যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে আজ শপথ গ্রহণ করবেন জো বাইডেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার স্বপ্ন দীর্ঘদিন ধরে লালন করেছেন এই মানুষটি। অবশেষে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন তাকে সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনবারের প্রচেষ্টা বাইডেনের জন্য সৌভাগ্য হয়ে ধরা দিয়েছে। তবে এই জয় অর্জন করাটা তার জন্য খুব সহজ ছিল না।
স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। এটাই এখন বাইডেনের জীবনে সবচেয়ে বড় সত্যি। যতটা কষ্ট করে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তার চেয়ে আরও কয়েকগুণ দুর্ভোগ তার জন্য সামনের দিনগুলোতে অপেক্ষা করছে। নির্বাচনের পর থেকেই বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাইডেনকে।
নির্বাচনের পর থেকেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাইডেনের জয়কে অস্বীকার করে আসছেন। তার প্রশাসন বাইডেনকে চরম অসহযোগিতা করেছে। আর সর্বশেষ গত ৬ জানুয়ারি পার্লামেন্ট ভবনে সহিংসতা ঘটনা এটা স্পষ্ট করেছে যে, বাইডেনের সামনের দিনগুলো মোটেও সহজ নয়। করোনা মহামারি, অর্থনৈতিক দৈন্যদশা, ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির কারণে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য বাইডেনকে বেশ ভুগতে হবে। তার পরবর্তী দিনগুলো খুব সতর্কতার সঙ্গেই পার করতে হবে।
১৯৮৭ এবং ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার পর ২০২০ সালে আবারও তিনি নির্বাচনে অংশ নেন। এবার আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। জয় এসে তার কাছে ধরা দিয়েছে।
জো বাইডেন ১৯৬৮ সালে একটি ল ফার্মে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি হিসেবে নিযুক্ত হন জো বাইডেন। ১৯৭০ সালে কান্ট্রি কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। এরপর নিজস্ব ল ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর স্যালেব বগসের বিপক্ষে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রার্থী মনোনীত হন তিনি। এরপর মার্কিন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে নিজের নাম লেখেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে পঞ্চম সর্বকনিষ্ঠ সিনেটর হিসাবে নির্বাচিত হন ২৯ বছরের বাইডেন।
এরপর ১৯৭৮, ১৯৮৪, ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০২ এবং ২০০৮ সালে সিনেটর হিসেবে টানা নির্বাচিত হন জো বাইডেন। সিনেটর হিসেবে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ইরাক নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন তিনি।
১৯৮৭ সালে ডেমোক্র্যাট পার্টির প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারিতে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। তবে অসুস্থতার কারণে পরের বছর এই লড়াইয়ে পিছু হটতে বাধ্য হন তিনি। ২০০৭ সালের কথা। আবারও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারিতে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেন। ওই সময় বারাক ওবামা এবং হিলারি ক্লিনটনের বিপক্ষে নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে ব্যর্থ হন।
হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দাঁড়াতে পারেননি তিনি। পরে ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে টেলিফোন পান তিনি। বাইডেনকে রানিংমেট হিসেবে বেছে নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন ওবামা। ২০০৯ সালের ২০ জানুয়ারি বাইডেন মার্কিন ৪৭তম ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন। ২০১৭ সাল পর্যন্ত একই পদে ছিলেন তিনি।
তার পুরো নাম জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র। তবে সংক্ষিপ্ত জো বাইডেন নামেই তিনি বেশি পরিচিত। নিজ রাজ্য ডেলাওয়ারে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে সিনেটর ছিলেন তিনি। ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর জো বাইডেনের জন্ম। বাবা জোসেফ রবিনেট বাইডেন সিনিয়র, মা ক্যাথরিন ইউজেনিয়া ফিনেগান। মা আইরিশ বংশোদ্ভূত।
উত্তরপূর্ব পেনসিলভেনিয়ার স্ক্র্যানটনে বেড়ে ওঠেন তিনি। বাবা বাইডেন সিনিয়র ছিলেন ফারনেস ক্লিনার। তবে জীবনের বড় একটি সময় কেটে গেছে গাড়ির সেলসম্যান হিসেবে। ছোটবেলা থেকে প্রবল দারিদ্রের মাঝে বড় হয়েছেন মার্কিন এই রাজনীতিক। কিন্তু সব সময়ই তার মধ্যে দেশের মানুষের জন্য কিছু করার তাগিদ কাজ করত। দেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে তিনি আমেরিকানদের জন্য ভালো কিছু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।