নেইমার জুনিয়রের অনন্য ড্রিবলিং অসাধারণ কারিকুরি ভিনিসিয়াস জুনিয়রের গতি আর ডিফেন্স চেরা পাস রিচার্লিসনের চোখ ধাঁধানো মন জুড়ানো অ্যাক্রোবেটিক ভলি সাম্বার তালে তালে সার্বিয়ানদের ফাঁকি দেওয়া যেন মনে করে দিয়েছে সেই ব্রাজিলকে। জাগো বনিতার ব্রাজিল তথা সুন্দর ফুটবলের ব্রাজিলকে।
কাতারের ঐতিহাসিক লুসাইলে বিশ্ব র্যাংকিংয়ে ২১ নম্বরে থাকা সার্বিয়াকে বৃহস্পতিবার রাতে ২-০ গোলে হারিয়েছে ব্রাজিল। ম্যাচের ৬২ ও ৭৩ মিনিটে দুটি গোলই করেছেন রিচার্লিসন। শেষ বিশটি বিশ্বকাপে ব্রাজিল কখনো প্রথম ম্যাচে হারেনি। ১৯৩৪ সালে স্পেনের বিপক্ষে সবশেষ হেরেছিল ৩-১ গোলে। স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সার্বিয়া বিশ্বকাপে তাদের ১০ ম্যাচের ৮টিতেই হেরেছে।
মিশন হেক্সায় ব্রাজিলের এমন শুরুর রাতে আছে অস্বস্তিকর ঘটনাও। এই ম্যাচে চলতি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত হওয়া ম্যাচগুলোর মধ্যে নেইমার সবচেয়ে বেশি ৯ বার ফাউলের শিকার হয়েছেন। দ্বিতীয়ার্ধে ডিফেন্ডার মিলেনকোভিচের বাজে ফাউলের শিকার হন। মাঠ ছাড়ার পর বেঞ্চে বসে চোখে জল ফেলতেও দেখা গেছে। এতেই জেগেছে ইনজুরির শঙ্কা। গোড়ালিতে আঘাত পেয়েছেন ব্রাজিলের এই সুপারস্টার।
প্রথমার্ধে সার্বিয়ান ডিফেন্সে আটকা ছিল ব্রাজিল। নেইমার কিংবা ভিনিসিয়াস ডি বক্সে এসে আটকে যাচ্ছেন। যাচ্ছেন বললে ভুল হবে সার্বিয়ান ডিফেন্ডারদের নিখুঁত ট্যাকেলে ব্রাজিলের আক্রমণ নষ্ট করে দিচ্ছে। প্রথমার্ধ খুব একটা ভালোও খেলেনি ব্রাজিল। বারবার বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। ৪৫ মিনিটে ৪টি আক্রমণ করেছে ব্রাজিল, ভিনিসিয়াস-রাফিনহা সুযোগ নষ্ট করেছেন। অন্যদিকে সার্বিয়া বারবার উঠে আসলেও আক্রমণ করে মাত্র ১টি।
দ্বিতীয়ার্ধে ধীরে খোলস ছাড়িয়ে বের হতে থাকে ব্রাজিলিয়ানরা। আক্রমণের পসরা সাজিয়ে বসে সার্বিয়ান ডিফেন্সে। একের পর এক আক্রমণ প্রথমার্ধে দেয়াল হয়ে থাকা সার্বিয়ায়ন ডিফেন্সকে ভেঙে চুরমার করে দেন ভিনিসিয়াস-রাফিনহারা। তারই ফলের পুরষ্কার আসে ৬২ মিনিটে।
বাঁ দিকে ডি বক্সের একটু সামনে বল পান নেইমার। অসাধারণ কারিকুরিতে ঢুকে যান ডি বক্সে। তার পা থেকে আসা আসা বল পাশেই থাকা ভিনিসিয়াস বাঁ দিক থেকে কোনাকুনি শট নেন। রুখে দেন সার্বিয়ান গোলরক্ষক। কিন্তু বল হাতে লেগে ফিরে আসে, সামনেই থাকা রিচার্লিসন আলতো টোকায় জালে জড়িয়ে দেন।
১১ মিনিট পরই লুসাইলে হলুদের উৎসবে দিগুণ মাত্রা যোগ করেন সেই রিচার্লিসন। এবারও গোলের পেছনে আছে ভিনির নাম। ডী বক্সের বাঁ কোনায় বল পেয়ে ডিফেন্স চেরা আলতো শটে মাঝে পাঠান। রিচার্লিসন দুর্দান্ত দক্ষতায় বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হালকা উপরে তোলেন। এরপর অ্যাক্রোবেটিক ভলিতে শূন্যে ভেসে বুলেট গতির শটে জড়ান জালে।
অথচ প্রথমার্ধে সার্বিয়ার ডি বক্সে বারবার আক্রমণ নষ্ট হওয়ায় ব্রাজিল যেন ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিল না। ৯ মিনিটে ক্যাসিমোরার পাসে আক্রমণের চেষ্টা করেন নেইমার। কিন্তু সার্বিয়ান ডিফেন্সের সমুদ্রে ব্যর্থ হয় সেটি। ১৩ মিনিটে সেই নেইমারের অসাধারণ কর্নার কিকে এগিয়ে যেতে পারতো ব্রাজিল। গোলরক্ষকের কৃপায় হয়নি।
২৮ মিনিটে থিয়াগো সিলভা দারুণ একটি পাস দেন ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে। বাঁ দিক দিয়ে দ্রুতগতিতে ঢুকছিলেন ভিনিসিয়াস। কিন্তু গোলরক্ষক দুর্দান্ত ডাইভে রুখে দেন। ৩৩ মিনিটে নেইমারকে রুখে দিলেন সার্বিয়ান ডিফেন্ডার। অল্পের জন্য সুযোগ হারালেন। ২ মিনিট পরেই রাফিনহার শটও আটকে দেন গোলরক্ষক।
৪৫ মিনিটে এক সার্বিয়ান ডিফেন্ডারকে ফাঁকি দিয়ে একাই বল নিয়ে চলে গিয়েছিলেন রাফিনহা। সামনে শুধু ছিল গোলরক্ষক। সোজাসুজি মারা রাফিনহার শটে কোনো জোর ছিল না। গোলরক্ষকের উরুতে লেগে ফিরে আসে। নিজেই অবাক হন রাফিনহা। ৬০ মিনিটে ৩০ গজ দূর থেকে সান্দ্রোর বাঁ দিকের শট বারে লেগে ফিরে আসে।
৮১ মিনিটে ডি বক্সের একটু সামনে বল পেলেন ক্যাসিমোরা। দেরি না করে ডান পা দিয়ে বাম দিকে কোনাকুনি শট করেন। গোলরক্ষক ঝাঁপিয়ে পড়েও ধরতে পারেননি। কিন্তু বল ফিরে বারে লেগে। এই সহজ সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে কিংবা নিশ্চিত গোলগুলো হলে ব্রাজিলের জয়ের ব্যবধানও বাড়তো।
প্রথমার্ধে চারটি আক্রমণ করা ব্রাজিল দ্বিতীয়ার্ধে করেছে ১৮টি! অন টার্গেট শট ছিল মোট ৮টি। ৫৯ শতাংশ সময় বল ছিল নিজেদের পায়ে। প্রথমার্ধে ২০১০ বিশ্বকাপ থেকে আর কোনো বিশ্বকাপে এত কম আক্রমণ করেনি ব্রাজিল। দ্বিতিয়ার্ধে হয়েছে উলটোটা।
জি গ্রুপ থেকে প্রথম ম্যাচে সার্বিয়া-ক্যামেরুনের বিপক্ষে জয় পেয়েছে ব্রাজিল-সুইজারল্যান্ড। গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকায় ৩ পয়েন্ট নিয়ে ব্রাজিল আছে সবার উপরে। সমান পয়েন্ট নিয়ে সুইসরা আছে দ্বিতীয় স্থানে। পরের দুটি স্থান যতাক্রমে ক্যামেরুন ও সার্বিয়ার। জাগো বনিতা ধরে রাখতে পারবেতো সেলেসাওরা? বেশি না, আর মাত্র ৬ ম্যাচ!