অপেক্ষায় ছোট্ট রোমান, মা মর্গে

:
: ৬ years ago

মাসুদা আক্তার (৩৫) ইস্কাটনের এসপিআরসি হাসপাতালের সিনিয়র নার্স। দিনে ৮ ঘণ্টা ডিউটি করেন। রাতে স্বামী-সন্তানকে সময় দেন। প্রতিদিন মায়ের জন্য বাসায় অপেক্ষা করে ছোট রোমান। মা আসলে মা’র কাছে পড়াশোনা করে, খেলাধুলা করে, একসঙ্গে ঘুমায়।

শুক্রবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় ঘাতক ট্রাক চাপায় প্রাণ হারান মাসুদা। কিন্তু মায়ের মৃত্যু এখনও টের পায়নি একমাত্র ছেলে আবদুল্লাহ আল রোমান। ‘হাসপাতাল থেকে মা ফিরবে’এখনও সেই আশায় বাসায় বসে আছে সে। হাসপাতালে ডিউটি শেষে শুক্রবার ধানমন্ডির আনোয়ার খান মেডিকেল কলেজে অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে যাচ্ছিলেন মাসুদা। রাত ৯ টায় ধানমন্ডির শেখ জামাল মাঠের সামনে ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ হারান তিনি। বর্তমানে তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে রয়েছে।

মাসুদার ছেলে রোমানের বয়স ৫। এ বছর সে ধানমন্ডি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্লে গ্রুপে ভর্তি হয়েছে। মায়ের মৃত্যুর পরপরই তাদের পরিবাগের বাসায় গিয়ে রোমানের নানা-নানি তার সঙ্গে অবস্থান করছেন। কিন্তু ছোট্ট রোমান এখনও স্বাভাবিক। স্কুলে যায়নি, মা’র অপেক্ষায় বসে আছে ঘরে।

ঢামেক মর্গে স্ত্রী মাসুদার ময়নাতদন্ত ও ডেথ সার্টিফিকেটের জন্য ঘোরাঘুরি করছেন রোমানের বাবা মো. জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ছেলেটা এখনও মায়ের মৃত্যুর কথা জানে না। জানলেও বুঝতে চাইবে না। কারণ ওর মা (মাসুদা) সারাদিন ডিউটিতে থাকে। বাসায় কথা হলো। সে এখনও মায়ের অপেক্ষায় আছে।

মাসুদা ও জামালের সংসার জীবন ১৪ বছরের। দাম্পত্য জীবনে তারা খুবই সুখী ছিল বলে জানান জামাল। তিনি বলেন, আমাদের সম্পর্ক খুবই ভালো ছিল। মাসুদা ডিউটি করত, আমিও একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। রোমান বেশির ভাগ সময় গৃহকর্মীর সঙ্গেই থাকত। গত ১৮ বছর ধরে নার্সিং পেশায় নিয়োজিত মাসুদা ২০০৪ সালে এসপিআরসি হাসপাতালে কর্মরত। এর আগে তিনি ৪ বছর এলিফ্যান্ট রোডের জেনারেল হাসাপাতালে নার্সের দায়িত্ব পালন করেন।

তার এমন করুণ মৃত্যুর সংবাদ শুনে সকালে ঢামেক মর্গে ছুটে আসেন সহকর্মী নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের লোকজন। অশ্রুভেজা চোখে বারবার মাসুদার ভালো স্মৃতিগুলো মনে করছেন তারা। এসপিআরসি’র নার্স লাকী মধু বলেন, গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় তার সঙ্গে সর্বশেষ আমার কথা হয়েছে। আমার নাইট ডিউটি ছিল, রাতে খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। মাসুদা আমাকে ফোন করে বললো, ‘বৃষ্টিতে আমি যদি যেতে না পারি তাহলে সে আমার ডিউটি করে দেবে। পরে অবশ্য বৃষ্টি কমার পর তাকে ফোন দিয়ে আমিই চলে আসি। সে খুবই ভালো মনের মানুষ ছিল।’

পুলিশের ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহ্ মিরাজ উদ্দীন বলেন, মাসুদা এক আত্মীয়কে নিয়ে রিকশায় আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। সে সময় পেছন থেকে একটি ট্রাক রিকশাকে চাপা দেয়। পরে ঢামেকের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘাতক ট্রাক ও ড্রাইভারকে আটক করা হয়েছে। মাসুদার আত্মীয় ও রিকশা চালক আশঙ্কামুক্ত রয়েছে।

এসপিআরসি হাসপাতালের ম্যানেজার মো. শাহীনুর রহমান বলেন, ১৪ বছরের চাকরি জীবনে মাসুদার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। হাসপাতালের পক্ষ থেকে আমরা তার সর্বাত্মক সহযোগিতা করব। ময়নাতদন্ত শেষে নিহতের মরদেহ দাফনের জন্য বরিশালে নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পরিবারের সদস্যরা।