ভোলা সদর উপজেলায় যৌতুকের দায়ে তানিয়া আক্তার (২৫) নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। নির্যাতনের বিষয়টি অনেক দিন গোপন থাকলেও মঙ্গলবার জানাজানি হয়।
নিহত গৃহবধূ উপজেলার ভেলুমিয়া ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ভেলুমিয়া গ্রামের কৃষক মো. রফিকুল ইসলামের মেয়ে। এদিকে নিহতের স্বামী মো. কামাল হোসেন দাবি করছেন তার স্ত্রীকে কুকুরে কামড় দেয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে।
নিহতের বড় ভাই মো. রাশেদ অভিযোগ করে বলেন, তার বাবা একজন গরিব কৃষক। ২০১৭ সালের দিকে সদরের পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদুর চর গ্রামের আমির হোসেনের ছেলে মো. কামাল হোসেনের সঙ্গে তানিয়া আক্তারের বিয়ে দেন।
বিয়ের সময় কামালের পরিবার দুই লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার দাবি করলে আমরা অনেক কষ্টে সে দাবি পূরণ করি। বিয়ের কয়েক মাস পর কামাল আবারও নগদ দুই লাখ টাকা দাবি করেন।
এ টাকা দিতে না পারায় তানিয়াকে বিভিন্ন সময় মারধর করতেন স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। এ অবস্থায় আমরা অনেক কষ্টে কামালকে কিছু টাকা জোগাড় করে দেই।
এরই মধ্যে তাদের সংসারে একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। এর পরও তাদের চাহিদা পূরণ না হওয়ায় টাকার চাপ দিয়ে তানিয়াকে মারধর করতে থাকে।
তিনি জানান, গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তানিয়ার স্বামী কামাল, কামালের মা ও ভাই বোন মিলে বাবার বাড়ি থেকে টাকা এনে দেয়ার দাবি করে তানিয়াকে মারাত্মকভাবে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে মারধর করে রক্তাক্ত করে।
মারধরে তানিয়া একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। পরে তারা তানিয়াকে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে আমাদের খবর দেন।
রাশেদ বলেন, আমাদের পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে গেলে কামালসহ তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে যায়।
এদিকে তানিয়ার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসক তাকে বরিশাল পাঠায়। সেখানেও তার অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ অবস্থায় বিভিন্ন মানুষ ও বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) থেকে ঋণ নিয়ে প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করে দীর্ঘ তিন মাস তানিয়ার চিকিৎসা চালিয়ে যাই। পরে গত ১৪ মে তানিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় গত ২৪ মার্চ কামাল ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভোলার আদালতে যৌতুকের অভিযোগে একটি মামলা করেছি। এ পরিস্থিতিতে বোনের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন রাশেদ।
অভিযুক্ত মো. কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যৌতুকের জন্য তানিয়াকে কখনো মারধর করা হয়নি। তাকে কুকুরে কামড় দিয়েছে। পরে আমরা তাকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে সেখানেই তার মৃত্যু হয়েছে।
ভোলা সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এনায়েত হোসেন জানান, নিহতের লাশ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে নির্যাতনে মৃত্যু প্রমাণিত হলে হত্যা মামলা করা হবে।
তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে যৌতুকের জন্য নির্যাতন মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।