বিশ্ব ল্যাবরেটরি দিবসে শিক্ষক ও গবেষকদের মতামত

লেখক:
প্রকাশ: ৪ years ago

অমৃত রায়,জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়:: বিশ্ব ল্যাবরেটরি দিবসটি ২৪শে এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়। দুর্দান্ত আবিষ্কারের জায়গা উল্লেখ করে এটি উদযাপন করা হয় যা বিশ্বকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করে। পরীক্ষাগার এমন একটি জায়গা যা নিয়ন্ত্রিত শর্তাদি ও সরঞ্জাম সরবরাহ করে, যেখানে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিমাপ সম্পাদন করা যেতে পারে। গবেষণাগারে অগণিত ধারণা এবং তত্ত্ব পরীক্ষা করা হয়। সীমাহীন অধ্যয়ন এবং পরীক্ষার পরে বিশ্বের বেশিরভাগ বৃহত্তম চিকিৎসা এবং নিরাময়গুলি পরীক্ষাগারগুলিতে আবিষ্কার ও সিদ্ধ করা হয়েছিল। পরীক্ষাগার থেকে বেরিয়ে আসা পণ্যগুলি মানবজাতিকে বহু উপায়ে সহায়তা করেছে। বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের বিভিন্ন প্রয়োজনের কারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য ব্যবহৃত ল্যাবরেটরি অনেকগুলি রূপ নেয়।
একটি পদার্থবিদ্যার ল্যাবটিতে একটি কণা ত্বরণকারী বা ভ্যাকুয়াম চেম্বার থাকতে পারে, অন্যদিকে ধাতুবিদ্যার গবেষণাগারে ধাতব ঢালাই বা পরিশোধন করার জন্য বা তাদের শক্তি পরীক্ষা করার জন্য যন্ত্রপাতি থাকতে পারে। একজন রসায়নবিদ বা জীববিজ্ঞানী একটি জীবন্ত বা কেমিক্যাল সম্পন্ন পরীক্ষাগার ব্যবহার করতে পারেন। যখন একজন মনোবিজ্ঞানের ল্যাব এমন এক ঘর হতে পারে যেখানে একমুখী আয়না এবং লুকানো ক্যামেরা রয়েছে যাতে আচরণটি পর্যবেক্ষণ করা যায়। বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাগারগুলি স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে, শিল্পে, সরকারী বা সামরিক সুবিধাগুলিতে এবং জাহাজ ও মহাকাশযানের উপরেও পাওয়া যায়।

শিক্ষক ও গবেষকদের মতামত নিতে গেলে তাদের থেকে গবেষণাগারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে আসে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডঃ শামীমা বেগম বলেন, “ল্যাবরেটরীর প্রয়োজনীয়তাটা বিশেষভাবে প্রভাবিত করে দেশ এর উন্নয়নে।একদম সূচনা লগ্ন স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করে কলেজ পর্যায় এবং পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ল্যাবরেটরির গুরুত্ব অপরিসীম। উচ্চতর গবেষণা বা শিক্ষার জন্য ল্যাবরেটরি বিশেষ প্রয়োজনীয়তা যেমন রয়েছে তার মধ্যে সমৃদ্ধ ল্যাবরেটরির বিষয়টিকে ছাড় দিলে চলবে না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বা বিশেষ প্রতিষ্ঠান ক্ষেত্রে বললে ল্যাবরেটরি সমৃদ্ধ হলে সেখানে উন্নয়নের ধারা অবশ্যই দ্রুতগতির হবে।যদিও এর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা ব্যয়বহুল তাই কেন্দ্রীয় ভাবে হলেও ল্যাবরেটরী প্রতিষ্ঠা করে গবেষণাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত।”
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুল হক বলেন, “ল্যাবরেটরি হচ্ছে বিজ্ঞানের হৃদপিণ্ড। ল্যাবরেটরি ছাড়া প্রায়োগিক শিক্ষার কথা চিন্তাই করা যায় না। বিশেষ করে বিভাগের শিক্ষার্থীদের কথা বললে ল্যাবরেটরী ছাড়া উচ্চতর শিক্ষা, শিক্ষার প্রায়োগিক বিষয়গুলোকে কল্পনায় ও আনা যায় না। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক ও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরির অপরিহার্যতা রয়েছে। বর্তমান বিশ্বের প্যানডেমিক অবস্থার কথা বিবেচনায় আনলেও ল্যাবরেটরিতে ছাড়া এর থেকে মুক্তির কথা চিন্তা করা যায় না। সকলক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে ল্যাবরেটরীকে বিবেচনা করা যায় হার্টের মতো।তাই ল্যাবরেটরি দিবসকে উপলক্ষ করে হলেও সমৃদ্ধি শিখরে পৌঁছাতে এর গুরুত্বের কথা সকলের সামনে তুলে ধরা উচিত।”
অধ্যাপক ড. সুব্রত চন্দ্র রায়,(রসায়ন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) বলেন,”গবেষণাগারের প্রয়োজনীয়তার কথা বলতে গেলে তা সকল ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের অনন্য জায়গা।রসায়নবিদ হিসেবে বাস্তবিক প্রয়োগ ব্যতীত এর কার্যক্রম পরিচালনা করা কখনোই সম্ভব না। অতএব গবেষণাগারের সম্প্রসারণ ও এর প্রয়োগক্ষেত্রে বাড়াতে পারলে দেশকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।”
মনোবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অশোক কুমার সাহা বলেন,” শিক্ষার প্রায়োগিক দিক গবেষণার ক্ষেত্রে বললে মনোবিজ্ঞান বিভাগের গবেষণাগার বিশেষভাবে প্রয়োজনীয়। বিশ্বে প্রথম মনোবিজ্ঞানে ল্যাবরেটরী বা গবেষণাগারের ব্যবহার জার্মানে শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশ পূর্বে মনোবিজ্ঞান গবেষণার বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেশের বাইরে থেকে কেনা হতো। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানির সকল যন্ত্রপাতি তৈরি করে থাকে এবং ল্যাবে সরবরাহ করে থাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরীও বর্তমানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় উপাদানের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও গবেষণার সুব্যবস্থা নিশ্চিত করতেই কাজ চলছে। ল্যাবরেটরী দিবসকে সামনে রেখে একে আরো সমৃদ্ধ করা যায়।”
ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব মোঃ মহিউদ্দিন বলেন,”তাত্ত্বিক পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার প্রায়োগিক দিককে গুরুত্ব দিলে দেশ তা জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে বহুদূর। তাত্ত্বিক শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে প্রায়োগিক শিক্ষার ক্ষেত্রে ল্যাবরেটরীর অপরিহার্যতা রয়েছে।ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ব্যবহারিক শিক্ষার দিক থেকে ব্যবহৃত হয় এনভাইরনমেন্টাল ল্যাবরেটরী। এছাড়াও রয়েছে সয়েল টেস্ট, ওয়াটার টেস্ট ও রক টেস্ট এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।ল্যাবরেটরী দিবস কে বিবেচনা করে কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়া যাওয়া যায় আর গবেষণার কার্যক্রমকে জোড়দার করা যায়।তাহলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াও সহজ এবং দেশের দ্রুত সম্প্রসারণ সম্ভব হবে।”
 
এভাবেই গবেষক ও শিক্ষকদের মতামত অনুসারে ল্যাবেটরী দিবসকে সামনে রেখে দেশে গবেষণার প্রতি গুরুত্বারোপ করা যায় এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে বহূদূর।