে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে একমত হয় দুইপক্ষই।
জানা গেছে, এখন থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আর কাউকে ভর্তি করানো হবে না। যারা ভর্তি হয়েছেন, তাদের এনআইডির তথ্য যাচাই করে জন্ম তারিখ সংশোধন করে নেবে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
যারা সম্প্রতি পাস করেছেন তাদের সনদের জন্ম তারিখও এনআইডি অনুযায়ী ঠিক করে নেওয়া হবে।
তবে যারা এরই মধ্যে অবসরে চলে গেছেন, তাদের বিষয়টা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে ছাড় দেওয়া হবে। আর যারা উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ নিয়ে চাকরিতে আছেন, তাদের জন্ম তারিখ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিয়ে সংশোধন করে দেবে না ইসি।
এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আব্দুল বাতেন বলেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দেখিয়ে বয়স লুকানোর এই চেষ্টা দীর্ঘদিন থেকেই চলে আসছে। এ সংখ্যাটা অনেক বেশি।
‘বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে বেশ কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে। তারাও বিষয়গুলো যৌক্তিক মনেকরে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি আর কোনো ছাত্রকেই এনআইডি না দেখে ভর্তি করবে না।’
তিনি বলেন, যারা পাস করেছেন বা এখনও অধ্যয়নরত- তাদের জন্ম তারিখ ইসির এনআইডি সার্ভার থেকে যাচাই করে সঠিক করে দেওয়া হবে।
এনআইডি অনুবিভাগের পরিচালক মো. আব্দুল বাতেন বলেন, সরকার এনআইডি ছাড়া বেতন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছে। বয়স লুকিয়ে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ অনুযায়ী বয়স পরিবর্তনের আবেদন করছেন অনেকে। যা অন্যায় ও অনৈতিক কাজ।
© স্বত্ব আর্থটাইমস্ ২৪.কম
প্রকাশক ও সম্পাদক: মোঃ জাকারিয়া আলম (দিপু)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ:বরিশাল-৮২০০।
আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন:::
নিউজ মেইল:::
earthtimes24@gmail.com(নিউজ)
news@earthtimes24.com(নিউজ)
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
২০১৭ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত earthtimes24.com