২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনের ওপর গভীর নজর ছিল প্রতিবেশী দেশ ভারতের। ভোটের আগে ভারত সফর করে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
ওই সময় ভারত সরকারের আমন্ত্রণে সফরে যান সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদও। তিনি ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের মন্ত্রী, নেতাদের সঙ্গে সে সময় সাক্ষাৎ করেন।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন ঘটার পর পরবর্তীতে আর রাষ্ট্রক্ষমতায় যেতে না পারলেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তার গুরুত্ব ছিল। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পর দেশটির তৃতীয় শক্তি হিসেবে ভারতের রাষ্ট্রীয় অতিথি হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ।
এ বিষয়ে গত বছরের জুলাইয়ে বিবিসির সঙ্গে কথা হয় দিল্লির থিঙ্কট্যাঙ্ক অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো জয়িতা ভট্টাচার্যের। তার বক্তব্য ছিল, ‘বাংলাদেশে তারা (এরশাদের জাতীয় পার্টি) গুরুত্বপূর্ণ একটি তৃতীয় শক্তি এবং আপনি চান বা না-চান তারা পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দলও বটে। এর ওপরে এরশাদ নিজে একজন সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান।’
‘২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের মতো না হলেও ২০১৮ এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে’ বলেও মত দেন ভট্টাচার্য। ভারতের কাছে এরশাদ গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার আরেকটি কারণ বলেছিলেন তিনি। তার বক্তব্য, ‘ভারত এখন জামায়াত ছাড়া বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে একটা সম্পর্ক রাখতে আগ্রহী। জাতীয় পার্টিকে আমন্ত্রণ সেই প্রক্রিয়ারই অংশ।’
ভারতের ওই সফরে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপির সাবেক সভাপতি রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন এরশাদ ও তার সফরসঙ্গীরা। সফরে বাংলাদেশের গণতন্ত্র শক্তিশালী করার বিষয়ে জাতীয় পার্টি তথা এইচ এম এরশাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে- এমনটি জানানো হয় ভারতের পক্ষ থেকে। এরশাদের সফরসঙ্গী ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সফর শেষে এমন তথ্য দিয়েছিলেন।
তিনি সে সময় আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র এখনও বিকাশশীল। আমাদের হয়তো অনেক সীমাবদ্ধতাও আছে। কিন্তু যেকোনো অবস্থাতেই আমরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে চাই। এ ব্যাপারে ভারতও আমাদের সঙ্গে পুরোপুরি একমত। মূলত এ বিষয়েই দুপক্ষের মধ্যে কথাবার্তা হয়েছে।’