দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামে এক বিস্ময়কর দৃশ্যের জন্ম দিলেন তরুণ উদ্ভাবক অনুকূল চন্দ্র রায়। নিজের মেধা ও বাবার কষ্টার্জিত টাকায় তৈরি করা বিমানটি প্রথমবারের মতো সফলভাবে আকাশে উড়িয়েছে। অনুকূল বিমানটির নাম দিয়েছেন ‘Royal Sky-110’।
মাত্র ২ বছর গবেষণা আর কাঠমিস্ত্রি বাবার তিলে তিলে জমানো ৩০ হাজার টাকা খরচ করে ছেলে অনুকূল বিমানটি তৈরি করেন। বিমানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির মধ্যে রয়েছে রেডিও কন্টলার ফ্লাইস্কাই এএসআই৬, লিকো ব্যাটারি ২২০০ এমএস৩ সেল, দুইটি বিএল ডিসি মটর (১৪ কেভি), প্রোপেলার ৮ ইঞ্চি, সার্ভো মটর ৯ গ্রাম (চারটি) এবং বডি ককপিট তথা বিমানের মূল কাঠামো ও নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিমানটি আকাশে উড়তেই গ্রামের মাঠে ভিড় জমায় আত্মীয়-স্বজনসহ স্থানীয়রা। তারা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অনুকূলের সাফল্যকে অভিনন্দন জানান।
অনুকূল চন্দ্র রায় উপজেলার আঙ্গারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে। ২০২৩ সালে তিনি একটি রোবটও তৈরি করেছিলেন। সুযোগ পেলে অনুকূল দেশের প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবেন বলে আশাবাদী তারা স্বজনসহ গ্রামবাসীরা।
গ্রামবাসী আব্দুল খালেক, আরিফুল, সাগরসহ অনেকেই বলেন, আমাদের অনুকূল বিমান তৈরি করে আকাশে উড়িয়েছে, এটা আমাদের গর্ব। এটা একটি বিমান নয়, এটি অনুকূলের স্বপ্ন। অধ্যবসায় আর গ্রামের মানুষের উচ্ছ্বাসের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। মেধাবী অনুকূল যদি সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা পায়, তাহলে আরো বড় কিছু করে দেখাতে পারবে।
অনুকূলের বাবা কাঠমিস্ত্রি রণজিৎ রায় বলেন, “আমার স্বপ্ন ছিল ছেলে আমার আকাশে বিমান উড়াবে। আজ সে আমার স্বপ্ন পূরণ করেছে। অনেক কষ্ট করে তার বিমান তৈরির ব্যয় ব্যবস্থা করেছি। আমি সবার নিকট দোয়া চাই, আমার ছেলে যেন আরো বড় কিছু করতে পারে।”
অনুকূল চন্দ্র রায় বলেন, “আমি ছোট থেকে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতাম এবং আকাশে বিমান উড়া দেখতাম। মূলত তখন থেকেই আমার মনের বাসনা নিজে কিছু করব। নিজের আশা পুরণ করতে দীর্ঘ দুই বছর প্রচেষ্টায় তৈরি করেছি ‘Royal sky 110’ বিমান। যখন বিমানটি আকাশে উড়ায়, তখন মাঠে দর্শকের অভাব থাকে না। এটা আমার জীবনের চরম স্বার্থকতা।”
এ বিষয়ে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান সরকার বলেন, “আমি অনুকূল চন্দ্র রায়ের আবিষ্কার বিষয়ে জেনেছি। তার বিমানটি নিয়ে আসতে বলেছি, বিমানটি দেখবো, আসলে সে কি তৈরি করেছে দেখি। পরে এ বিষয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জানাব, যাতে সে সরকারি সহযোগিতা পায়। তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।”