মা-বাবা উধাও, ৩ শিশু জানে না কোথায় আশ্রয়

লেখক:
প্রকাশ: ২ years ago

মাস দুয়েক আগে মা ফাতেমা বেগম প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছেড়েছেন। কিছু দিন পর বাবাও রুকন মিয়াও করেছেন নতুন বিয়ে। এতে তাদের তিন সন্তান রুমি (৬), জান্নাত (৩) ও ফাহাদ (২) হয়েছে আশ্রয়হীন।

এলাকাবাসী শিশুদের দেখাশোনার জন্য প্রতিবেশী এক বিধবা নারীর কাছে তুলে দেয়। প্রায় দুই মাস তিন ভাই-বোনকে খাওয়াচ্ছেন শরিফা বেগম। আর কুলিয়ে উঠতে না পেরে সোমবার (২ জানুয়ারি) সকালে শিশুদের হাজির হন থানায়। কথা বলেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে।

 

বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘অবুঝ তিন শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সমাজসেবা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। পাশাপাশি শিশুদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করি অবুঝ তিন শিশুর ভালো ব্যবস্থা হবে।’

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জরুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীপুর থানা থেকে এ বিষয়ে আমাকে জানানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আশা করছি ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

ছোট্ট শিশু রুমি জানায়, তাদের বাড়ি শেরপুরের কৃষ্ণপুর দড়িপাড়া গ্রামে। তারা শ্রীপুরে ভাড়া থাকতো। মা-বাবা তাদের ফেলে কোথায় যেন চলে গেছে। তারা খোঁজখবর রাখে না। খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছে তারা। ছোট দুই ভাই-বোন খাবারের জন্য কান্নাকাটি করছে। যে খালা তাদের এত দিন লালনপালন করছে, তিনি আর করবেন না বলেও জানিয়েছেন তাদের।

 

প্রতিবেশী শরিফা বেগম বলেন, ‘রুকন মিয়া ও ফাতেমা বেগম তিন সন্তান নিয়ে শ্রীপুরে ভাড়া বাড়িতে থাকতো। আমি তাদের প্রতিবেশী। মাস দুই আগে ফাতেমা বেগম দেশের বাড়িতে যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর আর ফিরে আসেনি। এরপর আমরা জানতে পারি, প্রেমিকের হাত ধরে ঘর ছেড়েছে ফাতেমা। এর কিছু দিন পর বাবা রুকন মিয়াও চলে যায়। পরে তার মোবাইলে কল করা হলে তিনি অন্য নারীকে বিয়ে করেছে বলে জানায়।’

শরিফা আরও বলেন, ‘তিন ভাই-বোনের বাবা-মা ফিরে না আসায় বাড়ির মালিক তাদের বাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়। এরপর এলাকাবাসী তাদের বাবা-মা ফিরে আসবে বলে আমাকে দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়। কিন্তু তিন শিশুর ভরনপোষণ বহন করতে না পেরে আমি থানায় এসেছি।’

শরিফা বেগম বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। তিনটি শিশুকে খাওনো, পরানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। গ্রামের লোকজন বলেছিল, কয়েক দিন লালন-পালন করতে। তাদের মা কিংবা বাবা আসবে ওদের নিতে। কিন্তু প্রায় দুই মাস তাদের খোঁজখবর নেই। আমি বিধবা মানুষ। নিজেই খেতে পাইনে। এই তিন ভাই-বোনকে কী করে খাওয়াবো। তাই তাদের থানায় নিয়ে এসেছি।’