অতিরিক্ত যৌন চাহিদা ও অশ্লীলতাই কি ধর্ষণের প্রধান কারন?

:
: ৬ years ago

আজহারুল ইসলাম: বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো ধর্ষণ। এক জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে প্রতি দিন ৪ জন করে নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। আমাদের সুশীল সমাজের সদ্যসরা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এর কারন ব্যাখা করছে। কোন কোন তথ্য ও প্রযুক্তি বিদ বলছেন, মাত্রারিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ও হাতের কাছে ফোন, ইন্টারনেট, পাওয়ায় তারা খারাপ কাজে আসক্ত হচ্ছে । ফলে তারা বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এখন আমার প্রশ্নটা হচ্ছে, তথ্য প্রযুক্তি গত দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের ১৩৭ তম দেশ। তাহলে উন্নত দেশ গুলোতে কেন হচ্ছে না আমাদের দেশে বা কেন এমন হচ্ছে। আজ আমি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিশেষ ঘটনা ধর্ষণ, নেশা, শিশু অপরাধ নিয়ে তথ্য উপাত্যের সাহায্যে এর কারন, কেন হচ্ছে??? দেশের কি করা উচিত??? প্রশাসনের ভূমিকা??? ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

১. ধধর্ষণ :::::::: প্রতিদিন খবরের কাগজটা খুলতেই চোখে পড়ে ধর্ষণ, বাসে ধর্ষণ চেষ্টা, ধর্ষণকরে হত্যা, রিক্্রায় ধর্ষণের চেষ্টা ( কয়েকদিন আগে ঢাকায় সকাল ৮ টায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মেয়েকে এক রিকাসার ড্রাইভার হয়রানী করেছে) ইত্যাদি খবর আমাদের চোখে আসে। এছাড়া, বাবা কতৃর্ক মেয়ে ধর্ষণ, মামাত ভাই বিয়ের প্রলোবন দেখিয়ে ধর্ষণ, অভিনয়ের সুযোগ দেয়ার নামে ধর্ষণ, ইত্যানি নানা খবর চোখে পড়ে। তাহলে কি বাংলাদেশের পুরুষের যৌন চাহিদা অতি মাত্রায় বেড়ে গেছে। আর যদিও বেড়ে যায় তাহলে এর কারন কি।নাকি আজকাল নারীরা তাদের চলাফেলা পুরুষদের এমন হতে বাধ্য করছে। না কি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার দূর্বলতার সুযোগটা পুরুষরা গ্রহন করতে চায়। কি হতে পারে এর কারন। মানবাধিকার কমিশন সহ সবাই এই ব্যাপারে উর্ধিগ্ন। কিন্তু ধর্ষণটাকে কেন সামাল দিতে পারছে না। যাই হোক। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ ও মুসলমান প্রধান দেশ। একটা মুসলমান দেশে এতো ধর্ষণের ঘটনা আগে ঘটে নি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধর্ষণ কেন হচ্ছে তার কারন গুলো আমি নিম্নে এক এক করে ব্যাখা করছি।

ক)ধর্মীয় বিধান ::::::: আমরা প্রত্যেকেই মুখে মুখে নিজ ধর্মের কথা স্বীকার করি কিন্তু বাস্তবে আমরা প্রয়োগ করি কম। ভালো মানুষ সাজার আগ্রহতা আমাদের প্রচুর কিন্তু খারাপ কাজটা কেউ না দেখলেই হয় —- এটা হচ্ছে আমাদের মূলনীতি। আমি নিজে দেখেছি হুজুরের মেয়ে অশ্লীল হতে, দেখেছি সবাইকে যে ভালো পথ দেখায়, তার নিজের ঘরে সে সেই পথ দেখায় না। খ) অনুকরন প্রিয় মানুষ আমরা ::::::: গুরুত্বের দিক থেকে এটি ২য়। আমরা সবাই অনুকরন করতে ভালবাসি। আমরা সাধারন ভালটার চেয়ে খারাপ কাজটায় বেশি উব্ধুদ্ধ হয়। প্রাশ্চাত্য কালচারটা আমরা অনুসরন করছি। আমরা চিন্তা করছি, ওরা কিভাবে এসব করছে, এসব পোশাক পড়ছে, রাস্তায় চুমু খাচ্ছে, মেয়েরা পতিতায় লিপ্ত হচ্ছে, সব খুলেমেলা পোশাক পড়ছে, তাহলে আমরা কেন নয়।Criminology এর একটি গুরুত্বপূণ্য School হচ্ছে Schological School of Criminology. এই স্কুলের মতে ” Inferior imitate Superior, imitation of modernism, imitation of offence are the only reasons of criminal intention of any person. অথাৎ গরিব ধনী মানুষকে অনুকরন করে, আপরাধী অরেক আপরাধীকে অনুকরন করে, এক একজন মানুষ অন্য মানুষকে অনুকরন করে তার মত হওয়ার চেষ্টা করে —- এগুলোই অপরাধের মূল কারন। আরেকটি উদাহরন দিয়ে বিষয়টি clear করছি —- গত ১৪ ই মে বরিশালের আমতলা পার্কে পাশে অটো থেকে আমি নামলাম, নেমে দেখলাম ৩/৪ মেয়ে দাড়িয়ে আছে তারা মুধে ওড়না বাধতেছে তখন সন্ধ্যা ৭.২০ এর মতো সময়, বাচ্চা গুলো বেশি হলে ক্লাস ৬/৭ ম শ্রেণীর ছাত্রী হবে। তারা একে অন্যকে দেখিয়ে কথা বলছে, জানিস, আরেকদিন আমি এসেছিলাম মাকে নিয়ে এখানে দেখলাম একটা ভাইয়া আরেকটা মেয়েকে হাতে ধরে রেখে চুমু দেয়ার চেষ্টা করছে। তারা কিন্তু পার্কে ঘুরার উদ্দেশ্যে কোচিং শেষ করে এখানে এসেছে তাদের মনের ভিতরে আছে শুধু একটাই যে এখানে ছেলে মেয়েরা, প্রেমিক প্রেমিকারা সন্ধ্যার পর কি করে, তারা সেটা দেখবে এবং সেটা অনুকরন করবে। এভাবে অনুকরন করতে গিয়ে বিদেশী সংস্কৃতি কে ধারন করে আমরা আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি। মনে রাখতে হবে, আমাদের প্রথম পরিচয় আমরা মানুষ, তারপর আমরা মুসলমান।

গ) রাজনৈতিক আস্তাভাজনঃঃ আপনি দেখবেন, যারা সমাজে ধর্ষণ বা বড় বড় অপরাধে লিপ্ত তাদের একটা বড় রাজনৈতিক সার্পোট আছে। আমার নিজের দেখা অনেক আছে এমন। তবে বিষয়টা স্পষ্ট করছি একটা উদাহরন দিয়ে। আমার এলাকায় আমি যখন কলেজে পড়ি তখন দেখতাম একটা ১৩/১৪ বছরের একটা ছেলেকে সব নেতারা খুব আদর করে। ছেলেটা এতই সাহসী যে, এসব নেতাদের যত্র ছায়ায় সে যে কোন কাজ করতে পারে এমনকি তার বাবার গায়ে হাত তুলে। সে কাউকে মানে না। গাজা, মদ, সব ধরনের আসরে তার চলাফেরা। তাকে এলাকার সব নেতারা ছিনত। সে অপরাধ করলেও তাকে কেউ কিছু বলতো না। এমনকি রাস্তায় ছোট ছোট মেয়েদের বিরক্ত করতো প্রতিদিন। তাকে কেউ কিছু বলার সাহস নেই কারন তার সাথে নেতাদের সম্পর্ক ভালো। এখন চিন্তা করেন — এই বাচ্চা ছেলাটা বড় হলে আমি নিশ্চিত সে হবে এলাকার সন্তাস, বড় ধর্ষক। কাদের যত্রছায়ায় সে বড় হচ্ছে এটা দেখতে হবে।

ঘ)নীতি ও নৈতিকতার অধপতন :::::: একটা বিষয় সরাসরি বলি, আজকাল মা বাবারা এটা খুজে না যে ছেলে লেখাপড়া শিখে ভালো মানুষের মত মানুষ হলো কি না, তারা দেখে ছেলে BCS. cadre কি না। ভালো ছাত্র হওঢা মানে ভালো মানুষ হওয়া নয়। ঙ) অশ্লীল মিডিয়া ও চলচ্ছিত্র ::::: আপনি ভারতে এমন কোন সিনেমা পাবেন না যেখানে যৌন দূশ্য নেই। এখন এটা বাংলাদেশেও হচ্ছে। মডেল বানানোর নামে ছোট ছোট পোশাক পড়িয়ে একটি সুন্দরী মেয়ে তারা রাতের পর রাত ভোগ করে তারা মডেল তৈরি করছে। এই মডেলরাই অবার যৌন দূশ্যে অভিনয় করছে, সেটা মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশে প্রচার করছে। বাচ্চারা সেটা দেখছে, ফলে অকালেই তাদের ভিতরে যৌন আকাংঙা সৃষ্টি হচ্ছে। ১৮ + ছেলে মেয়েরা এসব দেখে তারা তাদের চাহিদা মেঠানোর জন্য উঠে পড়ে লাগে। আর কতগুলো মানুষ নামের পশুরা নিজের যৌন চাহিদা মিটাতে না পেরে ছোট ছোট বাচ্চাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ছে। ফলে বর্তমানে শিশু ধর্ষণের পরিমান চরম বেড়ে যাচ্ছে।

চ) মা বাবার অসাবধানতা :::::: আপনি দেখবেন দুপুর হলেই প্রতিটি পার্কে কতগুলো কাপল দেখা যায় স্কুল ড্রেস পড়ুয়া। হয়ত কলেজ বা স্কুলের ড্রেস। তারা বসে বসে খারাপ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। এখন প্রশ্নটা হলো, তাদের মা বাবার একটু চিন্তা করা উচিত, আমার মেয়ে কোথায় যাচ্ছে, কার সাথে মিশছে , কোথায় সময় ব্যয় করছে। ছ)নারীদের অশ্লীল পোশাক ::::: নারীদের অশ্লীল পোশাক ধর্ষণের অন্যতম প্রধান কারন। ইসলাম নারীদের পূর্ণ্য স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু আজকাল রাস্তায় বেড় হলেই কতগুলো নারীকে দেখতে পাওয়া যায় আশ্লীল পোশাকে, এসব মেয়েরা মনে করে আমরা আমাদের শরীর বা অংগ প্রতংগকে যত পর্দশন করবো, আমরা ততো অধুনিক। অধুনিকতা মানে অবাধ যৌনতা নয়, প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ে কাজ ছাড়া রাত বিড়াতে ঘুরে রেড়ানো নয়। জ) আইন ব্যবস্তার অপর্যাপ্ততা ::::: বাংলাদেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খুবই কম। প্রায় সময়ই দেখা যায় ধর্ষক ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ার কারনে। আমাদের সেই কোন Special Tribunal, Special law for reduce rape. আর থাকলেও সেটা কার্যকারিতা নেই।

ঞ) আমাদের নারীরা বিচারের বাহিরে ::::::: আশি বা নব্বয়ের দশকে নারীকে একজন পুরুষ জোর করে ধর্ষণ করতো। আর এখনের পরিস্তিতি একটু ভিন্ন — এখন কিছু ক্ষেত্রে নারীদের দোষ থাকে কিন্তু আমাদের বিচার ব্যবস্থায় নারীদের ভুলটাকে ভুল হিসেবে ধরা হয় না। ফলে নারীরা তাদের সাবধানতার ব্যাপারে কম সজাগ। যদি তাদেরকেও তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তির আওতায় আনা যায় তাহলে তারা সাবধান হবে। এরকম আরো অনেক কারন রয়েছে ধর্ষণ বেড়ে যাবার। চলুন আমরা নিজেরা সর্তক হই, আপরকেও সর্তক করি এই ব্যাপারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় , একটি নিষ্পাপ মহিলাকে ধর্ষণ করছে কিছু পুরুষ নামের পশু। সেক্ষত্রে তদন্ত করে সরাসরি জনসমক্ষে ফাসির দাবি জানাচ্ছি কার একমতে অন্যররা শিক্ষা পাবে।

—————আজহারুল ইসলাম

আইন বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়।