ব্যক্তিশ্রেণির ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমেছে। ২০১০ সালে ৩২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ লোক কোনো না কোনো উৎস হতে ঋণ গ্রহণ করত। ২০১৬ সালে যা নেমে এসেছে ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশে। এ হিসাবে গত ছয় বছরে ব্যক্তি খাতে ঋণ গ্রহণ কমেছে ২ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয় বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকেও ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমেছে। তবে ব্যাংকে হিসাব খোলার সংখ্যা ও গড়ে পারিবারিক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবনে এ জরিপ প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল প্রধান অতিথি ছিলেন।
বিবিএস’র তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে ৩২ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশের মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৩৫ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ এবং শহরাঞ্চলে ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ লোক ঋণ গ্রহণ করে। ছয় বছর পর ২০১৬ সালে এ হার নেমে এসেছে ২৯ দশমিক ৭০ শতাংশে। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে ৩২ দশমিক ৭০ শতাংশ আর শহরাঞ্চলে ২২ দশমকি ১০ শতাংশ রয়েছে।
বিবিএস’র তথ্য বলছে, ব্যাংকে হিসাব খোলার সংখ্যা বেড়েছে। শুধু ২০১৬ সালে ব্যাংকে হিসাব খুলেছে মোট জনসংখ্যার ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ মানুষ, যা ২০১০ সালে ছিল ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ।
তবে ছয় বছরের ব্যবধানে গড়ে পারিবারিক ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ২০১৬ সালে প্রতি পরিবার গড়ে ৩৭ হাজার ৭৪৩ টাকা ঋণ নিয়েছে, যা ২০১০ সালে ছিল ২৮ হাজার ৬২ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, অবকাঠামোগত সমস্যা, রাজনৈতিক অনিশ্চিয়তা, ব্যবসায়িক নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার অভাব ও সর্বোপরি ব্যবসায়িক পরিবেশ ভালো না থাকায় দেশে ব্যক্তিশ্রেণির ঋণ গ্রহণের পরিমাণ কমেছে। ব্যক্তি উদ্যোক্তারা নতুন কোনো শিল্প-কারখানা স্থাপন করলেও গ্যাস সংযোগ পাচ্ছেন না। ফলে তাদের বিকল্প ব্যবস্থায় কারখানা চালাতে হচ্ছে। এতে করে অতিরিক্ত ব্যয় বাড়ছে কারখানাগুলোতে। ফলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে নতুন উদ্যোক্তারা। যার কারণে সুদহার কমানোর পরও ঋণ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। তাই অবকাঠামোগত সমস্যা না কাটলে সিঙ্গেল ডিজিটে ঋণ দিলেও বিনিয়োগে মন্দা দূর হবে না।
ব্যাংক কর্মকর্তা বলছেন, বর্তমানে ব্যাংক ঋণের সুদহার অনেক কম হওয়া সত্ত্বেও ব্যক্তি উদ্যোক্তারা ঋণ নিচ্ছে না। এর প্রধান কারণ অবকাঠামোগত সমস্যা। বিশেষ করে গ্যাস ও বিদ্যুতের সঙ্কট। আর এর মধ্যে গ্যাস সঙ্কটই এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, বিনিয়োগের প্রধান সমস্যা অবকাঠামোগত অসুবিধা ও সুশাসনের অভাব। এছাড়া রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলেও অনিশ্চিয়তা কাটেনি। আর এসব কারণে উদ্যোক্তারা নতুন করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান করতে আগ্রহী হচ্ছে না। ফলে সুদহার কমলেও ঋণের চাহিদা বাড়েনি। আর সাম্প্রতিক সময়ে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে বেড়েছে এটা ঠিক, তবে এখনও তা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য পর্যাপ্ত নয়। গ্রামে ও শহরে নতুন উদ্যোক্তা তেমন তৈরি হচ্ছে না।