সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ব্রাজিল

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

একটি গোল সেমি অটোমেটেড অফসাইড টেকনোলজিতে বাতিল করে দেওয়া হলো। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই গোল এলো ৮৩তম মিনিটে। ম্যাচের মাত্র ৭ মিনিট বাকি থাকতে, ক্যাসেমিরোর পা থেকে।

এই একটিমাত্র গোলেই ইউরোপের শক্তিশালী দল সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ‘জি’ গ্রুপ থেকে দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করে নিয়েছে ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। টানা দুই ম্যাচ জিতে ব্রাজিলের পয়েন্ট ৬। সুইজারল্যান্ড এক ম্যাচ জিতে পয়েন্ট ৩।

সার্বিয়া এবং ক্যামেরুন ড্র করে দুই ম্যাচে পেয়েছে ১টি করে পয়েন্ট। শেষ ম্যাচে যদি ব্রাজিল হেরেও যায় এবং ক্যামেরুন সার্বিয়া জিতে যায়, তবুও তাদের পয়েন্ট হবে সর্বোচ্চ ৪ করে। সুতরাং, অন্তত ব্রাজিলকে পেছনে ফেলার আর সম্ভাবনা নেই।

ইনজুরির কারণে নেইমার খেলতে পারেননি। ছিলেন না ডিফেন্ডার দানিলোও। নেইমারহীন ব্রাজিল কেমন করে সেটাই ছিল দেখার। তারওপর সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে অতীত ইতিহাস ভালো নয়। বিশ্বকাপে ইউরোপের এই দেশটিকে কখনো হারাতে পারেনি সেলেসাওরা। গত বিশ্বকাপেও গ্রুপ পর্বে সুইসদের সঙ্গে ড্র করেছিল ব্রাজিল।

তবে স্টেডিয়াম ৯৭৪ এ- প্রথমার্ধে ব্রাজিলকে খুব একটা ভালো মনে হয়নি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে খেলেছে ব্রাজিল ‘ব্রাজিলের’ মতোই। বিশেষ করে রদ্রিগো, অ্যান্টোনি, গ্যব্রিয়েল হেসুসদের মাঠে নামানোর পর ব্রাজিলের খেলার ধরনটাই যেন পাল্টে যায়।

আগে থেকেই বারবার ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বল নিয়ে সুইজারল্যান্ডের বক্সের মধ্যে প্রবেশ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রিচার্লিসনের ফিনিশিংটা আজ ভালো না হওয়ায় গোলও আসছিল না। আগের ম্যাচের রিচার্লিসনকে আজ খুঁজে পাওয়া কঠিন ছিল। বরং, দুই উইংয়ে রাফিনহা এবং ভিনিসিয়ুস বারবার সুইসদের রক্ষণ ভাঙার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যর্থ হন তারা। গোল আদায় করতে পারছিলেন না।

 

যে কারণে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য। দ্বিতীয়ার্ধ শুরুর ১৫ মিনিট পর, ম্যাচের ৬০তম মিনিটে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র অসাধারণ একটি গোল করলেও রিচার্লিস অফসাইড ছিলেন। ভিএআরের মাধ্যমে সেই গোল বাতিল করে দেয়া হয়।

কিন্তু ৮৩তম মিনিটে ভিনিসিয়ুস সুইজারল্যান্ডের দু’তিনজন ফুটবলারকে কাটিয়ে বল পাস দেন রদ্রিগোকে। চলন্ত বলে আলতো ফ্লিক। বল চলে যায় বক্সে দাঁড়ানো ক্যাসেমিরোর কাছে। বলকে না থামিয়েই দুর্দান্ত এক প্লেসিং শট নেন ক্যাসেমিরো। চোখের পলকে গিয়ে সেটি আশ্রয় নেয় সুইজারল্যান্ডের জালে।

ম্যাচের পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে প্রাধান্য বিস্তার করেই খেলেছে ব্রাজিল। ৫৪ ভাগ বল ছিল তাদের দখলে। ৪৬ ভাগ ছিল সুইজারল্যান্ডের দখলে।

ম্যাচের প্রথম থেকেই প্রাধান্য বিস্তার করে খেলছিলো ব্রাজিল। অথচ, প্রথমার্ধে একের পর এক আক্রমণ করেও সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে গোল বের করতে পারেনি ব্রাজিল।

ম্যাচের ১৩তম মিনিটে পাকুয়েতার ক্রস থেকে বল পেয়ে গিয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু তিনি একজন কাটিয়ে বক্সের মধ্যে বল ভিনিসিয়ুসকে দিলে তার আগেই ক্লিয়ার করে দেন সুইজারল্যান্ডের এক ডিফেন্ডার। এর কিছুক্ষণ পরই আরও একবার বল পেয়েছিলেন রিচার্লিসন। কিন্তু বক্সের মধ্যে বলটিকে নিয়ন্ত্রনে নিতে ব্যর্থ হন।

১৬তম মিনিটে বক্সের সামনে ফ্রি-কিক পায় সুইজারল্যান্ড। কিন্তু ফ্রি-কিক কাজে লাগাতে পারেনি তারা। ১৯তম মিনিটে বাম পাশ থেকে দুর্দান্ত ক্রস দেন পাকুয়েতা। কিন্তু রিচার্লিসন সেখানে পায়ে বল লাগাতে ব্যর্থ হন এবং নিশ্চিত গোল বঞ্চিত হলো ব্রাজিল।

২৭ তম মিনিটে ডান পাশ থেকে অসাধারণ একটি ক্রস করেছিলেন রাফিনহা। বাম পাশে ভিনিসিয়ুস গোলের অসাধারণ এক সুযোগ পেয়েছিলেন। সামনে শুধু ছিল সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষক। কিন্তু ভিনিসিয়ুসের শটটি ছিল দুর্বল এবং সুইজল্যান্ড গোলরক্ষক দারুণ ক্ষিপ্রতায় নিশ্চিত গোল থেকে দলকে রক্ষা করেন।

৩১তম মিনিটে বক্সের সামনে থেকে বাম পায়ের শট নেন ব্রাজিলের এক খেলোয়াড়। কিন্তু গোলরক্ষকের হাতে সরাসরি বল। গোল থেকে দলকে রক্ষা করেন সুইস গোলরক্ষক।

৩৭তম মিনিটে বক্সের সামনে থেকে গোললক্ষ্যে শট করেছিলেন মার্কুইনহোস। কিন্তু সুইস ডিফেন্ডাররা কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। ৩৮তম মিনিটে গোলরক্ষকের কারণে রক্ষা পায় সুইজারল্যান্ড।

৩৯তম মিনিটে গোলের দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিলো সুইজারল্যান্ড। বক্সের মধ্যে ভার্গাস বল পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি। অ্যালিসন ঝাঁপিয়ে পড়ে বল ধরে ফেলেন।

৫৩তম মিনিটে গোলের দারুণ এক সুযোগ তৈরি করেছিলো সুইজারল্যান্ড। কিন্তু ভিনিসিয়ুস জুনিয়র ঝাঁপিয়ে পড়ে গোল থেকে দলকে রক্ষা করেন।

৬০ মিনিটে গোল্ডেন সুযোগ পেয়েছিলো ব্রাজিল। ভিনিসিয়ুস জুনিয়র বাম পাশ থেকে দারুন একটি ক্রস দিয়েছিলেন। কিন্তু রিচার্লিসন সময়মতো বলে পা লাগাতে ব্যর্থ হন। বলে পা লাগলেই সুইজারল্যান্ডের জালে বল জড়িয়ে যেতো।

৬৫ মিনিটে ক্যাসেমিরোর পাস থেকে বল পেয়ে অসাধারণ একটি গোল করেন ভিনিসিয়ুস। কিন্তু শেষে সেমি অটোমেটেড অফসাইড টেকনোলজিতে গোলটি বাতিল করে দেয় ভিএআর।

৮৩তম মিনিটে এলো সেই কাঙ্খিত গোল। ৮৭তম মিনিটে ছোট বক্সের সামনে থেকে রদ্রিগোর একটি শট পাঞ্চ করে ঠেকিয়ে দেন সুইজারল্যান্ড গোলরক্ষক সমার। এরপরও গ্যাব্রিয়েল হেসুস, রদ্রিগো এবং অ্যান্টোনি বেশ কয়েকটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেননি।