অনুরাগী-ভক্তের শেষ শ্রদ্ধায় সিক্ত আইয়ুব বাচ্চু

:
: ৬ years ago

কখনো টেনশনকে পাত্তা দিতেন না। তবে ভক্ত ও সহশিল্পী বন্ধুদের চাপে অনেকটা বাধ্য হয়েই শারীরিক অসুস্থতায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতেন। ২০০৯ সালে হার্টে রিং পরানো হয়। কিন্তু দীর্ঘদিনের হৃদরোগটা যে জেঁকে বসেছিল তার বুকেই। গানের জন্য, জীবনের জন্য যার শত শত লড়াইয়ের গল্প, সেই মানুষটিই হার মানলেন হৃদরোগে। সেই মানুষটি আইয়ুব বাচ্চু, বাংলাদেশের সঙ্গীতাঙ্গনে যাকে কিংবদন্তি বলা হয়।

হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ওপারে পাড়ি জমিয়ে ভক্ত-অনুরাগীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে গেলেন তিনি। আইয়ুব বাচ্চুকে হারিয়ে সঙ্গীতাঙ্গন শোকে মুহ্যমান। শোকাহত পুরো বাংলাদেশ। তার একখণ্ড চিত্র যেন আজ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।

শেষবারের মতো কিংবদন্তি এ শিল্পীকে দেখতে শহীদ মিনারে ভীড় করেন হাজারও ভক্ত। শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলের নেতারাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় প্রয়াত এ শিল্পীকে। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও শ্রদ্ধা জানিয়েছে তার প্রতি।

শ্রদ্ধা জানাতে আসা অনেকের চোখেই ছিল জল। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানোর এ পর্বের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

শ্রদ্ধা জানাতে এসে নাছির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আইয়ুব বাচ্চু ছিল প্রচন্ড আবেগী। এ আবেগ তার জন্য কখনো ছিল সহায়ক, কখনো বাধা। তবে তিনি কখনো অন্য কারো জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াননি। প্রয়োজনে নীরবে সরে গেছেন, কারো সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটাননি; ব্যান্ডের জন্য তার যে লড়াই সেটা এ প্রজন্মের জন্য তা আদর্শ শিক্ষা।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু ক্ষণজন্মা। তিনি বাংলাদেশের ব্যান্ড আন্দোলনের একজন অন্যতম পথিকৃৎ। সুরে সুরে তিনি তিন প্রজন্মকে এক সুঁতোতে বেঁধেছিলেন। তার মতো শিল্পী সবার জন্য আদর্শ ও অনুপ্রেরণা।’

কথা সাহিত্যিক ও সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘আইয়ুব বাচ্চু শুধু এ দেশে নয়, সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলাতেও ছিলেন সমান জনপ্রিয়। তার গান এদেশের সঙ্গীতাঙ্গনের অমূল্য সম্পদ। তিনি বেঁচে থাকবেন ভক্ত অনুরাগীদের মাঝে গেয়ে যাওয়া অসম্ভব সব জনপ্রিয় গানের মাধ্যমেই।’

মিউজিকের জন্য অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন মানুষটি। সেই আইয়ুব বাচ্চু নিয়ে বন্ধু কুমার বিশ্বজিত বলেন, ‘বাঁচার দৌড় -সেই দৌড় প্রতিযোগিতায় আমার বন্ধুটি ফার্স্ট হয়ে গেল আজ। বাচ্চু ছাড়া আমি একা, বন্ধুহীন, পরাজিত একজন। থেমে গেল আমাদের দৌড় প্রতিযোগিতা।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, তার গানে ছিল দেশ মানুষের প্রতি ভালোবাসা। তিনি এদেশে ব্যান্ড সঙ্গীতকে অনেক উপরে নিয়ে গেছেন। তার অবদান এ জাতি ভুলবে না।

শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে। সেখানে জুমার নামাজের পর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মগবাজারে কাজি অফিস গলিতে আইয়ুব বাচ্চুর গান তৈরির কারখানা ‘স্টুডিও এবি কিচেন’-এ শেষবারের মতো তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে।

সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। চ্যানেল আইয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ আবারও স্কয়ার হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। সেখান থেকে চট্টগ্রামে নেয়া হবে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ। চট্টগ্রামের নিজ শহরের পারিবারিক কবরস্থানে শনিবার মায়ের কবরের পাশে আইয়ুব বাচ্চুর মরদেহ দাফন করা হবে।