জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের যে পিচে খেলা হচ্ছে তা যে বোলিং বিশেষ করে ‘স্পিন ফ্রেন্ডলি’নয়- তা আর নতুন করে বলার ও ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। তিন দিনে মাত্র ১৩ উইকেটের পতন আর ৫১৩+৫০৪ = ১০১৭ রানই বলে দিচ্ছে সাগরিকা ভাসছে রান বন্যায়। উইকেট এখন পর্যন্ত ব্যাটিং স্বর্গ।
একদম নিষ্প্রাণ মরা পিচ। না সুইং, না টার্ন বোলারদের জন্য কিছুই নেই; কিন্তু এর মধ্যেও রঙ্গনা হেরাথ ঠিকই তিন উইকেট ঝুলিতে পুরেছেন। ফাস্ট বোলার সুরাঙ্গা লাকমালও তিন উইকেট শিকারি। আর বাঁ-হাতি চায়নাম্যান লক্ষ্মণ সান্দাকানও সমীহ আদায় করে নিয়েছেন। যা পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা।
যেখানে সুরাঙ্গা লাকমাল (৩/৬৮), রঙ্গনা হেরাথ (৩/১৫০) আর সান্দাকানের (২/৯২) সাঁড়াসি বোলিং আক্রমণে ১২৯.৫ ওভারে সব উইকেটের পতন ঘটেছে বাংলাদেশের, সে একই পিচে ১৩৮ ওভারে শ্রীলঙ্কার মাত্র তিনজন ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পেরেছেন মোস্তাফিজ ( ১/৮৮ ), মিরাজ (১/৯৭) ও তাইজুলরা (১/১৪৪)। তাও একজন আউট হয়েছেন শূন্য রানে। আর দুজন মানে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিস দ্বিতীয় উইকেটে ৩০৮ রানের বিরাট পার্টনারশিপ গড়ে দুজনই ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন।
এই যে একই পিচে বাংলাদেশের বোলারদের অকার্যকরিতা, সেটাই সবার মুখে মুখে। সে সাথে ফিল্ডিং ও ক্যাচিং ব্যর্থতার কথাও উঠেছে। কম করেও গোটা তিনেক ক্যাচ হাতছাড়া করেছেন ফিল্ডাররা। এমনিতেই বোলিং ভাল হয়নি। তার সাথে ফিল্ডাররাও ব্যাকআপ করতে ব্যর্থ। এদিক ওদিক ওঠা ক্যাচ হাত ফষ্কে বেরিয়ে গেছে।
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে টেকনিক্যাল ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনের কথা শুনে মনে হলো, তিনিও অসন্তুষ্ট। বোলিং প্রত্যাশিত মানে পৌঁছেনি। তার দাবি , বোলাররা লক্ষ্য ও পরিকল্পনা অনুযায়ী বল করতে পারেননি। ফিল্ডিং ব্যাকআপ বিশেষ করে ক্যাচিংটাও ভাল হয়নি।
তাই তো দিন শেষে খালেদ মাহমুদ সুজনের মুখে একথা, কিছু সময়ে আমরা অবশ্যই ভালো বোলিং করেছি। তবে টেস্ট ম্যাচে যেটা বেশি দরকার ও গুরুত্বপূর্ণ, সেই জুটি বেধে বোলিং করা সম্ভব হয়নি। জুটি বেঁধে বোলিং ভালো ছিল না। আমার মনে হয় না কিছু সময় আমরা ভালো বোলিং করেছি। পরিকল্পনা ছিল একদিক থেকে আমরা আক্রমণ করব, আরেকদিক থেকে রক্ষণাত্মক থাকব, সেটা হয়নি। আমরা খুব ভালো করিনি আসলে। খুব একটা সন্তুষ্ট নই আমি। উইকেট ব্যাটিংয়ে জন্য খুব ভালো। তারপরও আমরা আরও ভালো বোলিং করতে পারতাম ।’
ফিল্ডিং ও ক্যাচিং নিয়ে কথা উঠতেই খালেদ মাহমুদ বলে ওঠেন, ‘টেস্ট ক্রিকেটে সুযোগ কমই আসে। আমরা যদি সুযোগগুলো নিতে পারতাম, তাহলে হয়ত ভালো হতো। হয়ত ভাগ্যকেও পাশে পাইনি আমরা। আজকে সকালে যে ক্যাচটা দুজনের মাঝ দিয়ে গেল, সেটা হয়ত একজনের হাতে আসতে পারত। রান আউটের সুযোগ মিস করেছি আমরা। ফিল্ডিং আরও ভালো হতে পারত। ক্যাচগুলো নিতে পারতাম। কিছু এলবডিব্লউয়ের সিদ্ধান্ত আমাদের পক্ষে আসতে পারত। ভাগ্যও পাশে ছিল না ওইভাবে। তবে এটাও মানছি ক্যাচিং-ফিল্ডিংটা ভালো করিনি।’
শুধু কি টাইগারদের কমজোরি, ধারহীন বোলিং আর দূর্বল ফিল্ডিং ও ত্রুটিপূর্ণ ক্যাচিং? নাকি লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের মাঠে সঠিক সময় সঠিক কাজ করে দেখানো মানে প্রয়োগ ক্ষমতাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে? এমন প্রশ্নের জবাবে খালেদ মাহমুদ সুজন বলেন, ‘হয়ত আমরা সুযোগটা হাতছাড়া করেছি। প্রথম দিনে রানটা হয়ত ৪ উইকেটে ৩৭৪ না থেকে ২ উইকেটে বা ৩ উইকেটে ৪৭৪ থাকতে পারত। শেষের দিকে একটা রান আউটের মূল্য দিতে হয়েছে। সাথে ভুল শট নির্বাচন ছিল। না হলে হয়ত ৬০০, সোয়া ছয়শর মত করতে পারতাম আমরা। তাহলে হয়ত আরেকটু ভালো অবস্থানে থাকা যেত।’
লঙ্কানরা মাঠে নিজেদের সামর্থের প্রয়োগ বেশি ঘটাতে পেরেছে, এমনটা পুরোপুরি স্বীকার করতে রাজি নন সুজন। ‘ওরা এগিয়ে আমি বলব না। আমরাও ভালো ছিলাম। মুমিনুল অসাধারণ ছিল। মুশফিক দারুণ ছিল। তামিম-ইমরুল যেভাবে ব্যাট করেছে, আমরা দাপট দেখিয়েছি। রিয়াদ যখন টেল এন্ডারদের নিয়ে ব্যাট করল, তখনো ভালই মনে হয়েছে। নিবেদন মনে হয় না খারাপ ছিল। শ্রীলঙ্কা দারুণ ব্যাট করেছে। তবে আমাদের নিবেদন মনে হয় কম ছিল না। ওরাও আগ্রাসী ছিল, শট খেলেছে। আসলে সুযোগগুলো আমরা নিতে পারলে হয়ত অন্যরকম হতো। ওরা চান্স পেয়েছে, আমরা সে রকম পায়নি। ইমরুল যেমন রিভিউ নিলে বেঁচে যেত। এরকম কিছু পক্ষে থাকলে হয়ত আমরাও প্রথম ইনিংসে আরও বড় রান করতে পারতাম।’