জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান এবং উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর উত্তরার বাসায় হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
শনিবার (২ জুলাই) উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলাটি করেন অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর স্ত্রী বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদা হক। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস।
আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকীর উত্তরার বাসায় হামলার অভিযোগে তার স্ত্রী অধ্যাপক ফাহমিদা হক বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ২০০ থেকে ৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী ও মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিরা তার স্বামী ও তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বেআইনি পথরোধ করে এবং তার স্বামীকে আঘাত করে। তাকেও সামাজিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
অভিযোগ করেন, বর্তমানে আমি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি উত্তরা শাখার সভাপতির দায়িত্বে আছি। পরিবারের অন্যান্য সদস্যসহ ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে উত্তরার বাসায় স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছি। শুক্রবার (১ জুলাই) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে ব্যক্তিগত গাড়িযোগে আমার স্বামী ও ভাইসহ বাসার সমানে পৌঁছাই। এসময় বাসার মেইন গেটের সামনে একটি মোটরসাইকেল ‘রং পার্কিং’ অবস্থায় থাকায় বাসায় ঢুকতে পারছিলাম না।
ফলে আমি ও আমার স্বামী মিলে মোটরসাইকেলের মালিককে খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। এরপর ওই মোটরসাইকেলের মালিককে খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে আমার গাড়িচালক দুইবার হর্ন বাজান। এর ১০ মিনিট পর বাসার সামনের মসজিদ থেকে অজ্ঞাতনামা একব্যক্তি (যার ছবি ভিডিওতে ধারণ করা আছে) এসে আমাদের পথরোধ করে বলেন ‘হর্ন বাজালেন কেন? জানেন না নামাজ হচ্ছে, হর্ন বাজানোয় নামাজে সমস্যা হয়। হর্ন বাজিয়ে নামাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি করেছেন। যতক্ষণ নামাজ শেষ না হয় ততক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে। নামাজ শেষ হবে তারপর বাসায় যাবেন। রাস্তা কি আপনার বাপের যে মোটরসাইকেল রাখা যাবে না?’
তখন আমি বলি, আপনি ভদ্র ভাষায় কথা বলেন, একজন নারীর সঙ্গে আপনি এ ভাষায় কথা বলছেন কেন? আমার বাসায় কি আমি ঢুকবো না? তখন অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি আমার স্বামীকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘আপনি বলেছেন, এখানে ধর্মের নামে ভণ্ডামি হয়’ যা আমার স্বামী কখনোই বলেনি, এটি একটি মিথ্যা কথা। তখন আমি ও আমার স্বামী উভয়ে বলি ‘আপনি মিথ্যা বলছেন কেন?’ এরপর ওই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি তার সহযোগীসহ অন্যান্য মুসল্লিদের ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করেন এবং আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেন। একপর্যায়ে মারধর করার জন্য আমাদের দিকে তেড়ে আসেন তিনি।
এসময় ঘটনাটির সাক্ষ্যপ্রমাণের জন্য মোবাইলে ভিডিও ধারণ শুরু করি। তখন তারা আরও ক্ষিপ্ত হলে ভিডিও বন্ধ করে দিই। তখন সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি এবং তাড়াহুড়া করে গেটের ভেতরে প্রবেশ করে তালা বন্ধ করে দিই। আমি ততক্ষণে বুঝতে পারি আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমাকে ও আমার স্বামীকে হত্যার উদ্দেশ্যে এমন কর্মকাণ্ড করে থাকতে পারে।
আসামিদের মধ্যে কেউ একজন আমার স্বামীকে গেটের বাইরে থেকে হাত ঢুকিয়ে সজোরে ধাক্কা দিয়ে শারীরিকভাবে আঘাত করেন এবং পেটে ঘুষি দেয়। অজ্ঞাতনামা আরেক এক ব্যক্তির বাম হাতে লুকিয়ে রাখা অবস্থায় লোহার একটি রড দেখতে পেয়ে আমার স্বামী বাসার ভেতরে চলে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মসজিদ থেকে ২০০ থেকে ৩০০ জন লোক জড়ো হয়। তাদের মধ্যে কিছুসংখ্যক লোক ‘নারায়ে তাকবির-আল্লাহু আকবার’ বলে স্লোগান দিয়ে বাসার গেট ভাঙার চেষ্টা করে এবং বাসায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন।
এরই মধ্যে আমরা থানায় সংবাদ দিলে পুলিশ এবং র্যাবের টহল টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে সরে যায় তারা।