৫ বছরের মধ্যে কুমিল্লা বোর্ডে সবচেয়ে কম পাসের হার, কী কারণ?

লেখক:
প্রকাশ: ১ বছর আগে

গত পাঁচ বছরের তুলনায় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে এসএসসিতে এবার পাশের সবচেয়ে কম। শুক্রবার (২৮ জুলাই) প্রকাশিত ফল বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে। বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাভাইরাস এই ফল বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।

জানা গেছে, ২০১৯ সালে এই বোর্ডে পাশের হার ছিল ৮৭ দশমিক ১৬, ২০২০ সালে কমে ৮৫ দশমিক ২২, ২০২১ সালে বেড়ে ৯৬ দশমিক ২৭, ২০২২ সালে ৯১ দশমিক ২৮ এবং এ বছর পাশের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশে। গত পাঁচ বছরের তুলনায় এ বছর শতভাগ পাসের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও কমেছে। এবার এসএসসিতে শতভাগ পাস করেছে মাত্র ৭৯ প্রতিষ্ঠানে।

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আগের চার বছরের কোনোবারই শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩২-এর নিচে নামেনি। এবার হলে পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল ৮২ জনের। যা গত তিন বছরের তুলনায় সবচেয়ে বেশি।

বিপর্যয়ের কারণ

কুমিল্লা দেশের অন্যতম সেরা শিক্ষাবোর্ড। রেজাল্টে এমন ধসের বিষয়ে জানতে চাইলে বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘করোনার প্রভাব শিক্ষা ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। দুই বছর করোনার কারণে পরীক্ষা হয়নি। গত বছর কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছে। এর মধ্যেও প্রশ্নপত্রে বড় পরিবর্তন ছিল। মাত্র তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে ৭০ নম্বর হারে নম্বর দেওয়া হয়েছে। সময়ও ছিল বেশি। এ বছর সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই শিক্ষার্থীরা করোনাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দূরে থাকাতে একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। এর মাঝেই সম্পূর্ণ সিলেবাসের পরীক্ষার কারণে ফলের এমন ধস। এটি ছিল করোনা সংকটের পর পূর্ণাঙ্গ প্রশ্নের পরীক্ষা।’

তিনি বলেন, ‘গণিতে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী ফেল করেছে। মানবিকে অন্যান্য বছরও ফেলের হার বেশি থাকে, এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।’

আগামী বছর এমন হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না- জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের সিলেবাস এমনভাবে সাজানো যদি কেউ এক ক্লাসের পড়াশোনায় গ্যাপ করে তো পরের বছর অবশ্যই সেই গ্যাপ পরিপূর্ণ করতে হয়। তা না হলে ফল খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। যেহেতু এই শিক্ষার্থীরা ৭ম ও ৮ম শ্রেণিতে করোনার প্রভাব পেয়েছে তাই ঝুঁকি থেকেই যায়।’

উত্তরণে উদ্যোগ

কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা আগে থেকেই সতর্ক। শিক্ষামন্ত্রী ও মন্ত্রণালয় থেকে সব বোর্ডে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত চাঁদপুর জেলা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী একটি সম্মেলন করেছেন। আমরা ক্রমান্বয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিয়ে বসবো। আমাদের বোর্ড চেয়ারম্যানও বিষয়টি নিয়ে তৎপর। আশা করি, সামনের পরীক্ষায় ফল আশানুরূপ হবে।’

উল্লেখ্য, এবারের এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সবচেয়ে বেশি পাস করেছে বিজ্ঞান বিভাগে, কম মানবিকে। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৮৪ ও মানবিকে ৬১ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এ ছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাস করেছে ৭৯ দশমিক ১১ শতাংশ শিক্ষার্থী। এ বছর জিপিএ-৫ ও পাসের হার দুটিই কমেছে। এ বছর কুমিল্লা বোর্ড থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এক লাখ ৮২ হাজার ৬৩৫ জন। পাস করেছে এক লাখ ৪৩ হাজার ২১৬ জন। ১১ হাজার ৬২৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১১ হাজার ৭১, ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ৩৯৩ ও মানবিক থেকে ১৫৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১৯ হাজার ৯৯৮ জন। পাসের হার ছিল ৯১ দশমিক ২৮ শতাংশ।

জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এবার সবচেয়ে বেশি পাসের হার বরিশালে আর কম সিলেটে।