বেলা ২টারও কিছু আগ থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আসতে থাকেন গত ৫ জুন যারা ১৬-১৮ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আজকের কাঙ্ক্ষিত টিকিট পেয়েছিলেন। আর যারা সেদিন টিকিট পাননি তারাও আজ বেশ আগেই এসে দাঁড়ানো টিকিট সংগ্রহ করছিলেন। তখন কমলাপুরে মানুষ আর মানুষ। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মেই মানুষ গিজগিজ করছিল।
কিন্তু রাজশাহীগামী সিল্কসিটি ট্রেনটি তখনও স্টেশনে এসে পৌঁছায়নি। যে ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল বেলা ২টা ৪০ মিনিটে। সেই ট্রেনট্রিই পুরো ৩ ঘণ্টা বিলম্বে বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটে ৭ নম্বর প্লাটফর্ম থেকে ছেড়ে যায়।
এতে চরম বিরক্তি আর বিড়ম্বনায় পড়তে হয় যাত্রীদের। এমন ভুক্তভোগী যাত্রীদের একজন মোতাসিম বিল্লাহ সোহান। তিনি বলেন, হায় বাংলাদেশ রেলওয়ে! ঈদে ঘরেফেরা মানুষদের একবার অগ্রিম টিকিটের জন্য ১৬-১৮ ঘণ্টা দীর্ঘলাইনে দাঁড়াতে হয়। এরপর আবার ঈদযাত্রার দিন ৩ ঘণ্টা ট্রেন লেট (বিলম্ব)। রমজান মাসে রোজা রেখে স্ত্রী সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে এর চেয়ে বড় বিড়ম্বনা আর হতে পারে না।
আরেক যাত্রী বেসরকারি চাকরিজীবী তহমিনা খাতুন সিল্কসিটি ট্রেনে করে একাই যাবেন রাজশাহী। আলাপকালে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতটা কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করেছিলাম কিন্তু আজ এই ভোগান্তি, প্রায় আড়াই ঘণ্টার বেশি হয়ে যাচ্ছে ট্রেন আসার কোনো নাম নেই। এটা তো এক ভোগান্তি, আরেক ভোগান্তি হলো ট্রেন লেট হওয়ার কারণে গভীর রাতে ট্রেনটি রাজশাহী পৌঁছাবে। তখন স্টেশন থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে নিজ উপজেলায় আমি কীভাবে যাবো। ঈদ আসলেই ঘরেফেরা মানুষদের চরমমাত্রায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হয়।
অগ্রিম টিকিট অনুযায়ী কমলাপুর স্টেশনে বৃহস্পতিবারের সকালে থেকেই বিলম্বিত ট্রেনযাত্রা শুরু হয়। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬ টা ২০ মিনিটে ছাড়ার কথা থাকলে তা ৭টা ২৫ মিনিটে স্টেশন ছেড়ে যায। এ ছাড়া ধূমকেতু এক্সপ্রেসেও নির্ধারিত সময়ের পরে ছেড়ে গেছে। সকাল ৮টার নীলসাগর এক্সপ্রেস কমলাপুর ছাড়ে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে। সকাল ৯টায় রংপুর এক্সপ্রেস ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও তা ছেড়ে যায় ১০ টা ১৫ মিনিটে। ১০টার পরিবর্তে দিনাজপুরগামী একতা এক্সপ্রেস ছেড়ে যায় সাড়ে ১০ টায়। এদিকে লালমণি ঈদ স্পেশাল ট্রেনটি সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টা ৩০ মিনিট নাগাদ স্টেশন ছেড়ে যায়। এ ছাড়া আরও কিছু ট্রেন নির্ধারিত সময়ের পর কমলাপুর ছাড়ে।
ঈদযাত্রার সার্বিক বিষয় নিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তি বলেন, আজ কমলাপুর থেকে সব মিলিয়ে ৬৯টি ট্রেন ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে কিছু ট্রেন ছাড়তে বিলম্বিত হয়েছে। তবে শিডিউল ঠিক রাখতে আমরা সার্বিক চেষ্টা করছি। অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে যাওয়া-আসার সময় স্টেশনে উঠানামা করতে যেখানে দুই মিনিট অপেক্ষা করার কথা সেখানে ৫-১০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে। এ কারণে কিছু ট্রেন পৌঁছাতেও একটু দেরি হচ্ছে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহকারীদের ঈদযাত্রা শুরু হয় গত ১০ জুন (রোববার) থেকে। আগামীকাল শুক্রবার (১৫ জুন) পর্যন্ত ট্রেনের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহকারীরা যাত্রা করবেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে নাড়ির টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিগত কয়েকদিনের তুলনায় সবচেয়ে বেশি ঘরমুখো মানুষ ছুটে গেছেন।