বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৫৯.৭২ শতাংশ

লেখক:
প্রকাশ: ১১ মাস আগে

করোনাভাইরাস মহামারির পরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বাংলাদেশে ডলার সঙ্কট দেখা দেয়। আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খুলতে ভোগান্তিতে পড়েন ব্যবসায়ীরা। ডলার সঙ্কট কাটাতে বিলাসী পণ্য আমাদানি নিরুৎসাহিত করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অন্যদিকে, জরুরি পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হয়েছে। ডলার সঙ্কট কাটাতে প্রবাসী আয় বাড়ানোর নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এসবের সুফল মিলছে। আমদানি ব্যয় কমে আসায় বাণিজ্য ঘাটতিও অনেকটা কমেছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে ৫৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। একটি দেশের আমদানি ব্যয় ও রপ্তানি আয়ের পার্থক্যকে বাণিজ্য ঘাটতি বলে। প্রতি তিন মাস পর এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) পণ্য আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৫৭২ কোটি মার্কিন ডলারের। একই সময়ে দেশ থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৯৬ কোটি ডলারের। এতে বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে ৪৭৬ কোটি ডলারের। ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৮২ কোটি ডলার। বছরের ব্যবধানে বাণিজ্যে ঘাটতি কমেছে ৫৯ দশমিক ৭২ শতাংশ।

 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে যখন ডলার সঙ্কট দেখা দেয়, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলাসদ্রব্যসহ বেশকিছু পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করে। এ নিয়ন্ত্রণ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ভূমিকা রেখেছে। শুধু, আমদানি কমলেই হবে না, অন্যান্য সূচকেও নজর দিতে হবে বলে মনে করছেন তারা।

অর্থনীতিবিদ ও পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর রাইজিংবিডিকে বলেছেন, বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লে রিজার্ভে চাপ পড়ে। এ কারণে অকেটা আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো হয়েছে। শুধু আমদানি কমালে হবে না। ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকাউন্ট কম রাখাসহ সব সূচকেই নজর রাখতে হবে।

 

এদিকে, বাণিজ্য ঘাটতি কমায় চলতি হিসাব এখন উদ্বৃত্তে আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত ছিল ৫৮ কোটি ডলার। ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি ছিল ৫৬৭ কোটি ডলার।

লতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে ঋণ করতে হচ্ছে না। তবে, ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। তাই, উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

চলতি অর্থবছরের ৫ মাসে আসা রেমিট্যান্সের পরিমাণ ৮৮১ কোটি ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ৮৭৯ কোটি ডলার। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বেড়েছে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ।

 

তবে, অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) কমেছে। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) দেশ যেখানে এফডিআই পেয়েছিল ২১৬ ডলারের। সেখানে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে তা কমে নেমে এসেছে ১৮৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তুলনায় বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১৪ দশমিক ৫০ শতাংশ।

দেশে বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর অবশিষ্ট অর্থকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত পাঁচ মাস সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও কমেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে নিট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৭৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে আগের বছরের চেয়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে ১০ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ।

 

চলতি অর্থবছরের ৫ মাসে দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগের নেতিবাচক অবস্থা অব্যাহত আছে। আলোচ্য সময়ে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল, তা চেয়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার ফিরিয়ে নিয়েছে তারা। গত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল (ঋণাত্মক) ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার।