অনুমোদন নেই ডা: জাহাঙ্গীর কবিরের ডিগ্রির

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

ডায়েবেটিস সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত ওষুধের বদলে পিঙ্ক সল্ট গ্রহণের পরামর্শদাতা চিকিৎসক ডা: জাহাঙ্গীর কবিরের প্রেসক্রিপশন বা ভিজিটিং কার্ডে উল্লেখ করা ৪টি ডিগ্রি অনুমোদনহীন বলে জানা গেছে।

তবে এখন থেকে এমবিবিএস ছাড়া অনুমোদনহীন বাকি ডিগ্রিগুলো প্রেসক্রিপশন বা ভিজিটিং কার্ডে আর ব্যবহার করবেন না বলে জানিয়েছেন ডা. জাহাঙ্গীর কবির। বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) থেকে চিঠি হাতে পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানালেন আলোচিত সমালোচিত এ চিকিৎসক।

শনিবার বিকেলে নিজের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি ভিডিও পোস্ট করে এ ঘোষণা দেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে তিনি প্রেসক্রিপশন বা ভিজিটিং কার্ডে যে চারটি ডিগ্রির কথা উল্লেখ করে আসছিলেন, সেগুলো অনুমোদনহীন ছিল।

সাম্প্রতিক সময়ে টিকা নিয়ে বিতর্কিত ভিডিও পোস্ট করার পর ডা. জাহাঙ্গীর কবিরের বিরুদ্ধে ‘অপচিকিৎসার’ অভিযোগ তোলে চিকিৎসকদের সংগঠন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেফটি রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ (এফডিএসআর)। এ অভিযোগের পর দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা চেয়ে নিজের ফেসবুক পেজ থেকে বিতর্কিত ভিডিওসহ মোট তিনটি পোস্ট সরিয়ে নিয়েছেন বলে জানান ডা. জাহাঙ্গীর।

এরপরই আলোচনায় আসে তার অনুমোহীন ডিগ্রির প্রসঙ্গ। এসব ডিগ্রি ব্যবহারের বিষয়ে কারণ জানতে চায় বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল।

ওই দুটি চিঠি পাওয়ার পর ডা. জাহাঙ্গীর তার ফেসবুক পেজে এই ভিডিও আপলোড দেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এফডিএসআরের কাছ থেকে আমার কাছে একটি চিঠি আসছে। এই চিঠি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে দেয়ার কথা ছিল। তবে আমি জানি না কীভাবে এই চিঠি মিডিয়ায় চলে আসছে। এটার কারণে আমার ব্যক্তিগত লাইফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। ৪ আগস্ট আমি এই চিঠি হাতে পেয়েছি। এটা চিঠির জবাব আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের জানাবো।’

বিএমডিসির চিঠি হাতে পাওয়ার খবর জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মৌলিক ডিগ্রি হচ্ছে এমবিবিএস। যেটা আমি চট্টগ্রাম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শেষ করেছি। এ ছাড়া চারটি ট্রেইনিং (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) ডিগ্রি ব্যবহার করছি। এটা মূলত ডিগ্রি নয়। ট্রেইনিং (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত), তবে এই ডিগ্রিগুলো আমি সত্যি সত্যিই করেছি।’

প্রমাণ হিসেবে ডা. জাহাঙ্গীর ফেসবুক ভিভিওতে তার সব একাডেমিক সদন এক এক করে দেখান। তবে এমবিসিএস ছাড়া বাকিগুলোর স্বীকৃতি দেয়নি বিএমডিসি।

তিনি আরও বলেন, ‘আসলে এগুলো ছিল ট্রেইনিং। আপনাদের কাছে আমার একটাই আবেদন: আমার ডিগ্রিগুলো যদি সঠিক না হতো, আমি কীভাবে ২০ বছর ধরে প্র্যাকটিস করে আসলাম? তবে যেহেতু বিএমডিসি থেকে চিঠি দিয়েছ, এই চিঠি পাওয়ার পর আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আমার সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশনে এমবিবিএস ডিগ্রি ছাড়া আর কিছুই লিখব না।

তবে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এফডিএসআর নেতারা বলছেন, ডা. জাহাঙ্গীরকে কিটো ডায়েট সংক্রান্ত সব ভিডিও সরাতে হবে। তা না হলে অপচিকিৎসার অভিযোগে মামলা করা হবে তার বিরুদ্ধে। এসব ভিডিও সরিয়ে নিতে ডা. জাহাঙ্গীরকে সাত দিনের সময় দিয়েছে এফডিএসআর।

বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ অনুযায়ী, দেশের চিকিৎসকদের সাইনবোর্ড, প্রেসক্রিপশন বা ভিজিটিং কার্ডে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি উল্লেখ করতে গেলে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) অনুমোদন নিতে হয়। এই আইন না মেনে দীর্ঘদিন ধরে বিএমডিসির অনুমোদন ছাড়াই চারটি ডিগ্রি ব্যবহার আসছেন ডা. জাহাঙ্গীর।

আইন অনুযায়ী, প্র্যাকটিস করা যে কোনো চিকিৎসককে তাদের অর্জিত ডিগ্রির সদনের কপি বিএমডিসিতে জমা দিয়ে তা ব্যবহারের অনুমোদন নিতে হয়। বিএমডিসি সেগুলো যাচাই করে একটি নিবন্ধন নম্বর দেয়। এরপর ডিগ্রির তথ্য বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ করার অনুমতি মেলে। ডা. জাহাঙ্গীর কবির তার সাইনবোর্ডে, প্রেসক্রিপশনে যেসব ডিগ্রি উল্লেখ করেছেন, সেগুলোর বিষয়ে তিনি বিএমডিসিতে কোনো আবেদন করেননি।

ডা. জাহাঙ্গীর এমবিবিএস ছাড়াও যে চারটি ডিপ্লোমা ডিগ্রি ব্যবহার করছেন, সেগুলো হলো: ডিপ্লোমা মডিউল ইন ডায়াবেটিস (এডুকেশন ফর হেলথ), ডিপ্লোমা মডিউল ইন অ্যাজমা (এডুকেশন ফর হেলথ), ডিপ্লোমা মডিউল ইন সিওপিডি (এডুকেশন ফর হেলথ), স্পিরো ৩৬০ স্পাইরোমেট্রি কোর্স (ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি)।