#

অবশেষে নিজ দেশে ফিরে গেছেন ইরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকায়ার। ইরানের বিভিন্ন মহল থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবি জোরালো হওয়ার মধ্যেই তিনি তেহরান ত্যাগ করেছেন। ইরানের কূটনৈতিক সুত্রগুলো জানিয়েছে, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত নিয়ম মেনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েই তেহরান ছেড়েছেন।

গত শনিবার রাতে ইরানের রাজধানী তেহরানের একটি বিক্ষোভস্থল থেকে ম্যাকায়ারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কোনো বিদেশি কূটনীতিক অনুমোদনহীন বিক্ষোভে অংশ নিতে পারেন না এমন অভিযোগে তাকে আটক করা হয়। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ উসকে দেয়ারও অভিযোগ ওঠে।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্তের পর দেশটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকায়ারকে এক ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখার পর ছেড়ে দেয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ পরদিন রোববার লন্ডনে থাকা ইরানের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তার কাছে এ বিষয়ে জবাবদিহিতা চায়।

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ বলে, ‘গতকালের (শনিবারের) ওই ঘটনা ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন। তাই অগ্রহণযোগ্য ওই ঘটনা তদন্ত করা দরকার। আমরা ইরান সরকারের কাছ থেকে সম্পূর্ণ আশ্বাস চাই যে এরকম ঘটনা আর কখনো যেনো না ঘটে। তাই কমনওয়েলত অফিস ইরানি রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রবল আপত্তির কথা জানিয়েছে।’

ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের ওই পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতি দিয়ে দাবি করে, ‘তেহরানের বিক্ষোভে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতি ‘‘বেআইনি, অপেশাদার ও সন্দেহজনক’’। তার এই পদক্ষেপ ইরানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সুস্পষ্ট হস্তক্ষেপ এবং কূটনৈতিক রীতিনীতির পরিপন্থি।’

ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকায়ারকে ইরান থেকে বহিষ্কারের দাবিতে তেহরানে অবস্থিত ব্রিটিশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করে ইরানের সরকার সমর্থিত বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। এছাড়া রাষ্ট্রদূতকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করে তার হস্তক্ষেপমূলক পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায় তেহরান।

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের যাত্রীবাহী বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় নিহতদের প্রতি শোক ও সমবেদনা জানিয়ে গত শনিবার বিকেলে তেহরানে অবস্থিত আমিরকাবির বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ওই বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

ইরান সরকারের দাবি, ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকায়ার ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। তিনি পুলিশের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারীদের উসকে দেয়ার অপতৎপরতা চালানোয় তাকে আটক করা হয়। ইউক্রেনের যাত্রীবাহী ওই বিমানটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিধ্বস্ত হলে তাতে ১৭৬ আরোহীর সবাই প্রাণ হারান।

প্রথমে অস্বীকার করলেও ইরানের সশস্ত্র বাহিনী শনিবার সকালে এক বিবৃতি দিয়ে জানায়, ‘ভুলবশত’ যাত্রীবাহী ওই বিমানটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালেয়ে ভূপাতিত করা হয়েছিল। তারপর ইরানের ক্ষমতাসীন সরকার ও সর্বোচ্চ নেতার পদত্যাগ দাবিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজধানী তেহরানে বিক্ষোভ করেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ।

কর্মকর্তারা কেন দীর্ঘ সময় ধরে এই ঘটনা নিয়ে মিথ্যা বলেছেন, সেই ক্ষোভ থেকেই বিক্ষোভ করছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। বিক্ষোভকারীরা দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভে অংশ নিলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। গুলি ছোড়ারও অভিযোগ উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বিক্ষোভকে অনুপ্রেরণামূলক উল্লেখ করে টুইট করেন।

মার্কিন-ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার মধ্যে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। গত ৩ জানুয়ারি বাগদাদে ড্রোন হামলা চালিয়ে ইরানের কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পর বুধবার (৮ জানুয়ারি) ইরাকে মার্কিন বিমানঘাঁটিতে ইরান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এর কয়েক ঘণ্টা পরেই ইউক্রেনের ওই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।

উত্তর দিন

Please enter your comment!
এখানে আপনার নাম লিখুন