অগ্নিকাণ্ডে একই পরিবারের ৫ জনের মৃত্যুর রফা ২৪ লাখে

:
: ২ years ago

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় অগ্নিকাণ্ডে স্বামী-স্ত্রী ও তিন সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় ২৪ লাখ টাকায় রফা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সোমবার দুপুরে (১১ এপ্রিল) উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছফিউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে এই ঘটনায় রফা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের শরিয়তনগরে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন স্কুল শিক্ষক মকবুল মিয়া। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি রাত সোয়া ১০টার দিকে রান্নাঘরে কয়েল জ্বালাতে যায় মকবুল-রেখা দম্পতির শিশু সন্তান আরিফ হোসেন। দিয়াশলাই জ্বালাতেই দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে। আগুনের হাত থেকে আরিফকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তার মা, বাবা ও ছোট ভাই জোবায়ের হোসেন। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের কারণে ঘরের বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে অন্ধকারে তারা বাইরে বের হতে পারেননি। ভেতরেই সবাই দগ্ধ হন।

ঘটনাস্থলেই জোবায়ের মারা যায়। পরে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে মকবুল মিয়া (৪২), বড় ছেলে আরিফ হোসেন ও মকবুলের স্ত্রী রেখা মারা যান। এর আগে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে রেখা একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন।

এই ঘটনার পাঁচদিন পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল আলমকে প্রধানসহ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে উপজেলা প্রশাসন। পরে গত ২ মার্চ বেলা ভবনের মালিকসহ পাঁচজনকে আসামি করে আশুগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন মকবুলের মা খোরশেদা বেগম। মামলায় ভবনের মালিক আলাই মিয়া (৬০), তার স্ত্রী, দুই ছেলে ও বাড়ির দারোয়ানকে আসামি করা হয়।

হৃদয়বিদারক এই ঘটনাটি অবশেষে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করে আপস করলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক হাজি ছফিউল্লাহ মিয়া। সোমবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর পর্যন্ত ছফিউল্লাহ মিয়ার নেতৃত্বে আশুগঞ্জ বাজারে তার কার্যালয়ে করা বৈঠকে রফা হয়।

সালিশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম পারভেজ, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান, জেলা কাজী সমিতির সভাপতি, মকবুলের মা খোরশেদা বেগম ও শ্বশুর খোরশেদ আলম, ভবন মালিক আলাই মিয়া প্রমুখ। সালিশে মৃত্যুর ঘটনায় ভবন মালিক আলাই মিয়াকে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করে আপস করা হয়।

এ বিষয়ে আশুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ছফিউল্লাহ মিয়া বলেন, ২৪ লাখ টাকায় আপস করা হয়েছে। মকবুলের অনেক টাকা ঋণ আছে। সালিশি বৈঠকে নিহতের স্বজনরাসহ উপজেলার গণ্যমাণ্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এই ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী মকবুলের স্ত্রী রেখার বাবা খোরশেদ আলম  জানান, সালিশি বৈঠকে আপস হওয়ার পর আমাদের কাছ থেকে আপসনামায় স্বাক্ষর রাখা হয়েছে। সেখানে মকবুলের ভাইও স্বাক্ষর করেছেন। আগামী ২০ এপ্রিল অভিযুক্তরা আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের কাছে টাকা দিবেন। আমরা আবার ২১ এপ্রিল তার অফিসে যাব। জরিমানা করা ২৪ লাখ টাকা মকবুলের পরিবার ও আমরা অর্ধেক করে পাবো।

তবে মামলার প্রধান আসামি আলাই মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরবিন্দ বিশ্বাস  বলেন, কে আপস করছে তা আমার জানা নেই। এঘটনায় মামলা হয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। তারা তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এখনই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করছি না। আদালত চাইলে আমরা জমা দেবো।

এ বিষয়ে আশুগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ রহমান বলেন, অগিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় আমাদেরকে আপস করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা সাফ জানিয়ে দিয়েছি, মামলা আইন অনুযায়ী চলবে। আপসের সুযোগ নেই। তবে তারা নিজেরা বসে আপস করতে যাচ্ছে এমন ইঙ্গিতও দিয়েছিল।