মাঠে নামার আগে আপনি কার বিরুদ্ধে পরিকল্পনা সাজাবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নিশ্চিত উত্তর দিয়ে দেবেন, কেন প্রতিপক্ষ যে দল সে দলের বিরুদ্ধে! তাদের শক্তি-সামর্থ্য আর খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স বিচার-বিবেচনা করেই পরিকল্পনা সাজানো হবে। থাকবে প্ল্যান ‘এ’, প্ল্যান ‘বি’ কিংবা প্ল্যান ‘সি’। প্ল্যান ‘এ’ কাজ না করলে প্ল্যান ‘বি’তে চলে যাবে। তাও যদি কাজ না করে তাহলে প্ল্যান ‘সি’ তো আছেই।
কিন্তু এবারের ত্রি-দেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ এমন এক প্রবল প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হচ্ছে যা একটি দল নয়, একজন ব্যক্তি। এই সিরিজে বাংলাদেশ হয়তো লড়াই করবে জিম্বাবুয়ে এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। কিন্তু আক্ষরিক অর্থে টিম বাংলাদেশের লড়াইটা একজন ব্যক্তির বিপক্ষে। তিনি চন্ডিকা হাথুরুসিংহে।
বাংলাদেশ দলের কোচ ছিলেন চার বছর। এই তো গত নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও কেউ জানতো না, হাথুরুসিংহে আর বাংলাদেশের কোচ নন; কিন্তু যখনই সেটা জানা গিয়েছে, শুরুতেই কিছুটা লুকোচাপ ছিল বিসিবির মধ্যে। হাথুরুসিংহের পক্ষ থেকে তো কিছু জানাই যাচ্ছিল না। সর্বশেষ বিসিবি প্রেসিডেন্ট নাজমুল হাসান পাপন বিষয়টা স্বীকার করেন।
শেষ পর্যন্ত হাথুরু শ্রীলঙ্কা দলের দায়িত্ব নিলেন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। এরপর বাংলাদেশে এসেছিলেন তিনি। কিছু ফরমালিটিজ ছিল বিসিবির সঙ্গে। সেগুলো সারতে। এরপর তিনি দেখা করেন বিসিবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। সেখানে তার নিজের পদত্যাগের সব দায় চাপিয়ে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের ওপর। যার রেশ ধরে টেস্ট অধিনায়কত্ব হারিয়েছেন মুশফিকুর রহীম।
তখন থেকেই গুঞ্জন, চন্ডিকা হাথুরুসিংহে হবে বাংলাদেশের জন্য ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ’। বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান, জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান সরাসরি বলেছিলেন, ‘হাথুরু সদ্য বাংলাদেশের কোচের দায়িত্ব ছেড়েছেন। তিনি এই দলের সবার সম্পর্কে জানেন। সুতরাং, তার জন্য অনেক সুবিধা হবে বাংলাদেশের বিপক্ষে পরিকল্পনা তৈরি করার।’
শুধু আকরাম খানই নয়, সাবেক-বর্তমান থেকে শুরু করে অনেকেই একই ধরনের মতামত দিয়েছেন। সবারই একটাই কথা, হাথুরু বাংলাদেশ দলের ঘরের খবর সবই জানেন। কোন ক্রিকেটারের কোথায় দুর্বলতা, কোথায় কে ভালো- সবই দার নখদর্পনে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সামনে এগিয়ে যাওয়ার ছক তার তৈরি করা। চাইলে এই ছক একদিনে ভেঙে ফেলা সম্ভব নয় কিংবা বেরিয়েও আসা যাবে না। ধীরে ধীরে বের হওয়া যাবে। সুতরাং, তার তৈরি করা ছকেই খেলতে হবে ত্রিদেশীয় সিরিজ কিংবা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে।
বাংলাদেশ দলের কোন ব্যাটসম্যান স্পিনে দুর্বল, কে পেস বলে খেলতে ভয় পান কিংবা সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন, কে গতির কাছে হার মেনে যান, একইভাবে কোন বোলারের কী প্রকৃতি, কার খেলার ধরণ কী- সবই তো জানা হাথুরুর। সুতরাং, এই সিরিজে মাঠের শ্রীলঙ্কার চেয়ে মাঠের বাইরে হাথুরুসিংহেই বাংলাদেশের জন্য এখন ভয়ঙ্কর প্রতিপক্ষ।
ত্রিদেশীয় সিরিজে যদিও প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা নয়, জিম্বাবুয়ে। সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টায় শুরু হবে সিরিজের উদ্বোধনী ম্যাচ। মিরপুর শেরেবাংলায় টস করতে মাশরাফির সঙ্গে নামবেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক গ্রায়েম ক্রেমার। দিবা-রাত্রির ম্যাচ আড়াইটায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তীব্র শীত আর অনেক বেশি শিশির পড়ার কারণে ম্যাচের সময় এগিয়ে আনা হয়।
জিম্বাবুয়ের কোচ হিথ স্ট্রিকও মাত্র দুই বছর আগে বাংলাদেশে কোচিং করিয়ে গেছেন। ছিলেন পেস বোলিং কোচ। দুই বছরেরমত ছিলেন মাশরাফিদের সঙ্গে। বাংলাদেশ দল সম্পর্কে তারও অনেক কিছু জানা। যদিও হিথ স্ট্রিক আগেরদিন জানিয়ে দিয়েছেন, দুই বছর বাংলাদেশ দলের সঙ্গে থাকাটা তাদের জন্য কোনো কাজে দেবে না। শুধু তাই নয়, হিথ স্ট্রিক আরও জানিয়েছেন, যদি তিনি বাংলাদেশে ভালো করে থাকেন, তাহলে তো তাদের জন্যই বিপদের কারণ। এর মূল কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ দলের বোলাররা তখন তাদের বিরুদ্ধে ভালো বোলিং করবেন।
হিথ স্ট্রিকের কথা হচ্ছে, সব কিছুই নির্ভর করে নিজ নিজ দলের পরিকল্পনা এবং সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সামর্থ্য থাকার ওপর। সুতরাং, বাংলাদেশের পুরনো অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগার কথাই নয়।
একই সুর আগেও বেজেছে বাংলাদেশের দলের সিনিয়র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং অধিনায়ক মাশরাফির কণ্ঠেও। তারা খুব সাহসের সঙ্গেই জানিয়েছেন, তাদের সম্পর্কে হাথুরুর জানা কোনো কাজে আসবে না। বাংলাদেশ দল সম্পর্কে তার সাম্প্রতিক জ্ঞান থাকার কারণে হয়তো শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে তার পরিকল্পনা সাজাতে সাহায্য করবে। কিন্তু নিজেদের আসল খেলাটা খেলতে পারলে হাথুরুসিংহে কোনো সমস্যাই না। মাশরাফির কথা, ‘শুধু নিজেদের ভেতর আত্মবিশ্বাসটা বাড়াতে হবে এবং মনোবল কঠোর করতে হবে।’
মাশরাফির এই কথার বলে বলিয়ান হতে পারলেই কেবল সম্ভব, হাথুরু জুজু থেকে বেরিয়ে এসে ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো কিছু করার।