একজন মিডিয়া বান্ধব মানুষ ছিলেন শ্রদ্ধেয় হাই বখশো স্যার (৭০)। চলে গেলেন অনেকটা নিরবেই। অনেক দিন পর্যন্ত কঠিন রোগে ভুগছিলেন তিনি। পরিবার থেকে চিকিৎসাও করানো হয়েছে যথাযথভাবে।
নিয়তির নিয়ম জন্মালে মৃত্যুর সাধ গ্রহন করতেই হবে। সেই অমোঘ নিয়মের কড়া নাড়ায় সাড়া দিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলেই গেলেন শ্রদ্ধেয় স্যার। ইবাদত করার পরে পত্রিকা পড়া ছিলো তার প্রতিদিনের কাজের মধ্যে সর্ব প্রথম কাজ।
তাই বানারীপাড়া প্রেসক্লাবের সাথে ছিলো নিবিড় সম্পর্ক। সভাপতি রাহাদ সুমনের সাথে ছিলো পিতা-পুত্রের সম্পর্ক। অন্য সংবাদ কর্মীরা ছিলেন স্যারের স্নেহের বন্ধনে সব সময়।
হাই বখশো স্যার বধির শিশুদের মুখে কথা ফুটানোর জন্য ১৯৮৪ সালে বানারীপাড়ায় প্রতিষ্ঠা করেন হাই কেয়ার স্কুল। তবে সেই সময় থেকে বর্তমান পর্যন্ত সরকারীভাবে কোন প্রকার সহায়তা পাননি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার জন্য।
তার সুভানুদ্ধায়ীদের কাছ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই যুগ যুগ ধরে পরিচালিত হচ্ছে বধির শিক্ষার্থীদের কথা শিখানো এই মহত কাজটি। এই বিদ্যালয়ে অন্য যে শিক্ষকরা রয়েছেন তাদের সন্মানিটাও দিতে পারতেন না স্যার। তবে তাদেরকে আহবান জানাতেন কখনও অনুরোধ করতেন বধির শিশুদের পাশে থাকার জন্য।
তারাও আনন্দ চিত্তে বধির শিশুদের পাশে থাকতে পেরে নিজেদেরকে সৌভাগ্যবান মানুষ হিসেবে মনে করতেন। তবে হাই কেয়ার স্কুলটির জন্য সরকারী পৃষ্ঠ পোষকতা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে।
গুণী এই ব্যক্তি ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। ছিলেন একজন কবি। অসম্প্রদায়িক চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করেছেন মুক্তিযুদ্ধের স্ব-পক্ষের শক্তির পতাকাতলে। জীবদ্ধশায় কখনও অন্যায়কে প্রশয় দেননি তিনি।
সততার সাথে চলতে গিয়ে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত সাদামাটাভাবে কাটিয়ে গেছেন হাই বখশো স্যার। সেটা তার বাড়িটি দেখলেই অনেক সহজেই বোঝা যাবে।
এই মানুষটি ২০ ফেব্রুয়ারী রাত সাড়ে ৪টার সময় চলে গেলেন বিচিত্র এই অভিনয়শালা ছেড়ে। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে, ২ মেয়ে, নাতী, নাতনীসহ অসংখ্য গুনগ্রহী রেখে গেছেন। ২১ ফেব্রুয়ারী দুপুর ২টার সময় বানারীপাড়া সরকারী মডেল ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন পাইলট বিদ্যালয় মাঠে তার জানাযা নামাজ শেষে পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের নিজ বাড়িতে তাকে চির নিদ্রায় সায়িত করা হয়।
এর আগে স্যারের কফিন তার কার্যস্থল সদর ইউনিয়নের রাজ্জাকপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও বানারীপাড়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় নেয়া হয়। উল্লেখ্য স্যার তার কর্মময় জীবনে জাতীয় শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষকের সন্মাননা পুরস্কার পেয়ে ছিলেন।
তার মৃত্যুতে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব,সামাজিক, পেশাজীবী ও বানারীপাড়া প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দরা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করে শোক সংন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।