চলমান লকডাউনে বরিশাল নগরীতে আটকে পরেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) অনেক শিক্ষার্থী। মূলত স্বশরীরে সেমিস্টার পরীক্ষা দিতে এসে আটকে পরে তারা।
হল খোলা না থাকার কারণে তাদেরকে থাকতে হচ্ছে মেস ভাড়া করে৷ তবে লকডাউনের সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বাড়ি ফিরে যেতে চান এসব শিক্ষার্থীরা।
এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সার্ভিস দেবার দাবি জানিয়ে আসলেও বিষয়টি নিয়ে তালবাহানার অভিযোগ ওঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে। তাই দ্রুত বাস সার্ভিস চালু করার দাবি নিয়ে আন্দোলনে নামতে চান এসব শিক্ষার্থীদের একাংশ।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ টি বিভাগ গত ২৪ জুন থেকে স্বশরীরে সেমিস্টার পরীক্ষা নেবার রুটিন ঘোষণা করে। এসব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ছাড়াও অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন প্রয়োজনে বরিশালে আসেন।
তবে গত ২৮ জুন থেকে চলমান লকডাউনে দেশব্যাপী সকল ধরণের গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বরিশালে আটকে পরে তারা। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই একই সমস্যায় পর্যবসিত হলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের আটকে পরা শিক্ষার্থীদের নিজ বিভাগীয় ও জেলা শহরে পৌঁছে দিতে বাস সার্ভিস চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। একই ব্যবস্থা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেও আশা করছেন এসব শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃরাজিবুল ইসলাম বলেন, অনলাইনে গত ১৫ই জুন থেকে পরীক্ষা শুরু হয় আমাদের। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্বশরীরে শুরু হয় গত ২৪ শে জুন ।
বাড়িতে নেটওয়ার্ক সমস্যা, বই-পুস্তক না থাকা এবং স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা ও এসাইনমেন্ট জমা দেয়ার জন্য আমরা অনেকে বরিশালে আসি। কিন্তু চলমান লকডাউনে আটকা পরে এখন বেহাল দশা।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এভাবে আটকে পরা শিক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু করেছে৷ কিন্তু আমরা বারবার শিক্ষকদের কাছে লিখিত ও মৌখিকভাবে আমাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরলেও তারা কোন কর্ণপাত করছে না।
এমতাবস্থায় বাস সার্ভিস চালু করে আমাদের বাড়ি পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা যদি প্রশাসন না করে তবে আন্দোলনে নামা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, প্রতিদিনই করোনা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে বরিশালে। দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে শিক্ষকদের কথায় এবং অনেকে নিতান্ত প্রয়োজনে বরিশালে এসে মেস ভাড়া করে থাকছে।
আমরা পরিবার থেকে এভাবে বিচ্ছিন্ন থাকতে গিয়ে যেমন আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি তেমনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবার ঝুঁকিতে পরেছি। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরকে বাড়ি পৌঁছে দেবার মতো সহযোগিতা না করে তবে সেটি হবে চরম অমানবিকতার উদাহরণ।
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী রাজু গাজী বলেন, আমরা বছরে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিবহন পুলে জমা দেই। কিন্তু গত একবছরের বেশি সময় ধরে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় পরিবহন সুবিধা আমরা পাই নি।
বর্তমান সংকটকালীন সময়ে যেহেতু শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কারণে বরিশালে আটকে পরেছে। তাই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে হলেও শিক্ষার্থীদের বাড়িতে ফেরার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত বাস সার্ভিস দেয়া।
এসব নিয়ে আলাপকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড.সুব্রত কুমার দাস জানান, ৭ টি বিভাগের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা স্বশরীরে শুরু করতে রুটিন প্রকাশ করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসব বিভাগের কতজন শিক্ষার্থী লকডাউনে বরিশালে আটকে রয়েছে সে ব্যাপারে আগামী ১৪ই জুলাই পর্যন্ত তথ্য নেয়া হবে।
এরপর শিক্ষার্থীদের তথ্যের আলোকে এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস সার্ভিসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তারা। গত বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি নিয়ে জরুরী সভা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা এমনটাই জানালেন এই শিক্ষক।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়টির পরিবহন পুলের ম্যানেজার ও মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক মোঃ মেহেদি হাসান বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে গতবছর মার্চ মাস বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হবার পর থেকে এ পর্যন্ত পরিবহন ভাড়া বাবদ কোন অর্থ আদায় করা হয়নি।
আটকে পরা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে একটি সভা ইতোমধ্যে হয়েছে। এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত এলে পরবর্তীতে জানিয়ে দেয়া হবে।