সি‌টি ব্যাংক-‌বিকাশ ডি‌জিটাল ক্ষুদ্র ঋণ চালু

লেখক:
প্রকাশ: ৩ years ago

সি‌টি ব্যাংক-বিকা‌শের যৌথ প‌রিচালনায় ডি‌জিটাল নতুন উদ‌্যোগ ন্যা‌নো লোন, ডি‌জিটাল কর্মকা‌ণ্ডে এক যুগান্তকারী কা‌জের সূচনা ক‌রে‌ছে। এ‌টি সি‌টি ব্যাংক ও বিকা‌শের এক‌টি সাহসী উ‌দ‌্যোগ। এর মাধ্য‌মে দে‌শে বিরাট অর্থ‌নৈ‌তিক ভূ‌মিকা রাখ‌তে পার‌বে ব‌লে ম‌নে ক‌রেন বক্তারা।

বুধবার (১৫ ডি‌সেম্বর) রাজধানীর এক‌টি হো‌টে‌লে সি‌টি ব্যাংক ও বিকা‌শের যৌথ উদ‌্যোগে শুরু হ‌ওয়া বিকাশ গ্রাহক‌দের জন্য ন্যা‌নো লোন উদ্বোধনী অনুষ্ঠা‌নে এসব কথা ব‌লেন বক্তারা।

স্বাগত বক্ত‌ব্যে সি‌টি ব্যাং‌কের ব্যবস্থাপনা প‌রিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মশরুর আরে‌ফিন ব‌লেন, ‘সিটি ব্যাংকের ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া আছে। যার ১৭ হাজার কর্পোরেট ও ১৩ হাজার আছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ব্যক্তিগত খাতে। নতুন করে আজ চালু হওয়া সিটি ব্যাংক-বিকাশ ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প থেকে অতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত কাজেও বিকাশ গ্রাহকরা বিনা জামানতে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে এই ক্ষুদ্র ঋণ নিতে পারবেন।’

সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা এই প্রকল্পের মাধ্যমে নেওয়া যাবে বলেও জানান সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

তিনি বলেন, ‘এই ক্ষুদ্র ঋণ সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে গ্রাহককে পরিশোধ করতে হবে। তবে যে কেউ চাইলে এই ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণের পর থেকে যে কোনো সময়ের মধ্যে তা শোধ করতে পারবেন। যতদিন পরে শোধ করবেন, কেবল ততদিনের জন্য তাকে ইন্টারেস্ট দেওয়া লাগবে। ক্ষুদ্র এই ঋণ পেতে সার্ভিস চার্জ বাবদ মাত্র ০.৫ শতাংশ এবং ইন্টারেস্টের হার ৯ শতাংশ।’

বিকা‌শের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কামাল কা‌দের সিটি ব্যাংকসহ বিকাশের যেসব কর্মীরা এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য নিরলস কাজ করেছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব‌লেন, ‘মোবাইল প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকদের লেনদেন সহজ ও কম খরচে করাই বিকাশের অন্যতম লক্ষ্য। ২০২০ সালে বিকাশের মাধ্যমে ৬৭ বিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়েছে। সরকারের টাকার ডিজিটাল রূপই হচ্ছে এই ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০১০ সালে কাজ শুরু করে ২০১১ সালে সর্ব সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয় বিকাশ অ্যাপটি। বিকাশ গত ১০ বছর ধরে গ্রাহকদের বিভিন্ন সুবধা দিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার সিটি ব্যাংকের সঙ্গে যৌথভাবে ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পটি চালু করেছে। যার মাধ্যমে খুব সহজে সাধারণ মানুষ, ছোট ছোট ব্যবসার জন্য ঝামেলাহীন এই প্রকল্প থেকে বিকাশের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করতে পারবেন। এই প্রকল্প একদিন বিকাশের লেন-দেনের মতো সফল ডিজিটাল প্লাটফর্ম হবে।’

সি‌টি ব্যাং‌কের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার তার বক্ত‌ব্যে ব‌লেন, ‘স্বাধীনতার পর যে দেশকে বলা হতো ‘তলা বিহীন ঝুড়ি’, আজ সেই আমরাই অর্থনৈতিক অবস্থানের দিক থেকে সারাবিশ্বে ৩২তম অবস্থানে আছি। তার সামান্য অংশিদার সিটি ব্যাংক। দেশের সীমা ছাড়িয়ে আমরা এখন হংকং ও মালয়েশিয়ায় আমাদের অপারেশন পরিচালনা করছি।’

তিনি ব‌লেন, ‘৩৬ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ২১০০ কোটি টাকার মাইক্রো ক্রেডিট ব্যবসা রয়েছে সিটি ব্যাংকের। আমাদের লক্ষ্য, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এটাকে পাঁচ হাজার কোটিতে পৌঁছানো। সিটি ব্যাংক তার কর্মকাণ্ডের জন্য ডিজিটাল পুরষ্কার পেয়েছে। ব্যাংকিং খাতে অন্য অনেক সফলতার মতো বিকাশের হাত ধরে আগামীতে এই ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পটিতেও আমরা সফল হবো।’

বাংলা‌দেশ ব্যাং‌কের ডেপু‌টি গভর্নর আবু ফরাহ মো. না‌ছের ব‌লেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পরও অনেক ব্যাংক প্রথমে ১০ টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে রাজি হয়নি। অথচ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাবে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৪৩ লাখে। আর তাদের অ্যাকাউন্টে জমা আছে আড়াই হাজার কোটি টাকারও বেশি। দেশের অর্থনৈতিক খাতে সিটি ব্যাংক-বিকাশের ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প একদির আমাদের আর্থিক খাতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।’

প্রধান অতিথির বক্ত‌ব্যে তথ্য ও যোগা‌যোগ প্রযু‌ক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ‌মেদ পলক ব‌লেন, ‘বিজয়ের মাসে এরকম একটি যুগান্তকারী ডিজিটাল প্রকল্প চালু করার জন্য সিটি ব্যাংক এবং বিকাশ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। এর মাধ্যমে ডিজিটাল কার্যক্রমে সাফল্যের আরেকটি পালক যুক্ত হলো। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে ১৭ কোটি মানুষ এর সুফল ভোগ করছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রযুক্তির ব্যবহার ও এর সুফল ভোগের রূপকার এবং প্রধানমন্ত্রীর আইটি বিষয়ের উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শক্রমে দেশ ডিজিটাল ক্ষেত্রে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান এবং ই-কমার্স ডিজিটাল নিয়ে প্রায় ৬ লাখ তরুণরা কাজ করছে। বিকাশ গত ১০ বছর ধরে দেশে ডিজিটালি বিরাট ভূমিকা রেখেছে। বিকাশের মতো আরও অন্তত ৫০০ ডিজিটাল স্টার্ট আপ কোম্পানিও কাজ করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, সিটি ব্যাংক ও বিকাশের এই ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্প আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সারা দেশের স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত হবে। ডিজিটালি আরও লাখ লাখ মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা হবে। আশা করছি, এই ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের মতো অন্য অনেক প্রতিষ্ঠানও এমন সাহসী উদ্যোগ নিয়ে ডিজিটালি এগিয়ে আসবে। সিটি ব্যাংক ও বিকাশের সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই।’