অপরাধীদের বিচার নিয়ে শঙ্কায় রাসেল ও হৃদয়ের পরিবার

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বাসের চাপায় রাসেল সরকারের পা হারানোর ঘটনায় কেবল বাসের চালক নন, সুপারভাইজারও দায়ী বলে মনে করে পরিবার। চালক কবির মিয়াকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছে তারা।

রাসেল সরকারের ভাই আরিফ সরকার বলেন, গতকাল রোববার চালক কবির মিয়ার রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তাঁকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। তিনি বলেন, ‘কিসের জোরে কবির মিয়া আইনের ছাড় পাচ্ছে। একদিকে আমার ভাইয়ের পা হারিয়ে গেছে, অন্যদিকে আদালত তাকে রিমান্ডের অনুমতি দিলেন না। এখন আমরা বুঝতে পারছি না এর বিচার পাব কি না। তাহলে আইন কি গরিবের জন্য নয়।’

ঘটনার পর রাসেল সরকার তাঁর ভাই আরিফ সরকারকে জানিয়েছিলেন, ওই দিন গ্রিন লাইন বাসের চালককে থামতে বলেছিলেন রাসেল। কিন্তু বাসের সুপারভাইজার ড্রাইভারকে তাঁর ওপর দিয়ে গাড়ি চালানোর কথা বলেন। এ সময় তিনি তাৎক্ষণিক সরে যাওয়ার চেষ্টা করলেও তাঁর পায়ের ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেন চালক কবির মিয়া।

বর্তমানে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন রাসেল সরকার। গতকাল ওই হাসপাতালে তাঁর পা জোড়া লাগাতে অস্ত্রোপচার হয়। তবে চার ঘণ্টা চেষ্টা করেও রাসেলের পা জোড়া লাগাতে পারেননি চিকিৎসকেরা।

চিকিৎসক রাসেল সরকারকে কথা বলতে নিষেধ করেছেন। বিশ্রাম নিতে বলেছেন। কিন্তু তারপরও যতটুকু সময় তিনি জেগে থাকছেন, ততক্ষণ বিলাপ করছেন। ‘আমার পা হারিয়ে গেছে, এখন আমার স্ত্রী-সন্তানকে কে দেখবে? আমার জীবন এখন কীভাবে চলবে?’

এসব কথা বলে বারবার কাঁদছেন রাসেল সরকার। তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না বড় ভাই।

আরিফ বলেন, ‘বারবার রাসেল পায়ের কাটা স্থানে হাত দিয়ে পা খুঁজছে। রাসেলের যথেষ্ট রক্তক্ষরণ হয়েছে। আজও দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়ার কথা রয়েছে।’

আহত রাসেল সরকার (২৩) একটি রেন্ট-এ-কার প্রতিষ্ঠানে গাড়ি চালাতেন। একটি কোম্পানি রাসেল সরকারের গাড়ি ভাড়া করেছিল। গত শনিবার বিকেলে ওই কাজ শেষ করে কেরানীগঞ্জ থেকে তিনি ঢাকায় ফিরছিলেন। পথে যাত্রাবাড়ীতে গ্রিন লাইন পরিবহনের একটি বাস তাঁর গাড়িকে ধাক্কা দেয়। পরে গাড়ি থামিয়ে বাসের সামনে গিয়ে বাসচালককে নামতে বলেন রাসেল। শুরু হয়ে যায় বাসের চালক ও রাসেলের মধ্যে কথা-কাটাকাটি।

এ সময় গ্রিন লাইন পরিবহনের চালক বাস চালানো শুরু করেন। তখন রাসেল সরতে গেলে ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে আটকে পড়েন। তাঁর পায়ের ওপর দিয়েই বাস চলে যায়। এতে তাঁর বাঁ পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর পথচারীরা রাসেলকে উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। পরে বাস ও চালক কবির মিয়াকে আটক করে শাহবাগ থানার পুলিশ।

অন্যদিকে, ট্রাকের ধাক্কায় হাত হারানো খালিদ হাসান হৃদয় এখন আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কেবিনে। মা-বাবা সারাক্ষণ তাঁর পাশে। বাবা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ছেলের হাত নিয়ে আমাদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। এর মধ্যে শুনেছি ওই ট্রাক ড্রাইভার জামিন পেয়ে গেছেন। তাহলে আমার প্রশ্ন, তাঁকে ধরলেন কেন, ছাড়লেনই বা কেন? ধরে কী লাভ হলো?’

রবিউল ইসলাম বলেন, ‘সরকার হৃদয়ের চিকিৎসার খরচ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা এখানে অনেকে আছি, আমাদের খরচ দেবে কে? আমরা গরিব মানুষ। এভাবে আমরা পারছি না। এখানে কত দিন থাকতে হবে তাও জানি না।’

হৃদয়কে এখন স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হচ্ছে। অবস্থার আগে থেকে কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। চিকিৎসা ভালো হচ্ছে। চিকিৎসকদের সহায়তা পাচ্ছেন। হৃদয় সারাক্ষণ কাঁদেন আর হাতের খোঁজ করেন।

১৭ এপ্রিল গোপালগঞ্জ সদরের বেতগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন হৃদয়। ট্রাকের ধাক্কায় ডান হাত হারিয়েছেন তিনি।