বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় অসহায় শারমিন

লেখক:
প্রকাশ: ৬ years ago

বিএসসি  ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় বাগেরহাট সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) এর পিতৃহারা নিবাসী শারমিন আক্তার (১৭)। এ স্বপ্ন কখনও পূরণ হবেনা  জেনে ভাল কিছু করার আশায় বুক বাধে শারমিন।

বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নে শারমিন বাগেরহাট সরকারি টেক্সটাইল ভকেশনাল ইনস্টিটিউটে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ড্রেস মেকিং বিষয়ে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পায় সে। সরকারি শিশু নিবাসে থাকার পরও নিজের স্বপ্ন পূরনে কঠোর পরিশ্রম তাকে এ সাফল্য দিয়েছে।

এসএসসি-তে এ প্লাস পাওয়ার পর শারমিন বুঝতে পারে, সে আর বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না। কারণ সরকারি শিশু পরিবার থেকে তাকে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) পড়ানো হবে। যেখান থেকে এইসএসসি পাশ করলে শারমিন উচ্চ শিক্ষা নিতে পারবেন সাধারণ যেকোন বিষয়ে। তবে সে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হতে পারবে না।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়নের হাসেমখার হাট গ্রামের মৃত আব্দুল গনি শেখ ও রাজিয়া সুলতানার মেয়ে শারমিন। শারমিনের বাবা মারা যাওয়ার পর মা রাজিয়া সুলতানা শারমিনকে বাগেরহাট সরকারি শিশু পরিবারে (বালিকা) দিয়ে যান। তারপর থেকে এখানে বড় হয় শারমিন।

শনিবার সকালে দশানি শিশু পরিবারে বসে কথা হয় শারমিনের সাথে। শারমিন বলেন, ছোট বেলায় বাবা মারা যায়। ২য় শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ২০০৯ সালে  মা এখানে দিয়ে যায়। এখানে থেকে পড়াশুনা শুরু করি। মানুষের কথা শুনে এবং স্যারদের অনুপ্রেরণায় বিএসসি (টেক্সটাইল) ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন পূরণে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হই বাগেরহাট সরকারি টেক্সটাইল ভকেশনাল ইনস্টিটিউটে । ড্রেস মেকিং বিষয়ে ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পাই। এখন প্রতিষ্ঠান থেকে আমাকে এইসএসসি তে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করাবে না। এইচএসসি (বিজনেস ম্যানেজমেন্ট) পড়ানো হবে। যেখানে পড়লে কখনওই আমার স্বপ্ন পূরণ হবে না।

এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশুনা করে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন শারমিন।

শারমিনের মা রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি যেয়ে বাচ্চাদের কোরআন শিক্ষা দেই। সেখানে যা পাই, তা দিয়ে কোন মতে খেয়ে পড়ে বেচে আছি। আমার মেয়ে এ প্লাস পেয়েছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। কিন্তু মেয়েকে কিভাবে উপরের ক্লাসে ভাল জায়গায় পড়াবো এ নিয়ে চিন্তায় বাচিনা। সরকার যদি মেয়েটার লেখাপড়ার ব্যবস্থা করত তাইলে আর চিন্তা থাকতো না।

বাগেরহাট সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা) এর উপ-তত্ত্বাবধায়ক ফজলে এলাহী বলেন, এখানে ভর্তিকৃত শিশুদেরকে আমরা আন্তরিকভাবে পড়াশুনা করাই। প্রত্যেকটি শিশু উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবা করতে পারে আমরা সে অনুযায়ী কাজ করি। এখানে ভর্তি শিশুদের আমরা ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত লেখা পড়া করাই। এরপরে তাদের বৈধ অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করি। ১৮ বছর পড়ে সরকার যদি এদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেয় তাহলে এতিম শিশুদের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ হতে পারে।