 
                                            
                                                                                            
                                        
মেহেন্দিগঞ্জে শিক্ষক ও মসজিদের ইমামকে জুতার মালা পড়িয়ে ঘোরালেন চেয়ারম্যান। উপজেলার দড়িরচর খাজুরিয়া ইউনিয়নে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীর নির্দেশে মসজিদের ইমামকে জুতার মালা পড়িয়ে ঘোরানো হয়েছে।
সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলা থেকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নির্ভরযোগ্য সূত্র। সূত্রটি আরো জানায়, চেয়ারম্যানকে আটকের পর বরিশালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে ওই দৃশ্যের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বুধবার উপজেলার দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। এদিন রাতেই ভুক্তভোগী ইমাম ইউপি চেয়ারম্যানসহ দু’জনের নাম উলেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এর পরই বজলু রহমান আকন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
লাঞ্ছনার শিকার ওই ইমামের নাম শহিদুল ইসলাম। তিনি মধ্য দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এবং স্টীমারঘাটের অদূরে সিকদার বাড়ি মসজিদের ইমাম।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীর নির্দেশে তার কার্যালয়ে সালিশ বসানো হয়।
এ সময় ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম, ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোঃ ফিরোজ, ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফা রাঢ়ীর সমন্দি ইউনুফ বয়াতী, চাচা শ্বশুর আবুল বয়াতী, বজলু আকন, মোঃ কামরুজ্জমান, রিন্টু দেওয়ানসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন।
মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক জানান, ২০১৯ সালে উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মোবাইল হিসাব নম্বর পাঠানো হয়। তালিকা পাঠানোর সময় ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী মাদ্রাসায় না আসায় সেখানে শহিদুল ইসলাম তার মোবাইল নম্বর দিয়ে দেন। স¤প্রতি ওই ছাত্রীর এক বছরের উপবৃত্তির ১ হাজার ৮০০ টাকা ওই মোবাইল নম্বরে জমা হয়।
বিষয়টি শহিদুল ইসলাম ওই ছাত্রীর অভিভাবককে জানাতে ভুলে যান। পরে এ ঘটনা জানাজানি হলে ওই ছাত্রীর মামা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি, সাবেক ইউপি সদস্য আঃ ছত্তার সিকদার ও বাবা কবির হোসেন ৩০মে মাদ্রাসায় এসে শহিদুল ইসলামকে মারধর করেন এবং তার মোবাইলের সিমটি নিয়ে যান।
পরে বিষয়টি দড়িচড় খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী জানতে পেরে সালিশের নির্দেশ দেন। বুধবার সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে সালিশ বৈঠক বসে। সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হলে শহিদুল ইসলামকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করা হয় এবং উপস্থিত সালিশগণ তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন, দাবীকৃত চাঁদার টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাকে জুতা দিয়ে প্রহার করে জুতার মালা পরিয়ে স্টীমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়।
দড়িচর খাজুরিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার আনিসুর রহমান বলেন, শুনেছি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ীর নির্দেশে শহিদুল ইসলামকে জুতার মালা পড়িয়ে স্টীমারঘাট বাজারে ঘোরানো হয়েছে, এটা উচিত হয়নি।
শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তারা মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারতেন। এই ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি বৃহস্পতিবার সকালে একটি জরুরী মিটিং করেছেন। মিটিংয়ে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয় এবং তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানানো হয়।
ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম জানান, ওই ছাত্রীর মোবাইল নম্বর না থাকায় উপবৃত্তির টাকা পাওয়ার জন্য তার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, উপবৃত্তির টাকা যে সিমে এসেছে, সেই সিমটি দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। আর অফিসে নানা কাজের চাপে বিষয়টি মনেও ছিল না।
কিন্তু এত ছোট একটি বিষয় নিয়ে এত কিছু হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে কেউ কোনোদিন অভিযোগ করতে পারেনি। কিন্তু সামান্য একটি ভুলের জন্য যে অবিচার আমার ওপর করা হয়েছে তাদের বিচার আলাহর ওপর ছেড়ে দিলাম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার পিজুস চন্দ্র দে বলেন, রাতে ঘটনাটি জানতে পারি। সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট দিতে বলেছি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার তপন কুমার দাস বলেন, উপবৃত্তির টাকা নিয়ে যাই হোক, তার বিচারের এখতিয়ার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেই। যা ঘটেছে তা লজ্জাজনক।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী জানান, শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তিনি দুই ছাত্রীর উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি একটি ইনস্যুরেন্স কোম্পনীতে চাকুরী করেন।
কয়েকগুণ টাকা মুনাফা দেওয়ার কথা বলে লোকজনদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের কারণে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি সালিশ বৈঠক করেছেন।
সালিশ বৈঠকে তাকে ওই সব টাকা ফিরিয়ে দিতে বলা হয়। তিনি অপারগতা প্রকাশ করে নিজেই জুতার মালা পরেছেন। সহকারী পুলিশ সুপার (মেহেন্দিগঞ্জ সার্কেল) শুকুমার রায় বলেন, ইমামকে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় আ’লীগ নেতা বজলু আকন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।