বেনাপোল এক্সপ্রেসঃ বাবাকে কবরে রেখে ঢাকা ফেরা হলো না এলিনার

লেখক:
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

বাবার মৃত্যুতে ১০ দিন আগে ছেলেসহ গ্রামের বাড়ি যান এলিনা ইয়াসমিন। বাবাকে কবরে রেখে ভাই-ভাবির সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে গতকাল শুক্রবার ঢাকায় ফিরছিলেন তিনি।

 

রাজধানীর কমলাপুরের খানিকটা দূরে গোপীবাগে প্রবেশ করতেই ট্রেনটির কয়েকটি বগিতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এলিনার স্বজনদের দাবি, এই আগুনে এলিনা মারা গেছেন। তবে আগুনে মরদেহগুলো পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। পুলিশ বলছে, মরদেহের ডিএনএ পরীক্ষার পরই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

শুক্রবার দিবাগত রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেসে নিহত চার জনের মরদেহ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হলে এলিনার স্বজনেরা ভিড় করেন।

 

এলিনার ভাসুর মুরাদ হোসেন জানান, এলিনার বাবা ১০ দিন আগে মারা যান। সেজন্যই তারা গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলেন। বেনাপোল এক্সপ্রেসে তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এলিনা ইয়াসমিন ও পাঁচ মাসের ছেলে সৈয়দ আরফান এবং আরফানের মামা–মামি ছিলেন। গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী সদর থানা থেকে ঢাকায় মিরপুর ৬০ ফিটের বাসায় যেতে কমলাপুর রেলস্টেশনে ফিরছিলেন তারা। শিশু আরফানের বাবা সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন তখন ঢাকার বাসায় ছিলেন।

মুরাদ হোসেন বলেন, ‘শিশু আরফানকে নিয়ে তার মামা-মামি ট্রেন থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও এলিনা বের হতে পারেনি। আমাদের ধারণা, এলিনা ট্রেনের ভেতর পুড়ে মারা গেছে। মর্গে আনা চার মরদেহের মধ্যে এলিনাও আছে।’

 

ঢাকা রেলওয়ে থানার (কমলাপুর) উপপরিদর্শক (এসআই) সেতাফুর রহমান বলেন, মরদেহ চারটি পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে দেখে এদের মধ্যে একজন পুরুষ, একজন শিশু এবং বড় চুল দেখে একজনকে নারী হিসেবে শনাক্ত করা গেছে। বাকি একজন পুরুষ না কি নারী, তা দেখে বোঝার উপায় নেই।

এসআই বলেন, রাতেই সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে মরদেহ চারটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের মর্গে রাখা হয়। শনিবার (৬ জানুয়ারি) ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে ময়না তদন্তের পর মরদেহগুলোর পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা করা হবে।

উল্লেখ্য, বেনাপোল এক্সপ্রেস ১৫৪ যাত্রী নিয়ে শুক্রবার দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। পথে ১১টি স্টেশনে বিরতি নেয় বেনাপোল এক্সপ্রেস। তখন ওই ট্রেনে কমলাপুরগামী যাত্রী ছিলেন ৪৯ জন। রাত ৯টার দিকে ঢাকায় পৌঁছানোর কথা থাকলেও গোপীবাগ এলাকায় পৌঁছালে আগুনের ঘটনা ঘটে।

 

এতে ট্রেনের চারটি বগি পুড়ে গেছে। এসব বগিতে থাকা চার জনের মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাদের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।