যে কারণে সরে দাঁড়ালেন এসআই আকবরের আইনজীবী

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত মো. রায়হান আহমদ হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত পুলিশের বহিষ্কৃত এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার পক্ষে ওকালতি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার নিযুক্ত আইনজীবী মো. মিসবাউর রহমান আলম। মানুষের বিরূপ মন্তব্য ও বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতে এই মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী।

বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) আলোচিত এই মামলা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির এই সদস্য।

শুক্রবার (২৫ ডিসেম্বর) বিকেলে অ্যাডভোকেট মো. মিসবাউর রহমান আলম বলেন, ‘অর্থ প্রাপ্তি নয় বরং পেশাগত দায়িত্ববোধ থেকেই আমি এই মামলাটি গ্রহণ করেছিলাম। হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের মামলাটি আমার কাছে ছিল একেবারেই নতুন ধরনের এবং চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু কেবল আমাকে নিয়ে নয়, আমার সিনিয়র আইনজীবী এবং আমার পরিবার নিয়েও অনেকে বাজে মন্তব্য করেছেন। যা অনভ্রিপ্রেত ও অনাঙ্ক্ষিত। আমিসহ আমার পরিবারকে যাতে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে না হয় তাই এই মামলা থেকে সড়ে দাঁড়িয়েছি।’

এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর আকবরের পক্ষে আইনি লড়াই চালানোর জন্য ওকালতনামা জমা দেন তিনি। তখন এই আইনজীবী বলেছিলেন, ‘আইনি সহায়তা পাওয়া একজন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। তাই আমি আকবরের পক্ষে আদালতে লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

রায়হানের মৃত্যুর পর তার বাড়িতে গিয়ে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা জানিয়েছিলেন, এই মামলায় আসামিদের পক্ষে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির কোনো সদস্য আদালতে দাঁড়াবেন না। আইনজীবী সমিতির নেতাদের এমন বক্তব্যের পরও রায়হান হত্যা মামলায় প্রধান অভিযুক্ত আকবরের পক্ষে মিসবাউর রহমানের ওকালতনামা জমা দেয়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনলাইনে অনেকেই এই আইনজীবীকে নিয়ে নানান বিরূপ মন্তব্য করেন।

মো. মিসবাউর রহমান বলেন, ‘আইনি সেবা পাওয়া প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কোনো অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে দণ্ডিত করা যায় না। এরকম মামলায় আসামি আইনজীবী নিয়োগে অক্ষম হলে রাষ্ট্র তার পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দিতে বাধ্য। কোনো কারণে যদি আসামী আইনজীবী পেতে ব্যর্থ হয়, তবে পুরো বিচার প্রক্রিয়াই আটকে যাবে। বিচার প্রার্থীই তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’

এই আইনজীবী বলেন, ‘এই দৃষ্টিকোন থেকেই আকবরের পক্ষে আইনজীবী নিযুক্ত হতে আমি সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু মানুষের চরম নেতিবাচক ও অশালীন মন্তব্য আমাকে হতাশ করেছে। আমার কারণে আমার সিনিয়র আইনজীবী বা আমার পরিবার স্থুল আক্রমণের শিকার হোক তা কখনোই কাম্য হতে পারে না। তাই আমার সিনিয়র এবং পরিবারকে অশালীন ও স্থুল আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে আকবরের পক্ষে আইনি লড়াই থেকে বিরত হলাম।’

গত ১১ অক্টোবর সকালে মারা যান নগরের আখালিয়া এলাকার বাসিন্দা রায়হান আহমদ (৩৪)। বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ধরে এনে নির্যাতন চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ওই রাতেই হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা করেন রায়হানের স্ত্রী তামান্না আক্তার।

মামলার পর মহানগর পুলিশের একটি কমিটি তদন্ত করে নির্যাতনের সত্যতা পায়। এ ঘটনায় এই ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপ-পরিদর্শক (এসআই) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ চার জনকে ১২ অক্টোবর সাময়িক বরখাস্ত ও তিনজনকে প্রত্যাহার করা হয়। ১৩ অক্টোবর পুলিশি হেফাজত থেকে পালিয়ে যান বন্দরবাজার থানার ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা আকবর হোসেন ভূঁইয়া।

এরপর গত ৯ নভেম্বর সিলেটের কানাইঘাট সীমান্ত থেকে এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভারতে পালানোর সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জেলা পুলিশ দাবি করে। এছাড়া তাকে পালাতে সহায়তা করায় আরও তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশ।