রিফাত হত্যা: ৩ জনের আপিল শুনবেন হাইকোর্ট, জরিমানা স্থগিত

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসমির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আসামিদের জরিমানা আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত করেছেন।

 

 

এদিকে রিফাতের স্ত্রী মিন্নির আপিল শুনানির জন্য গ্রহণের আবেদন আগামী রোববার আদালতে তার আইনজীবীরা উপস্থাপন করবেন বলে জানা গেছে।

 

 

তবে ছয় আসামির মধ্যে বাকি দুই আসামি আপিল করলেও তাদের বিষয়ে কোনো আদেশ হয়েছে কিনা তার তথ্য পাওয়া যায়নি।

 

 

বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১৩ অক্টোবর তিন আসামির পৃথক আবেদনে আদেশ দেন।

 

তিন আসামি হলেন- আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বী আকন, মো. হাসান এবং মো. রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়।

 

এ তিন জনের আপিল অ্যাডমিটেড (শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন)। পাশাপাশি আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতের দেওয়া জরিমানা স্থগিত করেছেন।

 

 

মিন্নির আইনজীবী মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম জানিয়েছেন, তারা এই আদালতে রোববার আপিলটি উপস্থাপন করবেন।

 

বাকি দুই আসামি মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত ও রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজীর আপিল করার তথ্য জানা গেলেও কোনো আদেশ হয়েছে কিনা তা জানা যায়নি।

 

গত ৩০ সেপ্টেম্বর বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

 

 

রায়ে প্রাপ্ত বয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি ৬ আসামিকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানার দণ্ডেও দণ্ডিত করেন। বাকি ৪ জনকে খালাস দেওয়া হয়।

 

 

পরে নিয়ম অনুসারে ৪ অক্টোবর ছয় আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে পৌঁছে। পাশাপাশি ৬ অক্টোবর মিন্নিসহ অন্য আসামিরা আপিল করে।

 

আইনজীবীরা জানান, ফৌজদারি মামলায় বিচারিক আদালত যখন আসামিদের মৃত্যুদণ্ড দেন তখন ওই দণ্ড কার্যকরের জন্য হাইকোর্টের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়।

 

এজন্য সংশ্লিষ্ট বিচারিক আদালত ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মোতাবেক মামলার সকল নথি হাইকোর্টে পাঠিয়ে দেন।

 

 

যা ডেথ রেফারেন্স নামে পরিচিত। ওই নথি আসার পর হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংশ্লিষ্ট মামলার পেপারবুক প্রস্তুত করে। পেপারবুক প্রস্তুত হলে মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

 

 

তবে কোনো কোনো মামলার ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পেপারবুক তৈরি করা হয়।

 

 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— মো. রাকিবুল হাসান রিফাত ওরফে রিফাত ফরাজী, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বী আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজোয়ান আলী খাঁন হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি।

 

 

খালাস পেয়েছেন— মো. মুসা (পলাতক), রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।

 

 

২০১৯ সালের ২৬ জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বরগুনা সরকারি কলেজ রোডের ক্যালিক্স একাডেমির সামনে স্ত্রী মিন্নির সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ড ও রিফাত ফরাজীর সহযোগীরা।

 

 

গুরুতর অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিফাত মারা যান।

 

 

এরপর রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ডকে প্রধান আসামি করে ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরও পাঁচ/ ছয়জনের বিরুদ্ধে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রথমে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করেছিলেন নিহত রিফাতের বাবা।

 

 

পরে ২ জুলাই ভোরে জেলা সদরের বুড়িরচর ইউনিয়নের পুরাকাটা ফেরিঘাট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রধান আসামি নয়ন বন্ড (২৫) নিহত হন।

 

 

হত্যাকাণ্ডের ২০ দিন পর ওই বছরের ১৬ জুলাই মিন্নিকে তার বাবার বাসা থেকে বরগুনা পুলিশ লাইনে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

 

 

পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ হত্যায় তার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে মনে হওয়ায় ওইদিন রাতেই মিন্নিকে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ।

 

 

পরে একই বছরের ২৯ আগস্ট হাইকোর্ট মিন্নিকে জামিন দেন। ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক, দুইভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন রয়েছেন।

 

গত ১ জানুয়ারি প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। পরে সাক্ষ্যগ্রহণ, যুক্তিতর্ক শেষে ৩০ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়।

 

বিচার শেষে গত ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জনের বিষয়ে রায় ঘোষণা করেন বরগুনা জেলা নারী ও শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান।

 

রায়ে ছয়জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড, চারজনকে পাঁচ বছর এবং একজনকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। বাকি তিনজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।