কিডনি রোগে প্রতি বছর সহস্রাধিক কিডনি পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাচ্ছে বরিশালে। প্রায় হাজার হাজার মানুষ কোনো না কোনোভাবে কিডনি রোগে ভুগছে। এ ধরনের রোগীর জন্য মাত্র দু’ রকম চিকিৎসা পদ্ধতি রয়েছে। হয় ডায়ালাইসিস অর্থাৎ যন্ত্রের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে কিডনির কাজ করানো, না হয় কিডনি প্রতিস্থাপন। কিন্তু এই দু’ ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতিই অত্যন্ত ব্যয়বহুল।
ডায়ালাইসিসের ব্যয় সরকারিভাবে নির্ধারিত হয় না। কিডনি অকেজো হওয়া একজন রোগীকে সপ্তাহে দুই বা তিনবার পর্যন্ত ডায়ালাইসিস করাতে হয়। সরকারি হাসপাতালগুলোতে একবার ডায়ালাইসিস করাতে আড়াই হাজার টাকা থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই ব্যয় সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয়(শেবাচিম) হাসপাতালের কিডনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.শরীফ শাহ্জামালের সাথে কথা হলে তিনি একেবারেই বিষয়টি এড়িয়ে যান!
শেবাচিম হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা শতাধিক রোগী জানিয়েছেন, রোগীদের পরিবারগুলোকে এই ব্যয় বহন করতে হিমশিম খেতে হয়। শেষপর্যায়ে কিডনি বিকল হওয়ার কারণে যত রোগীর ডায়ালাইসিস প্রয়োজন হয়, তার অধিকাংশ রোগীই এক বা দুইবার ডায়ালাইসিস করার পর আর এটা করাতে পারে না। কিছুসংখ্যক লোক এটার ব্যয়ভার বহন করতে পারে। এছাড়া কিডনি প্রতিস্থাপন করার ব্যয় কিছুটা কম হলেও এর ডোনার পাওয়া যায় না। এখন দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়। তবে সমস্যা হচ্ছে কিডনি পাওয়াটা বেশ কঠিন।
রোগী ও রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, ব্যয়ের বিষয়টা যেমন আছে, তেমনি কিডনি রোগের শেষ অবস্থায় রোগীদের জন্য বরিশালে ডায়ালাইসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের সুবিধা একেবারেই নেই। ২০১৪ সালে চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। যে কারনে ৯৫ ভাগ রোগীই চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন। বরিশালে হাজার হাজার রোগীকে ডায়ালাইসিস সেবা দেয়া এবং প্রতিস্থাপন করা বিগত ৫ বছরেও সম্ভব হয়নি।
কিডনি প্রতিস্থাপন আইন কিছুটা শিথিল করে একজন রোগীর বাবা-মা ভাই-বোনের পাশাপাশি চাচাতো ভাইবোনের কিডনি দেয়ার ব্যবস্থা আনা হয়েছে। একইসাথে হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় থাকা ব্যক্তির কিডনি নেয়ার বিধানও করা হয়েছে।পরিবারের সহযোগিতার অভাবে নারীদের একটা বড় অংশ চিকিৎসক পর্যন্তই যেতে পারেন না। কিন্তু বরিশালে সহস্রাধিক মানুষের অভিযোগ,যেখানে কিডনি রোগীদের চিকিৎসাই নেই,সেখানে আইন শিথিল করে লাভ কী!
শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো.বাকির হোসেন তাদের হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস কর্মকান্ড নিয়ে বলেন,“ সরকার ২টি অত্যাধুনিক মেশিন বরাদ্দ দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই তা বরিশালে আনা হবে। ২০১৪ সালে চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালের কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন পুরোপুরি বিকল হয়ে যায়। বর্তমানে রোগীরা হাসপাতালের বহিঃবিভাগে কিছুটা চিকিৎসা পাচ্ছেন।”
কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিডনির অনেকটা ক্ষতি না হওয়া পর্যন্ত কোন উপসর্গ দেখা দেয় না। তবে এই রোগের অন্যতম কারণগুলো হচ্ছে, নেফ্রাইটিস বা প্রস্রাবের প্রদাহ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা অতিমাত্রায় ব্যথানাশক ঔষধ প্রয়োগ করা এবং খাদ্যাভ্যাস। বংশগত বিষয়ও এই রোগের একটা কারণ হতে পারে।
রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ বরিশাল শহরের বগুরা রোডে ডায়ালাইসিসের ব্যবস্থা আছে এবং সেটা একেবারে একেবারেই গলাকাটা ব্যবসা।
কিডনি রোগের চিকিৎসাব্যয় এবং সুযোগ-সুবিধা কোনোটাই পর্যাপ্ত নয়। বরিশালে শেবাচিম হাসপাতাল ডায়ালাইসিসের কোন ব্যবস্থাই নেই ! এছাড়া সেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভিত্তিতে কেবল মাত্র একটি ডায়ালাইসিস সেন্টার গড়ে উঠেছে। বরিশালের বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় শহরে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এই চিকিৎসার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা আছে। কিন্তু বরিশালে কিডনি রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থা একবোরে নেই বললেই চলে !
শহরের বগুড়া রোডে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কিডনি রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ডায়াবেটিস থাকলে সেটিও একটা পর্যায়ে গিয়ে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে উঠতে পারে। তাই এই প্রতিষ্ঠানে কিডনি রোগের চিকিৎসার জন্য একটু অসুবিধে রয়েছে।
ডায়ালাইসিস সেবা না পাওয়ার কারনে সম্প্রতি অর্ধ শতাধিক রোগী এ প্রতিবেদকের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সরকারী হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা’র অভাবে অনেক রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগে মারা গিয়েছেন । শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অর্থ থাকলেও দুর্নীতী দমন কমিশনের ভয়ে ডায়ালাইসিস সেবা খাতে তা খরচ করতে পারছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাছাড়া শেবাচিম হাসপাতালে ডায়ালাইসিস সেবা চালুর দাবীতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বিভাগীয় স্বস্থ্য পরিচালক,সিভিল সার্জন ও শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালকের কাছেও লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।