ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক)।
শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) রায়েরবাজার সাদেকখান রোডে আ. লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্যাডারদের সশস্ত্র মহড়ার ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিক মোস্তাফিজুর রহমান সুমনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। তিনি আগামী নিউজ ২৪.কম নামক একটি অনলাইন পোর্টালে কাজ করেন। সুমনকে শিকদার মেডিকেলে নেওয়ার পরে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
একই সময় নিকুঞ্জতে জানে আলম স্কুল কেন্দ্রে বার্তা সংস্থা পিবিএর বিশেষ প্রতিনিধি জিসাদ ইকবালও আক্রমণের শিকার হন। গুরুতর জখম হন তিনি। তার ক্যামেরা ভাংচুর করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অন্যদিকে, রাজধানীর গেন্ডারিয়ার সকাল ১০টার দিকে ফরিদাবাদে মাদ্রাসার ভোটকেন্দ্রে বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদক মাহবুব মমতাজী, ডেইলি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের প্রতিবেদক নূরুল আমিন ছাত্রলীগের মারধরের শিকার হন। গেন্ডারিয়ার ঘটনার ৩০ মিনিট পরেই হামলার শিকার হন অনলাইন নিউজ পোর্টাল পরিবর্তন.কমের ফটোসাংবাদিক ওসমান আলী। টিকাটুলির কামরুন্নাহার গালর্স হাইস্কুল কেন্দ্রে পুলিশ ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের ছবি তুলতে গিয়ে হামলার শিকার হন তিনি।
এ তো গেল প্রকাশ্যে আসা গতকালের সিটি নির্বাচনে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা। এরকম হাজারো হামলা, মামলা, নির্যাতন প্রতিনিয়ত চলছে বাংলাদেশের সাংবাদিকদের ওপর।
গণমাধ্যমে পাঠানো বনেকের এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার সাংবাদিকদের নিরাপত্তা প্রদানে পুরোপুরি ব্যর্থ। এ দেশের সাংবাদিকরা বরাবরই অবহেলিত। আর এই হামলার দায় পুরোপুরি সরকারকে নিতে হবে।
বনেক আশঙ্কা প্রকাশ করে জানায়, এ ধরনের প্রথা চলতে থাকলে দেশের সাংবাদিকরা নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। সাংবাদিকদের ওপর হামলার হওয়ার পর বরাবরই দেখা যায় সরকার নানা রকম আশ্বাস প্রদান করেন এবং বিচারের কথা বলেন। কিছুদিন পরই সেসব হারিয়ে যায় কালের বিবর্তনে।
এ বিষয় কথা হয় বনেকের সভাপতি খায়রুল আলম রফিকের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাংবাদিকরা যাতে স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া রাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেমন এ দেশের উন্নয়ন চায় তেমনি সাংবাদিক সমাজও। সাংবাদিকরা দেশের বাইরের কেউ নন। তাহলে সবার মতো সাংবাদিকদেরও নিরাপত্তা বিধানে রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া আহত সাংবাদিকদের দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে।
বনেকের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আসাদ সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশের প্রায় বিভিন্ন নির্বাচনে সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে রক্তাক্ত আহত কিংবা পঙ্গুত্ববরণ করতে হচ্ছে। এ ধরনের প্রথা চলতে থাকলে দেশের সাংবাদিকরা নির্বাচনকালে দায়িত্ব পালনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। আইনের দীর্ঘসূত্রিতা, জটিল বিচারিক প্রক্রিয়া সেইসঙ্গে রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না থাকার কারণে সাংবাদিক নির্যাতন ও সহিংসতা থামানো যাচ্ছে না। সাংবাদিকদের স্বার্থ রক্ষায় সক্রিয় কোনো প্ল্যাটফর্ম না থাকায় এই পেশা দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাংবাদিক নির্যাতনের মামলাগুলো দিনের পর দিন ঝুলিয়ে রাখা হয়। একের পর এক তারিখ পড়তে থাকে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংক্রান্ত আইনগুলোয় সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা সেভাবে বলা নেই। এ কারণে তারা দ্রুত বিচার পান না। এছাড়া তাদের কোনো সাপোর্ট সিস্টেম নেই যারা তাদের এসব সমস্যা নিয়ে কথা বলবে।
এ দিকে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় না আনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বনেকের সিনিয়র সহ সভাপতি তাজবীর হোসাইন সজীব। তিনি বলেন, যেখানে প্রকাশ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং হামলাকারীরা চিহ্নিত সেখানে অপরাধীরা এখনো দ্রুত আইনের আওতায় না আসায় বিস্ময় প্রকাশ করছি। আশা করছি খুব দ্রুতই তারা আইনের আওতায় আসবে। সাথে হামলায় আহত সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান করছি।