চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) ১০ আগস্ট পর্যন্ত প্রথম ৪০ দিনেই অনলাইন ব্যবস্থায় সারাদেশে প্রায় ৪০ কোটি টাকার বেশি ভূমি উন্নয়ন কর আদায় করা হয়েছে। শনিবার (১৩ আগস্ট) ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভূমি অফিসে না গিয়েই অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার সুবিধার কারণে নাগরিক হয়রানি অনেক কমছে। ফলে দেশের নাগরিকদের মধ্যে নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার হার উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম থেকেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধির নিয়ামক বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে ঢাকায় অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার হার সবচেয়ে বেশি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর ভূমি অফিসগুলোকে ক্যাশলেস (নগদ টাকার লেনদেনহীন) ঘোষণা করা হয়েছে। এসব অফিসে সব ধরনের ফি ইলেকট্রনিক মাধ্যমে নেওয়া হয়।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঢাকাসহ দেশের শতভাগ ভূমি মালিক অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থার আওতায় চলে আসবেন। পর্যায়ক্রমে দেশের সব ভূমি অফিস ক্যাশলেস হবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়, এরই মধ্যে প্রায় ৯৯ শতাংশ হোল্ডিং এন্ট্রি সম্পন্ন হয়েছে। ডিজিটাল ভূমি কর ব্যবস্থায় এখন পর্যন্ত চার কোটির বেশি সুবিধাভোগী অতিরিক্ত খরচ ছাড়াই ভূমি উন্নয়ন কর দিতে নিবন্ধন করেছেন। সাড়ে তিন কোটি জমির তথ্য ডিজিটালে রূপান্তর করা হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ১০ হাজারের বেশি গণকর্মচারীকে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার পর তাৎক্ষণিক দাখিলা পাওয়া যাচ্ছে।
সাধারণ ও সংস্থা পর্যায় মিলিয়ে প্রতি অর্থবছরে সাধারণত ৮০০ কোটি টাকারও বেশি ভূমি উন্নয়ন কর রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়। এসব অর্থ শতভাগ অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থার মাধ্যমে আদায় করতে পারলে কর আদায় অধিকতর দক্ষ হবে এবং কর আদায়ের পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার প্রক্রিয়া
২০২১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ কার্যক্রম তথা ‘ডিজিটাল ভূমি কর ব্যবস্থা’ উদ্বোধন করেন।
এরপর গত ৫ জানুয়ারি ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ১৬১২২ নম্বরে কল করেই ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করার সেবা কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০২০ সালে অনলাইনে ভূমি কর ব্যবস্থার পাইলটিং শুরু হয়।
ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের জন্য ১৬১২২ নম্বরে কল করে কিংবা land.gov.bd ওয়েবসাইটে ঢুকে এনআইডিসহ জমির তথ্য দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের তথ্য পাওয়ার পর ইউনিয়ন ভূমি অফিস অনুমোদন দিলে হোল্ডিং এন্ট্রি শেষ হবে।
হোল্ডিং নম্বরের তথ্য আবেদনকারীকে এসএমএসের মাধ্যমে পাঠানো হবে। এরপর আবার ১৬১২২ নম্বরে কল করে হোল্ডিংয়ে তথ্য দিতে বা নিজেই land.gov.bd থেকে কর দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন।
এরপর কলসেন্টারের মাধ্যমে কর দিতে চাইলে সেখান থেকে নাগরিকের মোবাইলে টোকেন নম্বরের এসএমএস আসবে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পে-বিলের মাধ্যমে টোকেন নম্বর দিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিক জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন।
তাছাড়া এনআইডি নম্বর, জন্মতারিখ ও খতিয়ানের তথ্য দিয়ে যে কোনো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে নিবন্ধন ও ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার সুবিধা চালু করা হয়েছে।
এনআইডি নম্বর ব্যবহার করেও যে কেউ অন্যের পক্ষে অ্যাকাউন্টে লগইন না করেই ভূমি উন্নয়ন কর দিতে পারবেন। তবে দাখিলা পেতে লগইন করতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের সঙ্গে সঙ্গে কিউআর কোড সমৃদ্ধ ডিজিটাল দাখিলা নিজ অ্যাকাউন্ট থেকে ভূমি মালিক ডাউনলোড করতে পারবেন।