 
                                            
                                                                                            
                                        
বগুড়ার ধুনটে ১০১টি বই দেনমোহর বা মোহরানায় প্রেমের বিয়ে করে আলোচনায় এসেছেন নিখিল নওশাদ ও শান্তনা খাতুন দম্পতি। কনের ইচ্ছা তারা এসব বই দিয়ে পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তুলবেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় উপজেলার চিকাশী ইউনিয়নের বরিয়া গ্রামে ছেলের নানার বাড়িতে এ বিয়ে পড়ানো হয়। এর আগে রেজিস্ট্রে করেন গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের কাজী আবদুল হান্নান। ১১ হাজার টাকা মূল্যের নাকের ফুল, আংটি ও ৭০ বই তাৎক্ষণিকভাবে দেওয়া হয়েছে। বাকি ৩১ বই পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ছেলের বাবা, মেয়ের মা ও আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন। পরে উপস্থিত অতিথিদের মিষ্টিমুখ করানো হয়েছে। এমন ব্যতিক্রম বিয়ের খবরে গ্রামবাসী সেখানে ছুটে আসেন।
জানা গেছে, বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্টের সাবেক নেতা নিখিল নওশাদ (৩৩) ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের পূর্ব গুয়াডহরী গ্রামের সাবেক আইনজীবী সহকারী সামসুল ইসলামের ছেলে। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট নিখিল সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে বিএসএস পাশ করেছেন।
একটি ওষুধ কোম্পানির সেলস বিভাগের প্রধান। ‘বিরোধ’ নামে একটি লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক। একই কলেজে এক ক্লাস নিচে পড়তেন বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার কামালেরপাড়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে তিনি ছোট। কবিতা লেখালেখির মাধ্যমে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। শান্তনা ইংরেজিতে মাস্টার্স করেছেন। বর্তমানে বগুড়া শহরের চেলোপাড়া দাখিল মাদ্রাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক।
প্রেমের সম্পর্ক স্থায়ী করতে সম্প্রতি নিখিল নওশাদ ও শান্তনা খাতুন বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এ বিয়ের মোহরানা হিসেবে কনে দুই লাখ দুই হাজার টাকা মূল্যের ১০১টি বই দাবি করেন। উভয় পরিবার তাদের বিয়ের সিদ্ধান্তকে মেনে নেন।
গত বৃহস্পতিবার নিখিল ও শান্তনা শহরের বিভিন্ন দোকানে ঘুরে ঘুরে ৭০টি বই কিনতে পারেন। কনের জন্য ১১ হাজার টাকা খরচে বই, একটি নাকফুল ও একটি আংটি কেনা হয়। অবশিষ্ট টাকার মধ্যে আরও ৩১টি বই কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ৭টায় নিখিলের নানার বাড়ি ধুনটের চিকাশী ইউনিয়নের বড়িয়া গ্রামে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। বর ও কনে তার স্বজনদের নিয়ে ওই বাড়িতে আসেন। এর আগে আবদুল হান্নান নামে কাজির অফিসে বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়। মোহরানা হিসেবে ১০১টি বইয়ের কথা শুনে এলাকাবাসী বিয়ে দেখতে ভিড় করেন।
বিয়ে পড়ানোর সময় ধার্য করা দুই লাখ দুই হাজার টাকার ১০১টি বইয়ের মধ্যে ১১ হাজার টাকা মূল্যের ৭০টি বই, একটি নাকফুল ও একটি আংটি দেওয়া হয়। বাকি টাকায় আরও ৩১টি বই পর্যায়ক্রমে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
নিখিল নওশাদের বাবা সামসুল ইসলাম জানান, বউমার চাওয়া অনুসারে ১০১টি বই মোহরানা ধার্য করে তার ছেলের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার রাত ৯টায় নবদম্পতি তার বাড়িতে আসেন। শনিবার বেলা ১১টার দিকে তারা বগুড়া শহরের পূর্ব নাটাইপাড়ার একটি বাড়িতে উঠেন। শিগগিরই তারা শহরের খান্দার এলাকায় বাড়ি ভাড়া নেবেন।
বউমা শান্তনা বগুড়া শহরে থাকার কারণ সম্পর্কে সামসুল ইসলাম বলেন, চাকরির সুবিধার্ধে এ সিদ্ধান্ত। তবে মেয়ের মায়ের আট বিঘা জমি আছে। এ জমি তার দুই মেয়েকে দেবেন। এ কারণেও হয়তো তারা শহরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বর নিখিল নওশাদ সাংবাদিকদের বলেন, তার ভালোবাসার মানুষ শান্তনা বিয়ের মোহরানা হিসেবে সোনা, হীরা নয়; ১০১টি বই চেয়েছিল। যৌতুকহীন বিয়েতে বই মোহরানা দেওয়ার ঘটনা অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।
কনে শান্তনা খাতুন জানান, তিনি নওশাদের কবিতার প্রেমে মুগ্ধ হয়েছিলেন। এ কবিতায় তাদের প্রেম ও বিয়ে। বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় তিনি মোহরানা হিসেবে ১০১টি বই চেয়েছিলেন। কারণ টাকার চেয়ে বইয়ের ওজন ও সম্মান অনেক বেশি। বিয়ের সময় কিছু বই পেয়েছেন, অবশিষ্ট পরবর্তীতে নিজে উপস্থিত থেকে কিনবেন। দুজনই একে অপরকে পেয়ে অভিভূত। তারা এসব বই দিয়ে বাড়িতে পারিবারিক পাঠাগার গড়ে তুলবেন।
ধুনট উপজেলার চিকাশী ইউনিয়নের কাজি হেলালুর রহমান জানান, তার কাছে প্রথমে বিয়ের জন্য ওই দম্পতিকে আনা হয়েছিল। নগদের ঘরে নাকফুল, আংটি লেখা ছিল; বই না থাকায় তিনি বিয়ে রেজিস্ট্রি করেননি।
গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের কাজি আবদুল হান্নান জানান, রেজিস্ট্রি খাতায় সুযোগ থাকায় দেনমোহর বাবদ দুই লাখ দুই হাজার টাকা মূল্যে ১০১টি বই উল্লেখ করে তিনি বিয়ে রেজিস্ট্রি করেছেন। এছাড়া বরের প্রস্তাবে কন্যা রাজি ছিলেন। তিনি আরও জানান, তার প্রায় ৪০ বছরের অভিজ্ঞতায় মোহরানা হিসেবে বই দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। তিনি নবদম্পতির জন্য সবার দোয়া চেয়েছেন।