অন্ধকারে ঢাকা-বরিশাল নৌরুট শীত মৌসুম আসার আগেই সংকট

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

শীত মৌসুম আসার আগেই চরম নাব্য সংকটে পড়েছে ঢাকা-বরিশাল নৌরুট। এ সংকট শুধু ঢাকা-বরিশাল নৌরুটেই নয়, দক্ষিণাঞ্চলের ৩১টি নদীপথের বিভিন্ন স্থানে সংকট দেখা দিয়েছে। নাব্য সংকটে বিভিন্ন নৌবন্দর টার্মিনাল এলাকায় নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

তবে বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে ইতোমধ্যে দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোর ডিজিটাল সার্ভে (জরিপ) করা হয়েছে। সে অনুযায়ী খনন করে নৌপথ সচল করা হবে।

শুধু বরিশালের ৩০টি স্পটে ২১ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে। এদিকে এ রুটের বিভিন্ন স্থানে বিকন, বয়া ও বাতি থাকায় অন্ধকারে চরম ঝুঁকি নিয়ে নৌযান চালাতে হচ্ছে বলে দাবি লঞ্চের মাস্টার-ড্রাইভারদের।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, আমরা দক্ষিণের ১ হাজার ৪০০ নৌপথ উদ্ধার করার পরিকল্পনা নিয়েছি। পর্যায়ক্রমে খনন পরিচালনা করা হবে। সেই সঙ্গে বরিশাল নৌবন্দরসহ স্থানগুলোয় আগামী দুই মাস এ খনন চলবে।

বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজিং বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শীত মৌসুম আসলে নৌরুটগুলোতে চরম নাব্য সংকট দেখা দেয়। এ জন্য প্রতি বছর এসব রুট খনন করতে হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালের ৩০টি স্পটে নদী খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-বরিশাল নৌবন্দর, লাহারহাট-ভেদুরিয়া চ্যানেল, ইলিশা ঘাট, ভোলা খেয়াঘাট, লালমোহন, নাজিরপুর, রাঙ্গাবালী, শ্রীপুরের লালবাগ, কালাবদরের মুখে, হিজলা-মৌলভীরহাট, মিয়ার চর, পটুয়াখালী নৌবন্দর, কারখানা নদীবন্দর, আপেলকাঠী, কবাই, বরগুনার খাগদন নদী, আমতলী ফেরিঘাট।

বরিশাল নৌবন্দর ঘুরে দেখা যায়, কীর্তনখোলা নদীর উত্তর প্রান্তে চর জেগে নদীর গতি পাল্টে গেছে। বিআইডব্লিউটিএর ড্রেজার সেখানেই রাখা হয়েছে।

ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার কবির হোসেন জানান, অনেক স্থানে বয়া-বাতি নেই। যে কারণে অন্ধকারে লঞ্চ চালাতে হয়।

তবে বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ) আব্দুল মতিন সরদার বয়া-বাতি স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।

বরিশাল-ঢাকা নৌপথের সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মজিবর রহমান বলেন, বরিশাল নৌবন্দরে ড্রেজিংয়ের সময় পন্টুন সরানো দরকার।

তা না হলে মাটি কেটে নদীতে ফেললে তা স্রোতে আবার পন্টুনের নিচেই চলে আসে। যে কারণে প্রতিবছরই এমন নাব্য সংকট দেখা দেয়।

তিনি হিজলা-মৌলভীরহাট চ্যানেলে নাব্য সংকটের কথা তুলে ধরে বলেন, মিয়ার চরে গত বছর অপরিকল্পিত খনন করায় এবার সেখান থেকে নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

বিআইডব্লিউটিসির বরিশাল অঞ্চলের এজিএম কেএম এমরান বলেন, লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটে প্রতিবছর নাব্য সংকট দেখা দেয়। এ ছাড়া ভোলার শ্রীপুরের লালবাগ, কালাবদরের মুখেও খনন দরকার।

বিআইডব্লিউটিএর নদী খনন বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, আসন্ন শুষ্ক মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে নদ-নদীতে ২১ লাখ ঘনমিটার পলি খনন করা হবে।

চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে খনন কার্যক্রম শুরু হবে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে পর্যায়ক্রমে সব পয়েন্টে খনন কাজ সম্পন্ন করা হবে। তিনি বলেন, বরিশাল নৌবন্দরে যাত্রীবাহী লঞ্চের পন্টুন সংলগ্ন কীর্তনখোলায় আগামী সপ্তাহেই খনন শুরু হবে।

তিনি জানান, বরগুনার ঐতিহ্যবাহী খাগদোন নদীও খনন করা হবে। আরও খনন করা হবে বরিশাল-ভোলা রুটের লাহারহাট চ্যানেল, ভোলাখাল, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা চ্যানেল, লালমোহন, রাঙ্গাবালি, নাজিরপুর, বাকেরগঞ্জের কবাইসহ ৩০টি পয়েন্ট। খনন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ১২টি ড্রেজার থাকবে দক্ষিণাঞ্চলে।

বিআইডব্লিউটিএর অতিরিক্ত পরিচালক (নৌ সংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগ) আব্দুল মতিন সরদার বলেন, নাব্য হারিয়ে প্রায় বিলুপ্ত হতে যাওয়া নদীপথগুলো খনন করে নতুন করে সারা দেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ সৃষ্টি করা হবে। তার মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে নতুন নদীপথ সৃষ্টি হবে ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার।