ধারে-ভারে আর্জেন্টিনা যে মানের দল, তাতে এক ঝটকাতেই তাদের নিদেনপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে দেখে থাকেন প্রায় সবাই। যে দেশ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ক্লাবগুলোকে নিয়মিত স্ট্রাইকার সরবরাহ করে থাকে, তাদের নিয়ে এমন প্রত্যাশা স্বাভাবিকই। অথচ, এবারের লাতিন আমেরিকার বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার যে বেহাল অবস্থা হয়েছিল, তা দেখার পর আর্জেন্টিনার ওপর বড় ভরসা করতে পাঁড় সমর্থকদেরই খানিকক্ষণ ভাবতে হবে।
গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ দলটিকে রাশিয়া বিশ্বকাপে জায়গার জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে একেবারে শেষ ম্যাচ পর্যন্ত, দরকার হয়েছে লিওনেল মেসির হ্যাটট্রিকের। এবার মূল পর্বেও দরকার মেসি-ম্যাজিকের। দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা বাছাইপর্বে লাতিন অঞ্চলে হয়েছিল তৃতীয়। বাছাইয়ে তারা খেলেছিলও তিন কোচের অধীনে। টাটা মার্টিনো, এডোয়ার্ডো বাউজার পর চলমান দায়িত্বে জর্জ সাম্পাওলি।
বারবার কোচ বদল হয়েছে মূলত মাঠের দুরবস্থার কারণে। ঘরের মাঠে ইকুয়েডর ও প্যারাগুয়ের কাছে হার, ভেনিজুয়েলার সঙ্গে ড্র, ব্রাজিলে গিয়ে ৩-০ গোলের হার মিলিয়ে জেরবার অবস্থা হয়েছিল আর্জেন্টিনার। চোট আর নিষেধাজ্ঞার কারণে মেসিও সব ম্যাচ খেলতে পারেননি। শেষ পর্যন্ত বাঁচা-মরার ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করে মেসিই দল তুলে নেন বিশ্বকাপে।
রাশিয়াতেও আর্জেন্টিনার সফলতা-ব্যর্থতার অনেকখানি নির্ভর করছে মেসির ওপর। আর মেসির ভালো করা না-করার বেশ খানিকটা নির্ভর করছে অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, লুকাস বিগলিয়াদের ‘ইনিয়েস্তা-জাভি’ হয়ে উঠতে পারার ওপর। পাশাপাশি গোলমুখে সার্জিও আগুয়েরো বা গঞ্জালো হিগুয়েইনদের যে-ই থাকবেন, তার ‘ফিনিশিং’ সফলতাও হবে বড় প্রভাবক।
ম্যারাডোনা-যুগের পর আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ শিরোপার খুব কাছাকাছি গিয়েছিল চার বছর আগের ব্রাজিল বিশ্বকাপে। ফাইনালে সবচেয়ে হতাশ করেছিলেন গোলমুখে থাকা হিগুয়েইন, জার্মানি বিশ্বকাপ জিতে নিয়েছিল শেষ মুহূর্তে দেওয়া মারিও গোয়েৎজের গোলে। এবারের আসরে আর্জেন্টিনার সামনে গ্রুপ পর্বে আছে চমক জাগানো আইসল্যান্ড, পরিচিত প্রতিদ্বন্দ্বী নাইজেরিয়া আর লুকাস মডরিচ-ইভান রাকিটিচদের ক্রোয়েশিয়া।
খুব বাজে না খেললে গ্রুপ টপকে দ্বিতীয় রাউন্ডের পথ একপ্রকার উন্মুক্ত, গ্রুপিং অনুসারে কোয়ার্টার ফাইনালেও। একইভাবে নকআউট পর্বে স্পেন, ব্রাজিল বা জার্মানির সামনে পড়ার পর পথও দেখা যাচ্ছে। তবে চ্যাম্পিয়ন হতে হলে হারাতে হবে তো সামনে পড়া সবাইকেই।
কোচ: হোর্হে সাম্পাওলি
এরই মধ্যে আর্জেন্টিনার ফুটবল ফেডারেশন ঘোষণা দিয়ে রেখেছে, রাশিয়ায় দলের অবস্থা যেমনই হোক, ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপ পর্যন্ত সাম্পাওলির চাকরি থাকছেই। এমন লম্বা সময়ের ‘ছাড়পত্র’ পেয়ে যাওয়া মানে নির্ভার হয়ে কাজ করার সুযোগ। দেখার বিষয়, জাতীয় দল পর্যায়ের কোচিংয়ে সফল হওয়া এ আর্জেন্টাইন নিজের দেশকে কতটা কী এনে দিতে পারেন।
চোটের কারণে খুব অল্প বয়সে কোচিংয়ে ঢুকে যাওয়া সাম্পাওলি গত বিশ্বকাপে ছিলেন চিলির কোচ। ব্রাজিলের কাছে টাইব্রেকারে হেরে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল চিলি। এই সাম্পাওলির অধীনেই পরের বছর আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চিলি জিতেছিল কোপা আমেরিকার শিরোপা।
পরে স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়ার দায়িত্বে ছিলেন এক বছর। টাটা মার্টিনো আর এডোয়ার্ডো বাউজার অধীনে আর্জেন্টিনা যখন বিশ্বকাপ বাছাইয়ে খাবি খাচ্ছিল, তখনই সাম্পাওলির ডাক পড়ে দেশের ফুটবলে। তার অধীনে খেলা ১১ ম্যাচের ৫টিতে জয় এবং ৩টিতে ড্র করেছে আর্জেন্টিনা।
মেসি প্রোফাইল
নাম: লিওনেল মেসি, দেশ: আর্জেন্টিনা, পজিশন: ফরোয়ার্ড, বয়স ৩০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ ২০০৬, ২০১০, ২০১৪।
ক্লাব: বার্সেলোনা (স্পেন)
আন্তর্জাতিক গোল ৬১, আন্তর্জাতিক ম্যাচ ১২৩-ম্যাচ
আর্জেন্টিনা
গ্রুপ-ডি
ফিফা র্যাংকিং :৫
বিশ্বকাপের পথে:
লাতিন আমেরিকায় তৃতীয়
আর্জেন্টিনা ০-২ ইকুয়েডর প্যারাগুয়ে ০-০ আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা ১-১ ব্রাজিল
কলম্বিয়া ০-১ আর্জেন্টিনা চিলি ১-২ আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা ২-০ বলিভিয়া
আর্জেন্টিনা ১-০ উরুগুয়ে ভেনিজুয়েলা ২-২ আর্জেন্টিনা পেরু ২-২ আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনা ০-১ প্যারাগুয়ে ব্রাজিল ৩-০ আর্জেন্টিনা আর্জেন্টিনা ৩-০ কলম্বিয়া
আর্জেন্টিনা ১-০ চিলি বলিভিয়া ২-০ আর্জেন্টিনা উরুগুয়ে ০-০ আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনা ১-১ ভেনিজুয়েলা আর্জেন্টিনা ০-০ পেরু ইকুয়েডর ১-৩ আর্জেন্টিনা
* বাছাইপর্বের সেরা গোলদাতা: লিওনেল মেসি (৭ গোল)
বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ: ১৭ বার
চ্যাম্পিয়ন:১৯৭৮ ও ১৯৮৬ রানার্সআপ: ১৯৩০, ১৯৯০, ২০১৪
কোয়ার্টার ফাইনাল: ১৯৬৬ (৫ম), ১৯৭৪ (৮ম), ১৯৯৮ (৬ষ্ঠ), ২০০৬ (৬ষ্ঠ), ২০১০ (৫ম)
দ্বিতীয় রাউন্ড: ১৯৮২ (১১তম), ১৯৯৪ (১০ম)
প্রথম রাউন্ড: ১৯৩৪ (৯ম), ১৯৫৮ (১৩তম), ১৯৬২ (১০ম), ২০০২ (১৮তম)
বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা
ম্যাচ :৭৭ জয় :৪২ ড্র :১৪ হার :২১
পক্ষে গোল :১৩১ বিপক্ষে গোল :৮৪
বিশ্বকাপে বেশি ম্যাচ :দিয়েগো ম্যারাডোনা (২১)
বিশ্বকাপে বেশি গোল :গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা (১০)