অগৈলঝাড়ায় করোনা প্রতিরোধ সচেতনায় নারী কর্মীর প্রচারনা গরীবের জন্য মাস্ক তৈরী

:
: ৪ years ago

শামীম আহমেদ ॥ বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা বাজারের উত্তর গলি দিয়ে হেটে যেতেই চোখে পড়ল বাজারে দাড়িয়ে এক কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে মানুষকে ডেকে ডেকে করোনা সম্পর্কে সচেতনা সৃষ্টির প্রচারনা চালানোর পাশাপাশি স্বল্পমূল্যে মাস্ক বিক্রি করেছেন এক গৃহবধূ। দেশে করোনা আতঙ্ক দেখা দেওয়ার পরে অল্পমূল্যে মাস্ক তৈরী ও সরবারহ করে ইতোমধ্যেই গরীবের মাস্ক তৈরীর কারিগর হিসেবে এলাকায় পরিচিতি লাভ করেছেন উপজেলার শিহিপাশা গ্রামের হতদরিদ্র নারী কর্মী মিলিতা চৌধুরী (৩০)। মিলিতা চৌধুরী আগৈলঝাড়া ও আশপাশ উপজেলার হাটবাজারে করোনা প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে প্রচারনা চালানোর পাশাপাশি হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে ২০/৩০ টাকার মধ্যে মাস্ক সরবারহ করেন। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে ও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারনা ও মাস্ক বিক্রি করেছে।

 

ভুক্তভোগী, ক্রেতা ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সারা দেশে করোনা আতংক দেখা দিলে সামর্থবানরা বাজার থেকে মাস্ক কিনে নিজেকে সুরক্ষা করতে ব্যবহার করলেও হতদরিদ্ররা মাস্ক কিনতে পারছিল না। বাজারের একটি ভাল মাস্ক ১শ থেকে দেড়শ, নিন্মমানের হলে ৫০/৬০ দরে বিক্রি হয়। যা হতদরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। নিন্ম আয়ের মানুষের মধ্যে করোনা প্রতিরোধে করনীয় সচেতনতামূলক প্রচারনা চালানো ও ২০/২৫ টাকার মধ্যে মাস্ক সরবারহের উদ্যোগ দিলেন আগৈলঝাড়া উপজেলার গৈলা ইউনিয়নের দিনমজুর দানিয়েল চৌধুরীর স্ত্রী নারী কর্মী মিলিতা চৌধুরী (৩০)। হতদরিদ্র মিলিতা চৌধুরী জানান, স্বামী সন্তানসহ তার ৪ সদস্যের পরিবার। দিন মজুর স্বামীর একার আয়ে কোন রকম সংসার চলছিল। অর্থ সংকটে ছেলে সুর্য্য চৌধুরী (৯) ও মেয়ে শশী চৌধুরীকে (৫) লেখাপড়া করাতে পারছিল না।

 

এ সময় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা হোমল্যান্ডের সদস্য হয়ে তাদের কাছ থেকে শিক্ষা-প্রশিক্ষন গ্রহন করে সেলাই মেশিন কিনে বাড়িতে বসে নারী ও শিশু পোষাক তৈরী বিক্রি শুরু করেন। দিনমজুর স্বামীর আয়ের সঙ্গে তার আয়ে গত ৩/৪ বছরের মধ্যে অভাবের সংসারে কিছুটা ভাল অবস্থা ফিরে আসে। ছেলে মেয়ের লেখাপড়া শুরু করেন।

 

মিলিতা চৌধুরী বলেন, দেশে করোনা আতংক শুরু হলে আমি নিজের তাগিদ থেকে মানুষকে সচেতন করায় প্রচারনা শুরু করি। গ্রামে গঞ্জে কাপর বিক্রি করতে গিয়ে দেখি দিনমজুর, কামার, কুমার, রিকসাওয়ালা, কুলি, জেলেসহ অধিকাংশ মানুষ মাস্ক ক্রয় করার ক্ষমতা না থাকায় তারা তা ব্যবহার করছে না। তখন আমি সিদ্ধান্ত নিলাম কি করে অল্প মূল্যে মাস্ক সরবারহ করা যায়। তখন আমি নারায়নগঞ্জ থেকে কাপর সংগ্রহ করে ২০/৩০ টাকা দরের মধ্যে মাস্ক তৈরী শুরু করি। ২০ থেকে ৩০ টাকায় গরীবের মাস্ক বাড়ি, হাট, বাজারে পৃথক পৃথক দলে ভাগ হয়ে বিক্রি শুরু করলাম। কম মূল্য হওয়ায় বাজারে হতদরিদ্র ক্রেতা ছাড়াও মাঝারি আয়ের লোকজনের কাছে তার তৈরী মাস্কের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে ২/৩ জন নারী সহকর্মীকে নিয়ে রাতে মাস্ক তৈরী ও দিনে বাজারজাত করি। স্কুল বন্ধ হওয়ায় ছোট ভাই শুভ বাড়ৈ (১৪) ও ছেলে সুর্য্যকে দিয়েও বাজারে বিক্রি করে থাকি।

 

মিলিতা আরো বলেন, সরকারিভাবে শুধু প্রচারনা চালানো হয় কিন্তু কেউতো মাস্ক সরবারহ করে না তাই আমি প্রচারনা চালানোর সঙ্গে কম মূল্যে মাস্ক সুবিধা দিচ্ছি। চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে এটি স্বাস্থ্য সম্মতভাবে তৈরী করা হয়েছে।

 

আগৈলঝাড়া উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদের সাধারন সম্পাদক কাজল দাশ গুপ্ত বলেন, হতদরিদ্র মানুষের কষ্টের কথা হতদরিদ্ররাই বুঝে তাই মিলিতা গরীবের জন্য মাস্ক তৈরী করে এলাকায় ব্যাপাক সারা ফেলেছে।

 

মিলিতার করোনা বিরোধী প্রচারনা ও স্বল্পমূল্যে মাস্ক তৈরীকে স্বাগত জানিয়ে গৈলা মডেল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দুলাল দাশ গুপ্ত বলেন, করোনা মোকাবেলায় নিন্ম শ্রেনির মানুষের মাঝে মিলিতা প্রচারনা কার্যকর ভূমিকা রাখছে এবং সামর্থের মধ্যে থেকে মাস্ক কিনতে পারছেন।

 

আগৈলঝাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ বখতিয়ার আল মামুন এ প্রসঙ্গে বলেন, আগৈলঝাড়া ও আশপাশ এলাকা হতদরিদ্র অধ্যুষিত, এখানে বেশী দাম দিয়ে মাস্ক কিনে ব্যবহার করা অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। তাই তার অল্প মূল্যের মাস্ক তৈরী ও সরবারহ ভাল একটি দিক। ডবল লেয়ার দিয়ে তৈরী করায় এটি স্বাস্থ্য সম্মত।