প্রতারণার ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়া সোনিয়ার মায়ের অভিযোগ গত তিন দিনেও মামলা হিসেবে গ্রহণ করেনি তেঁতুলিয়া থানা পুলিশ। সোনিয়ার আত্মহত্যার ঘটনাটি এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং ফেসবুকে ক্ষোভ, প্রতিবাদ এবং আসামিদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবিতে ঝড় বয়ে গেলেও পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোনিয়ার পরিবারের লোকজন বলছেন, রাতারাতি আসামিদের সাথে মোটা অংকের লেনদেন হয়েছে পুলিশের। অন্যদিকে প্রধান আসামি পঞ্চগড় ২ আসনের নূরুল ইসলাম সূজনের আত্মীয় হওয়ায় সেদিক থেকেও পুলিশের উপর চাপ আছে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে। আর এসব কারণে পুলিশের উপড় ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী। যে কোন সময় এর বিস্ফোরণও ঘটতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতনরা।
সোনিয়ার দাদা রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন পরিষদের জেলা সভাপতি আব্দুল হান্নান জানান, পুলিশ সুপারের কাছে গিয়েছি। তিনি মামলা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু তিন দিনেও মামলা নেয়নি থানা পুলিশ। লোকমুখে শুনেছি কয়েক লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে।
আসামিদের কাওকেই গ্রেফতার করেনি।
এদিকে আগামীকাল রবিবার সোনিয়ার সহপাঠি ও এলাকাবাসী এক মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, মানববন্ধন না করতে চাপ প্রয়োগ করছে একটি প্রভাবশালী মহল। এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রাজিয়া সুলতানা জানান, দুই যুবক প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সোনিয়াকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এটাতো পুলিশসহ সবার কাছে পরিষ্কার। তারপরও পুলিশের ভূমিকা আমাদের আহত করেছে। রবিবার মানববন্ধন করা হবে।
এদিকে তেঁতুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ সরেষ চন্দ্র বলেন, যখন আমরা লাশ উদ্ধার করতে যাই তখন পরিবারের কোন অভিযোগ ছিলনা। তারা পোষ্ট মর্টেমও করতে দিচ্ছিল না। আইনগতভাবেই আমরা লাশ উদ্ধার করি। পরে একটি ইউডি মামলা করা হয়। এখন নতুন করে মামলা নেয়ার ব্যাপারে আইনী জটিলতা রয়েছে। তাহলে ইউডি মামলাটিকে খারিজ করে তারপর মামলা নিতে হবে। কিন্তু ইউডি মামলা খারিজ করার আইন নেই। তবে যে মামলাই হোক এ ব্যাপারে পুলিশ যথাযথ ভূমিকাই পালন করছে ।
উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের নবম শ্রেণির মেধাবি শিক্ষার্থী রহিমা আক্তার সোনিয়া গত ১০ অক্টোবর সকালে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। প্রতারক দুই যুবকের ভিডিওর ফাঁদে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় সে।
জানা যায়, ৩ মাস আগে কালারাম জোত গ্রামের পাথর শ্রমিক জাহেরুল ইসলামের কন্যা সোনিয়ার সাথে তেঁতুলিয়ার মৃত সোলায়মান আলীর ছেলে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওয়ার্ডবয় রাজনের (৩২) পরিচয় হয়। পরিচয়ের পর রাজনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে সোনিয়ার। এর পর রাজন বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে এবং এর ভিডিও ধারণ করে। এসব প্রতারণায় সহযোগিতা করতো রাজনের বন্ধু তেঁতুলিয়ার বাশির উদ্দিনের ছেলে আতিকুর রহমান (৩৪)।
বন্ধু আতিকও এক পর্যায়ে সোনিয়াকে ধর্ষণ করেছে বলে পুলিশের কাছে সোনিয়ার মায়ের অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিকে কয়েক মাস পর সোনিয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে রাজন এবং আতিকের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। কিন্তু রাজন এবং আতিক স্কুল যাওয়ার পথে সোনিয়াকে পর পর কয়েকবার রাজনের বাড়িতে যেতে বাধ্য করে। রাজনের সাথে শারীরিক মেলা-মেশা না করলে ধর্ষণের ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। বেশ কয়েকমাস ধরেই এই প্রতারণা চলে। পরে লজ্জা এবং ভয়ে সোনিয়া এসব বিষয় কাওকে জানায়নি। গত ২৭ সেপ্টেম্বর সোনিয়া বিষয়টি তার মায়ের কাছে প্রকাশ করে। সোনিয়ার মা বিষয়টি রাজন ও আতিকের অভিভাবকদের জানালে তারা অন্যত্র সোনিয়ার বিয়ে দেয়ার পরামর্শ দেয়। বিয়ের সময় কিছু টাকা ক্ষতিপুরণ দেয়া হবে বলে জানায় তারা। এসব জেনে ৯ অক্টোবর রাজন এবং আতিক আবারো সোনিয়ার ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়। ১০ অক্টোবর সকালে সোনিয়া তার ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। এসময় সোনিয়ার একটি ডায়রি উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, ডায়রিতে সোনিয়া তার প্রেম ঘটিত নানা ঘটনা উল্লেখ করেছে।