মোহাম্মদ আলী হোসেনঃ এইতো সেদিন লুসি হল্টের চোখেমুখে কী ভীষণ চিন্তা ভর করছিলো! এদেশে রয়েছেন প্রায় ছয় দশক হল। কিন্তু এ পর্যন্ত কোন মানুষ তাঁকে ভিসার ব্যাপারে কোনভাবেই সহযোগিতা করতে পারেনি। নিজে থেকেছেন ছোট্ট একটা কুড়েঘরের মত একটা চিলেকোঠায়। সেখানে কোন সাধারণ জীবনযাপনের উপকরণ তো নেই ই। আর জীবন যাপনের আধুনিক সুযোগ সুবিধা তো চিন্তা করাই মুশকিল। তাই ভীষণরকম সাধাসিধে তাঁর জীবন। এত কিছুর পরেও এ দেশকে ভালবেসে থেকে গেছেন বছরের পর বছর। কোন দিন কারো কাছে কোন অনুযোগও করেন নি। চাইলেই তিনি আরাম আয়েশে নিজ মাতৃভূমে থাকতে পারতেন দিব্যি কিন্ত ওই ভালবাসা যে কোন বাধা মানে না। তাইতো, এদেশের মায়ায় আটকে ছিলেন গত ৫৭টি বছর ধরে। আঁকড়ে ধরে রেখেছেন আমাদের এ দেশের মাটি, স্বপ্ন দেখেছিলেন এ দেশের একজন হবেন, মৃত্যুর পরও থাকতে চেয়েছেন এ দেশেরই মাটিতে। কতটা আবেগ থাকলে একটা দেশকে এভাবে ভালবাসা যায়, সেটি নিশ্চয়ই অনুমেয়।
যাক মূল লেখায় প্রবেশ করা যাক। ব্রিটিশ নাগরিক লুসি হল্টকে সর্বপ্রথম জনসম্মুখে আনেন ডিবিসি নিউজের রিপোর্টার অপূর্ব অপু দা। এরপর, আসলে সবাই লুসি হল্ট সম্পর্কে কমবেশি অবগত। তৎকালীন ডিসি বরিশাল গাজী মোঃ সাইফুজ্জামান স্যার লুসি হল্টের ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহ দেখান এবং তার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেন। এবং আশ্বাস দেন যে, তিনি লুসি হল্টের ভিসা নবায়নের জন্য যে ৩৮ হাজার টাকার প্রয়োজন হত সেটা যেন অন্তত না লাগে, সে ব্যাপারে যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন, পরবর্তীতে ডিসি বরিশালের বদলি হবার পরে ব্যাপারটা আবার অনেকটা লোকচক্ষুর অন্তরালেই চলে যাবার উপক্রম হয়। পরবর্তীতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এর রিজিওনাল ম্যানেজার দিপু হাফিজুর রহমান ভাই এতদসংশ্লিষ্ট একটি ফেসবুক পোস্ট করেন যেটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব জনাব মোঃ শফিকুজ্জামান স্যার-এর ভীষণরকম দৃষ্টি কাড়ে। পরে তিনি এ বিষয়ে আরো খোঁজ খবর নিয়ে লুসির বিষয়ে সাধ্যের মধ্যে কিছু করার ইচ্ছে ব্যক্ত করেন।
এরপর দিপু হাফিজুর রহমান ভাই, প্রতিভা শারমিন নিটোল, নয়ন মাকসুদ ভাইসহ আরো অনেকের পারস্পরিক সহযোগিতায় মোঃ শফিকুজ্জামান স্যারসহ আরো অনেক সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দের মাধ্যমে প্রথমে ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে ১৫ বছরের মাল্টিপল ভিসাসহ পাসপোর্টটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে লুসি গ্রহণ করেন এবং দ্বৈত নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত থাকে। অবশেষে ৩১ মার্চ, ২০১৮ তারিখে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব সনদ বুঝে পান জনাব লুসি হল্ট। লুসিকে গণমানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে মাল্টিপল ভিসা এবং পরিশেষে নাগরিকত্ব সনদ হাতে বুঝিয়ে দেওয়া পর্যন্ত অসংখ্য সরকারি, বেসরকারি ও সাধারণ মানুষের প্রয়াস রয়েছে। যাঁরাই এ ব্যাপারটায় অর্থাৎ কার্যপ্রণালীতে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে জড়িত ছিলেন তাঁদেরকে এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনাকে বিশেষভাবে অভিনন্দন, কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ভালবাসা।
লুসি আজ বাংলাদেশের নাগরিক, লুসিকে হয়তো আমরা তার ভালবাসার প্রতি সামান্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পেরেছি, হয়েছি দায়মুক্ত। যে দায়মুক্তিতে রয়েছে অনেক সুদীর্ঘ পথ। এ পথের প্রতিটি যাত্রীর আন্তরিক প্রচেষ্টা আজ সফল। এ মানুষগুলো আজ যে কত খুশি, কতটা আনন্দিত তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যায় না, কোন লেখনীতে তুলে ধরা যায় না, যায় না ছন্দবন্ধ কোন কবিতায় উপস্থাপন করা।