৯ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ বাস্তবায়নে কঠোর অর্থ মন্ত্রণালয়

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল বেসরকারি ব্যাংকের পরিচালকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স (বিএবি)। কিন্তু বাস্তবতা হলো বিএবির এ সিদ্ধান্ত মাত্র দু-একটি ব্যাংক বাস্তবায়ন করেছে।

বেশির ভাগ ব্যাংক এখনও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। তবে চলতি সপ্তাহে ব্যাংকগুলোর ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকগুলো শুধু শিল্প ঋণে ৯ শতাংশ সুদ নেবে। আর আমানতকারীদের তিন মাস মেয়াদে আমানতের সুদ দেবে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ। পর্যায়ক্রমে অন্য সব ক্ষেত্রে সুদহার কমানো হবে বলে জানিয়েছেন ব্যাংকাররা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংক ঋণ বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এ জন্য ইতোমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোকেও এটি বাস্তবায়নে বলা হয়েছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ নিয়েই শুধু আলোচনা হয়। কিন্তু এ খাতে যে অনেক বড় অর্জন আছে সেসব বিষয়ে কেউ নজর দেয় না।

সিনিয়র সচিব বলেন, এ খাতে আমানত সংগ্রহ, নতুন শাখা খোলা, অ্যাকাউন্ট খোলা, ঋণ বিতরণ, লভ্যাংশ প্রদান- এসব ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে গত দশ বছরে ৩০০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

এদিকে বিষয়টি বাস্তবায়নে দেশের সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে গত সোমবার বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে ব্যাংকার্স সভা নামক ওই সভায় ডেপুটি গভর্নরসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান বলেন, এক অংকে ঋণের সুদহার কার্যকর করতে কারও দ্বিমত নেই। এ ব্যাপারে সবাই ঐক্যবদ্ধ। কয়েকটি ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদের সভায় এরই মধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত করেছে। যেসব ব্যাংক এখনও চূড়ান্ত করেনি তারাও চলতি সপ্তাহেই পরিচালনা পর্ষদের সভায় চূড়ান্ত করবে।

তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো এখন থেকে সরকারি আমানত পাবে ৬ শতাংশ সুদে। সরকারি ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারি ব্যাংকে আমানত রাখতে এর বেশি সুদ দাবি করবে না। এতে ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতিতে শিল্পবান্ধব পরিবেশ, নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, কর্মসংস্থান ও আমদানি-রফতানি বাণিজ্য আরও গতিশীল করতে মূলত এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গত ২০ জুলাই ঋণের সুদহার এক অংকে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)। যা ১ জুলাই থেকে কার্যকরের কথা। তবে সেদিন ব্যাংক হলিডে থাকায় ২ জুলাই থেকে কয়েকটি ব্যাংক এটি কার্যকর করে।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক চায় ঋণের সুদহার এক অংকে নেমে আসুক। এটি কীভাবে কার্যকর করব সেই সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। তবে এটি কার্যকর করতে যাতে কোনো নৈরাজ্য বা অসুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি না হয় সেদিকে সজাগ থাকতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এ জন্য যদি ঋণ আমানতের নির্ধারিত হারে কিছুটা ছাড় দিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংক দেবে। যাতে কোনো ব্যাংককে শাস্তি বা জরিমানা না করা হয় সেটি অনুরোধ করেছে ব্যাংকের এমডিরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে।

সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, সুদহার পুনর্নির্ধারণে কিছুটা আমানত চলে যেতে পারে। সেটি বাংলাদেশ ব্যাংক সহনীয়ভাবে দেখবে। তবে সব ছাড় কেবল এক অংকে ঋণের সুদহার কার্যকর করার ওপরে। যদিও এটি রাতারাতি কার্যকর হবে না। সময় লাগবে। আমাদের কেউ কেউ সেটি শুরু করেছে। বাকিরাও শুরু করবে। সব ঋণের ক্ষেত্রে সিঙ্গেল ডিজিট করা হবে।

চলতি বছরের শুরু থেকে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টানাটানি শুরু হয়। সংকট থেকে বেড়ে যায় সব ধরনের ঋণ ও আমানতের সুদহার।

এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার ঘাটতি মেটাতে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। এর আগে সরকারি আমানতের মাত্র ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে রাখার বিধান ছিল।